কুবি প্রতিনিধি।।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় জড়িত ও সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জড়িতদের শনাক্তে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও মিটিংয়েই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে তদন্ত কমিটির কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলাই- আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর আওয়ামীপন্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কিছু শিক্ষকদের মদদে, শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এই হামলার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করতে ২০২৫ সালের গত ২৮ এপ্রিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটি গঠনের ৫ মাস পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩ তম সিন্ডিকেট সভায় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অন্য দুই শিক্ষকরা হলেন আইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মু. আলী মুর্শেদ কাজেম এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান।
তদন্ত কমিটি জানায়, কমিটি গঠন করা হলেও নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। তবে কমিটি গঠনের পর তিনটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটি তদন্ত কাজে সহোযোগিতায় তথ্য চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হলেও দপ্তর বা বিভাগ থেকে কোনো তথ্য পায়নি তদন্ত কমিটি।
এদিকে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হলেও কোনো বাজেট দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির একজন সদস্যা। ফলে বাজেটের অভাবে আটকে আছে তদন্তের কাজ। যদিও ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি লজিস্টিক সাপোর্ট ও অন্যান্য খরচের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট একটি বাজেট চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো বাজেট পাশ করা হয়নি।
তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতায় ক্ষোভ জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে জড়িতদের শাস্তি দিয়েছে, সেখানে কুবি প্রশাসন এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হামলায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা নিয়মিত ক্লাস–পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে, এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীরাও বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক নাহিয়ান বলেন, “গত বছরের ১৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ আমাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। পরে ১৮ ও ২৯ জুলাই হামলা চালায়। কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। অথচ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো চাকরিতে পুনর্বহাল করেছে। যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে, তাদের শাস্তি না দিয়ে পুরস্কৃত করা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী হান্নান রহিম বলেন, “অনেক শিক্ষক ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করে হামলায় সহযোগিতা করেছেন। তৎকালীন বঙ্গবন্ধু পরিষদেরও একাধিক শিক্ষক এতে জড়িত ছিলেন। এক বছর পার হলেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। হামলায় জড়িতদের আমাদের সঙ্গে ক্লাসে বসা বা পড়ানো মেনে নেওয়া যায় না।”
এদিকে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হলেও কোনো বাজেট দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির একজন সদস্য। ফলে বাজেটের অভাবে আটকে আছে তদন্তের কাজ। যদিও ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি লজিস্টিক সাপোর্ট ও অন্যান্য খরচের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট একটি বাজেট চেয়ে চিঠি দিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো বাজেট পাশ করা হয়নি।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় সংশ্লিষ্টতা ও অভিযুক্তদের নামে ব্যক্তিগত মামলা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান কিছু শিক্ষার্থীরা। সেখানে আওয়ামী নেতাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈন, সাবেক প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, ছাত্রলীগের নেতাদের নাম রয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ও আইন বিভাগের প্রধান মু. আলী মুর্শেদ কাজেম বলেন, "ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কিছু নাম আমরা পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে তা বলতে পারছি না। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সাথে ইন্টারভিউ ও তথ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও এসব কাজের জন্য একটা বাজেট দরকার। বাজেটের জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। বাজেট পেলে কাজের অগ্রগতি হবে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, "তদন্তের কাজ চলমান। আমরা ইতোমধ্যে তিনটি সভা করেছি। সামনের সপ্তাহে একটি সভা আছে। আমরা বিভাগ ও দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। তবে কারো সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমরা আবারো চিঠি দিবো।"
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, আমরা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে তদন্ত কমিটি করেছি। আমি আশা করি দ্রুত কাজটি শেষ হবে।
বাজেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা মৌখিকভবে আমাকে জানিয়েছে। তাদের বলেছি ফাইলনোট দিলেই আপনারা অর্থ পাবেন।