
স্টাফ রিপোর্টার।।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে কুমিল্লার লাকসামের এক ছাত্রলীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের খবর দিয়েছে পুলিশ।
আল আমিন হোসেন রায়হান (৩২) নামের ওই যুবক নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের লাকসাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি লাকসাম উপজেলার মুদাফ্ফরগঞ্জ বাজারসংলগ্ন নগরীপাড়া গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে।
আল আমিন হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করছেন। তাঁর স্বজনেরাও একই সন্দেহ করছেন। তবে পুলিশ একে আত্মহত্যার ঘটনা হিসেবেই দেখছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বসুন্ধরার ই-ব্লকের ১৮ নম্বর সড়কের একটি বাড়ি থেকে আল আমিনের লাশ উদ্ধার করা হয় বলে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান জানিয়েছেন।
ওই বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া থাকতেন আল আমিন। একটি কক্ষে একাই থাকতেন তিনি। পাশের কক্ষে থাকতেন তাঁর এক চাচাতো ভাই। গতকাল দীর্ঘ সময় কক্ষের দরজা ভেতর থেকে আটকা দেখে বাড়ির দারোয়ানের সন্দেহ হয়। তখন তিনি পুলিশে খবর দেন। এরপর চাচাতো ভাইয়ের কাছে থাকা অতিরিক্ত চাবি দিয়ে দরজা খুলে আল আমিনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশ সদস্যরা গিয়ে জানালার সঙ্গে গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় আল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করেন। কক্ষের ভেতর থেকে একটি আত্মহত্যার নোটও উদ্ধার করা হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা আল আমিন হোসেনের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করছেন। তাঁরা দাবি করছেন, আল আমিন আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মরদেহ হাঁটুভাঙা অবস্থায় মেঝের সঙ্গে লাগানো ছিল।
আল-আমিনের খালাতো ভাই সাকিব হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। ছবিতে দেখা গেছে, জানালায় লাশটি যে উচ্চতায় ঝুলছিল, সেটি ছিল হাঁটুভাঙা অবস্থায়। মানে তার হাঁটু ছিল মেঝেতে। আমাদের ধারণা, এখানে অন্য কিছু আছে। সেটা না হলে হাঁটু পর্যন্ত ফ্লোরে রেখে মানুষ আত্মহত্যা করে কীভাবে? আমরা পুরো ঘটনা ভালোভাবে তদন্তের দাবি জানাই।’
সাকিব হোসেন আরও বলেন, ‘রায়হান (আল আমিন) ভাই অনেক শক্ত মনের মানুষ। তিনি এভাবে কখনোই আত্মহত্যা করতে পারেন না। এমন ঘটনায় তাঁর মা–বাবাসহ স্বজনেরা ভেঙে পড়েছেন।’
এ বিষয়ে ভাটারা থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান বলেন, ‘যে অবস্থায় মরদেহ পাওয়া গেছে, সে অবস্থায় আত্মহত্যা করা অসম্ভবের কিছু না। আত্মহত্যার পর মরদেহে যে যে লক্ষণ থাকে, সবই এই মরদেহে দেখা গেছে। আমরা একটি সুইসাইড নোটও পেয়েছি, যদিও সেখানে মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি। প্রাথমিক আলামত থেকে বোঝা যাচ্ছে, আল আমিন আত্মহত্যা করেছেন।’
ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ভাটারা থানায়। ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ বেরিয়ে আসবে বলে পুলিশ আশা করছে।
আল আমিনের আত্মহত্যার কারণ কী হতে পারে-জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আল আমিনের পারিবারিক জীবনে বেশ কিছু সমস্যা ছিল। তিনি গত আগস্টে বিয়ে করেন, কিছুদিন পরই বিচ্ছেদ হয়। ব্যক্তিগত আরও কিছু সমস্যা ছিল। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। এসব কারণে হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে মনে হচ্ছে।’
আল আমিনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা আছে কি না, জানতে লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি। ওই ব্যক্তির নামে মামলার কোনো তথ্য পাইনি। এ কারণে প্রাথমিকভাবে বলা যাচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।’
মোবাইল: +8801740652911
ইমেল: journalistbabo@gmail.com
www.comillanews.com