কুমিল্লায় চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বামী গ্রেফতার

মোঃ জহিরুল হক বাবু।।
কুমিল্লার আর্দশ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের অলিপুর এলাকায় গৃহবধু ফারজানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘাতক স্বামী মোঃ ইকবালকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত ইকবাল জেলার আদর্শ সদর উপজেলার অলিপুর গ্রামের আঃ হাকিম পুত্র ও হত্যা মামলায় প্রধান আসামী।

মঙ্গলবার সকালে র‌্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর মোহাম্মাদ সাকিব হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ২৪ এপ্রিল আদর্শ সদর উপজেলার কালিরবাজার ইউনিয়নের মস্তফাপুর (কাছার) এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে গৃহবধু মোসাঃ ফারজানা বেগম (২৯) হাত মুখ বাধা অবস্থায় রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধুর পিতা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় ৭ জন বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গৃহবধু ফারজানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামীদের গ্রেফতার করতে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল মাঠে নামে। সোমবার (২৫ এপ্রিল) দিবাাগত রাতে র‌্যাবের একটি অভিযানে মামলার প্রধান আসামী’কে আটক করে র‌্যাব-১১। এছাড়া একইদিন মামলার ২, ৩ ও ৬ নং আসামীকে আটক করে পুলিশের নিকট হস্থান্তর করে র‌্যাব।

মেজর সাকিব আরো জানায়, ঘাতক ইকবার পেশায় একজন অটোচালক, বিভিন্ন গাড়ির বেটারী এবং গাড়ি চুরিসহ বিভিন্ন ধরণের চুরির সহ তার নামে একাধিক মামলাসহ রয়েছে। সে তার স্ত্রী ফারজানাকে নিয়ে কুমিল্লা শহরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

২০১০ সালের একটি চুরির ঘটনার দুইমাস পূর্বে ওয়ারেন্ট জারি হাওয়ার জামিনে বের হওয়ার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৫ হাজার টাকা জমিয়ে স্ত্রী ফারজানার কাছে রেখে যান, এবং গ্রেফতার হলে জামিনে বের করার জন্য স্ত্রীকে বলে যান। কিছুদিন পর ইকবালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে স্বামী জেলে থাকায় ভাড়া বাসায় শিশু সন্তানকে নিয়ে কষ্ট থাকায় ইকবালের রেখে যাওয়া ৫ হাজার টাকা দিয়ে ট্রাক ভাড়া করে ভাড়া বাসার সমস্ত মালামাল নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যায় ফারজানা।

পরে জেলখানাতে গিয়ে ফারজানা তার স্বামী ইকবালকে ভাড়া বাসা ছেড়ে তার বাপের বাড়িতে চলে যাওয়ার ঘটনাটি বলতেই ইকবাল স্ত্রী ফারজানার উপর চড়াও হয়, এবং ইকবালকে দ্রæত জামিনের ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দিয়ে চলে আসে।

ইকবালের স্ত্রী তাকে জামিনে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও জামিনে বের করার ব্যাপারে কোন তৎপরতা না করায় স্ত্রীর উপর আরো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

পরবর্তীতে চলিত মাসের প্রথম সপ্তাহে জেল থেকে জামিন পেয়ে তার বোন কলির কাছে যায় এবং বোনের কাছে রেখে যাওয়া মোবাইল ফোন নিয়ে শশুর বাড়িতে যায়। শশুর বাড়িতে যাওয়ার পরে স্ত্রী কেন তাকে জামিন না করিয়ে বাসার মালামাল নিয়ে শশুর বাড়িতে চলে আসছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

ফারজানা স্পষ্ট জানায়, জুয়াড়ী ও চোরের সাথে সংসার করবেনা মর্মে তার্কে ডিবোর্স দেয়ার কথা বলে। এই নিয়ে ইকবালের সাথে কথাকাটাকাটি ও বাকবিতন্ডা শুরু হয়। ঝগড়ার জেরধরে ইকবাল শশুরবাড়ি থেকে চলে আসে। পরে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে ইকবাল। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে ফারজানার কাছে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায় এবং তাকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে তার প্রতি আকৃষ্ট করতে থাকে।

২৩ এপ্রিল সে তার স্ত্রী ফারজানাকে ফোন করে বলে সে জেলে যাওয়ার পূর্বে তার বোনের কলির কাছে তিন হাজার টাকা রেখে গিয়েছিলো যা কলি তাকে দিবেনা কেননা ইকবালকে টাকা দিলে সে জুয়া খেলে টাকাগুলে নষ্ট করে ফেলবে বিধায় এই টাকা তার স্ত্রী ফারজানার নিকট দিতে চায়।

ইকবাল ঐ টাকা নিয়ে তার একমাত্র শিশু সন্তান ফারহানা আক্তার ইভা(৭)’কে ঈদের শপিং করে দিবে বল্লে ফারজানা আসতে রাজি হয়। পরবর্তীতে ইকবাল ফারজানাকে আনতে শশুর বাড়ি আলেখারচরে যায় এবং ফারজানাকে নিয়ে শশুর বাড়ি থেকে আনার সময় নিয়মিত যাতায়েতের রাস্তা ব্যবহার না করে ইকবাল পূর্ব পরিকল্পিত জনশূন্য অপর রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসতে থাকে।

পরিকল্পনা মোতাবেক ইকবালের পূর্ব পরিকাল্পিত স্থান যেখানে ফারজানাকে হত্যা করার জন্য পূর্বেই ইকবাল ইট রেখে গিয়েছিলো সেই স্থানে আসা মাত্রই রাত ২টায় ইকবাল তাকে পিছন থেকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরদিন ২৪ এপ্রিল বিষয়টি জানাযানি হলে ইকবাল রাজধানী ঢাকায় আত্মগাপেনে চলে যায়।

পরে র‌্যাবের একটি দল ঢাকা সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ইকবালকে গ্রেফতার করে। আটককৃত ইকবালকে বিকেলে কোতয়ালী থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page