কুমিল্লা নিউজ ডেস্ক।।
কুমিল্লা নগরীর প্রধান কয়েকটি সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলছে ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের তার। যে যার মতো বৈদ্যুতিক খুঁটিতে এসব তার ঝুলিয়ে তৈরি করছে জঞ্জাল। এতে নগরীর সৌন্দর্যহানিসহ রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এ ছাড়া সম্প্রতি নগরীতে বৈদ্যুতিক খুঁটি পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ বিভাগের লোকেরা এসব তারের জঞ্জাল কেটে সড়কের ওপর ফেলে রাখছেন। এতে নগরীতে যানজট ও চলাচলে দুর্ভোগ বাড়ছে।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর ব্যস্ততম সড়ক কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, রানীরবাজার সড়ক, জিলা স্কুল সড়ক, ফৌজদারিসহ আশপাশের কয়েকটি সড়কে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে ইন্টারনেট ও ডিশের কাটা তার, কোথাও কোথাও অর্ধকাটা তার ঝুলছে। এতে যানবাহন ও পথচারী এসব তারে জড়িয়ে বিপদগ্রস্ত হচ্ছে।
নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রাজিব বলেন, ‘গত শনিবার রাতে রিকশায় করে কান্দিরপাড় থেকে চকবাজার যাওয়ার পথে মনোহরপুর এলাকায় সড়কের ওপর ঝুলে থাকা তারে আমার মুখে আঘাত লাগে। অন্ধকার হওয়ায় তার দেখা যায়নি। একটি চলমান সড়কে এভাবে তার ঝুলে থাকার বিষয়টি অপ্রত্যাশিত।’
নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেনের অভিযোগ, নগরীর ব্যস্ত সড়কের ওপর এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে তার প্রায়ই ঝুলে থাকে। এ তারে লেগে একদিন গলার অনেকাংশে কেটে গেছে তার। কোনটা বিদ্যুৎ, কোনটা ডিশ বা নেটের তার— বোঝা যায় না। কখন কী হয়, এই ভয়ে থাকেন মোবারক হোসেন।
কুমিল্লা জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাত্তার খান শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান জানান, ‘গতকাল সকালে এসে দেখি, পুরো শপিং কমপ্লেক্সের সামনে এসব কাটা তার ঝুলছে এবং কিছু তার নিচে পড়ে আছে। এতে ক্রেতা ও জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় নিজ উদ্যোগে অপসারণ করেছি।’
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, একটি নগরে এমন বিশৃঙ্খলা মানা যায় না। সড়কে তার ঝুলবে, নিচে পড়ে থাকবে, তা তো হতে পারে না। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। আর খুঁটিতে খুঁটিতে তারের জঞ্জাল, এটিকেও একটি শৃঙ্খলায় নিয়ে আসা দরকার। বিদ্যুৎ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, কেব্ল অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস—সবাই মিলে একটি যৌথ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।
কুমিল্লা জেলা কেব্ল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম রেজাউনুর রহমান রুমি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ ও সিটি করপোরেশন আমাদের না জানিয়ে তার কেটে ফেলে রাখে। এতে গ্রাহকেরা ভোগান্তিতে পড়েন। এ-সংক্রান্ত কোনো উন্নয়নকাজ বা বিদ্যুতের খুঁটি পরিবর্তন করার আগে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন। তা ছাড়া আমাদের কেব্ল অপারেটরদের ৮ থেকে ১০টির বাইরে ন্যাশনাল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের আরও ৫০ থেকে ৬০টি সংযোগের তার রয়েছে। তারা মাটির নিচ দিয়ে তার জেলায় প্রবেশ করালেও নগরীতে বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহার করছে। তাই শুধু আমাদের না বলে সবার সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ আহমেদ জানান, কুমিল্লাসহ পাঁচটি জেলায় বিদ্যুতের নতুন খুঁটি লাগানোর কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে কুমিল্লা নগরীর খুঁটিগুলো পরিবর্তন করা হচ্ছে। আর যে এলাকার এসব খুঁটি পরিবর্তন করা হবে, তার আগে ওই অঞ্চলের পুরোনো খুঁটির সঙ্গে লাগানো ডিশ লাইন, ইন্টারনেট লাইন, টিঅ্যান্ডটি লাইন অপারেটর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। যাতে করে তারা আগে থেকে তাদের সংযোগ সরিয়ে নেয়। কিন্তু তারা কর্ণপাত করে না। পরে আমাদের লোক কাজ করতে গেলে সব তার কেটে ফেলে কাজ করে চলে আসে।’
সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ইন্টারনেট ও ডিশ ব্যবসায়ীরা কিছুদিন পরপর কাজ করে সড়কের ওপর তার ফেলে চলে যায়। এতে সড়কে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। তারা গ্রাহক থেকে প্রতি মাসে বিল নেয়, আর সিটি করপোরেশন তাদের শ্রমিক হয়ে কাজ করবে, তা তো হতে পারে না। এটা তো আমাদের দায়িত্ব না। তারপরও আমরা সড়ক থেকে প্রতিনিয়ত এসব অপসারণ করছি। গত মাসে নগরীর সড়ক থেকে প্রায় ৩০ ট্রাক তার অপসারণ করা হয়েছে।’
মোবাইল: +8801740652911
ইমেল: journalistbabo@gmail.com
www.comillanews.com