
স্টাফ রিপোর্টার।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে চুরির অপবাদ দিয়ে এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের ৪৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রবিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
এর আগে গতকাল শনিবার উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের উত্তর যাত্রাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার নুরুল আলম (২২) একই গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, নুরুল আলমকে একটি আমগাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে স্থানীয় মো. স্বপন মিয়া ও সোহেল মিয়া নামের দুই ব্যক্তি লাঠি ও স্টিলের পাইপ দিয়ে পিটিয়ে যাচ্ছে। সে বাঁচার আকুতি জানালেও নির্যাতন থামেনি। আশপাশে লোকজন দাঁড়িয়ে নির্যাতনের দৃশ্য দেখলেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমের পরিবার ও মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে ইসমাইল মিয়া ও শফিক মিয়া ওরফে বাচ্চু মিয়ার পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি-সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল, যা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। শনিবার ভোরে নুরুল আলম বাড়ির পাশের খালে মাছ ধরতে গেলে বাচ্চু মিয়ার আত্মীয় স্বপন ও সোহেল মিয়া জোর করে তাকে ধরে নিয়ে আবুল হাসেম নামের অভিযুক্তের বাড়ির আমগাছের সঙ্গে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালায়।
ভুক্তভোগী নুরুল আলম বলেন, ‘রাত ৩টার সময় মাছ ধরতে গেলে তারা আমাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর গাছের সঙ্গে বেঁধে বিকেল পর্যন্ত মারধর করে।
কতবার বাপ ডেকেছি তাও ছাড়েনি। এমনকি একফোঁটা পানিও দেয়নি।’
ভুক্তভোগীর বাবা আবুল হাসেম বলেন, “আমার ছেলের উপর যারা এই নির্যাতন করেছে, তারা আমার সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধে জড়িত। ভোরবেলায় তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠি, লোহার পাইপ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে মারে। পরে মসজিদের মাইকে ‘চোর ধরেছি’ বলে ঘোষণা দেয়।
লোকজন জড়ো হলে তারা তাকে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেই।”
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সাইদ আল মুনসুর ইনাম বলেন, ‘ভুক্তভোগী নুরুলকে আনার পর দেখা যায়, তার হাত ও পায়ের তালুসহ সারা শরীরে গুরুতর জখম রয়েছে। পুরো শরীর রক্তাক্ত। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে কুমিল্লা মেডিক্যালে রেফার করা হয়।’
ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বপন ও সোহেল আত্মগোপনে রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হিলাল উদ্দিন বলেন, ‘ভাইরাল ভিডিওটি দেখার পরপরই আমরা অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আবুল হাসেমকে আটক করেছি। অন্য দুই অভিযুক্তকেও আটকের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চুরির অপবাদ দিয়ে ওই যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। আহত যুবক বর্তমানে কুমিল্লা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হবে। নির্যাতনের শিকার নুরুল আলমের পরিবারকে আইনি সকল সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
মোবাইল: +8801740652911
ইমেল: journalistbabo@gmail.com
www.comillanews.com