নেকবর হোসেন।।
কুমিল্লা নামে বিভাগ দিতে চান না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিভাগের নাম নিয়ে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। দুইটা বিভাগ বানাবো দুইটা নদীর নামে। একটার নাম হবে পদ্মা এবং আরেকটার নাম মেঘনা। এই দুই নামে দুইটা বিভাগ করতে চাই।’
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) কুমিল্লা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
এ সময় কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আপা আমি একটু বলতে চাই, কুমিল্লার নামে বিভাগ করেন।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কু নাম দেবো না আমি। কুমিল্লা দেবো না। তখন আ ক ম বাহার বলেন, ‘না আপা, কুমিল্লা নামে–সারা কুমিল্লার মানুষ…।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কুমিল্লা নামে দেবো না। কারণ, এই নামের সঙ্গে মোশতাকের নাম জড়িত। সেই জন্য আমি দেবো না।
বাহার বলেন, ‘আপা, মোশতাকের কুমিল্লা না, কুমিল্লা…’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো বললাম দেবো না। তোমরা যদি রাজি থাকো…। ওই কুমিল্লা নাম নিলেই মোশতাকের কথা মনে ওঠে। বাহার বলেন, কোনও কুলাঙ্গারের নামে দেশের পরিচয় হয় না আপা। বাংলাদেশের পরিচয় বঙ্গবন্ধুর ওপর। মোনায়েম খানের ওপর না। বঙ্গবন্ধুকেই চেনে সারা বিশ্ব। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশ। কোনও কুলাঙ্গারের নামে না। পরে বাহার কথা বলতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাকে থামিয়ে দেন। বলেন, ‘তুমি যদি কুমিল্লা বলো, তাহলে শুধু কুমিল্লা হবে কেন? চাঁদপুর বলে আমার নাম হবে। নোয়াখালী বলে আমার নাম। কারণ, নোয়াখালী সব থেকে পুরনো একটা…। কুমিল্লা তো ত্রিপুরার ভগ্নাংশ।’
এ সময় বাহার বলেন, এতগুলো বিভাগ দিয়েছেন, কোথাও সমস্যা হয়নি। কুমিল্লায় এসে সমস্যা কেন হবে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ফরিদপুর বিভাগ করবো পদ্মার নামে। কুমিল্লা বিভাগ হবে মেঘনার নামে। কারণ, “পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা।” এই স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, বিজয়ী হয়েছে।’
এ সময় বাহার আবারও বলেন, ‘আমাদের কুমিল্লার সব মানুষ, এই নামেই চায়। ৫০ লাখ মানুষ।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন,এই নামে অন্য জেলাগুলো তো আসতে চায় না। আমরা চেষ্টা করেছি তো। নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসবে না।’
এ সময় বাহার প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, সিলেটের বিষয়ে কী সবার কাছে জিজ্ঞেস করে দিয়েছেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ জিজ্ঞেস করছি।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে তুমি সবার কাছ থেকে লিখিয়ে আনো।’
জবাবে বাহার বলেন, ‘আপনি দিলেই মানবে। আপনি মুখ দিয়ে বললে সব হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো দিচ্ছি, পদ্মা, মেঘনা, যমুনার নাম দিয়ে। তুমি ছাত্রজীবনে গাও নাই, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা—তোমার আমার ঠিকানা। মেঘনা পার হয়ে যেতে হয় কুমিল্লায়। আর পদ্মা পার হয়ে যাবো ফরিদপুর।’
এ সময় সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমরা আপা হিসেবে চাই। বঙ্গবন্ধুর কন্যা ফেরত দেবে না বাহারকে।’
জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘পদ্মা সেতু পার হয়ে পদ্মায় যাবো। তোমার মেঘনা, গোমতি ও তিতাস সেতু করে দিয়েছি। সবই তো করে দিয়েছি। কোনটা বাকি রেখেছি। আমি তো বললাম অন্য জেলা থাকবে না।’
বাহার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুরও কুমিল্লার অধীনেই ছিল।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চায় তাদের নামে হোক, ফেনীও তাদের নামে চায়। চাঁদপুর নামটা তো আরও সুন্দর। কুমিল্লার আসল নাম ছিল ত্রিপুরা। এটা ভুলে যেও না। এখনও পুরনো কাগজে ত্রিপুরা লেখা আছে। আমার প্রস্তাব রাখলাম, যদি পছন্দ হয় ভালো। না হলে হবে না। আমি কী করবো। আমাদের দুটি বড় নদী। এই নামগুলো সম্মান দিয়ে রাখতে চায়। যে স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই নাম রাখতে চায়।’
প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাব গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে হলে তিনটা ফেরি পার হতে হতো। কত লম্বা সময় লাগতো। এখন তো ঢাকা-কুমিল্লা মিশে যাচ্ছে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page