মনির হোসাইন।।
কুমিল্লার মুরাদনগরে সড়কে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার প্রায় এক মাস পর সিএনজি চালককে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী ও পরিবহন শ্রমিক।
শনিবার সকালে উপজেলা সদর ইউনিয়নের নাগেরকান্দি তিতাস চৌরাস্তায় এই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এতে মামলার সাক্ষী, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, সিএনজি ও অটোরিকশা চালকসহ এলাকার দুইশতাধিক মানুষ অংশগ্রহন করেন। মানববন্ধন শেষে নাগেরকান্দি তিতাস মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে তিতাস ব্রিজে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে সিএনজি চালক মাইনুদ্দিনের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে দাবীতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষোভকারীরা।
মনববন্ধনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফরিদ মিয়া বলেন, ঘটনার সময় মাইনুদ্দিনের সিএনজিতে করে কাশিপুর থেকে তিতাস আসছিলাম। রঘুনাথপুর এলাকা আসার পর পিছনের দিকে একটি শব্দ শুনলে তখন সিএনজি থামিয়ে দুজন একসাথে গিয়ে দেখি রাস্তার সাইডে হোন্ডার সাথে একজন ও আরেকজন একটু দুরে রাস্তার মধ্যে পড়ে আছে। তখন সবাই দেখেছে তারা নিজেরাই হোন্ডা এক্সিডেন্ট করছে। পরে শুনি আমার ভাতিজা মোস্তাফিজ একমাস পর মাইনুদ্দিনের নামে নাকি মামলা দিছে। এইডা একটা মিথ্যা মামলা। আমি এই মামলা প্রত্যাহার চাই।
মামলার ২নং সাক্ষী শাহাজাল বলেন, এক্সিডেন্টের ঘটনা শোনার পর আমি ২-৩জন সাথে নিয়ে গ্যারেজে মাইনুদ্দিনের সিএনজিকে দেখতে যাই। গিয়ে সিএনজিতে দূর্ঘটনার কোন প্রকার চিহ্ন দেখতে পাইনি। তবুও মোস্তাফিজ মিয়া আমাকে দুই নাম্বার সাক্ষী করেছেন। আমি আসলে এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। এই ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মামলার ৯নং সাক্ষী শামীম মিয়া বলেন, আমি ঐদিন কাঠের কাজ করে বাড়ি যাওয়ার সময় তিতাসে এক্সিডেন্টের কথা শুনি। তারপর আর এ ব্যাপারে আমি আর কিছু জানি না, তবুও আমাকে মামলার ৯নং সাক্ষী করেছে। আমি মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই।
মানব বন্ধনে অন্যান্য বক্তারা আরো বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে দরিদ্র সিএনজি চালক মাইনউদ্দিনকে ১ মাস ২০ দিন জেল খাটিয়েছে। তার সিএজিটিও থানায় জব্দ করা হয়েছিল। তখন তার স্ত্রী-সন্তানরা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছে। আমরা মাইনউদ্দিনের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসনের নিকট জোড় দাবি জানাচ্ছি।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর বিকালে উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে শফিউল্লাহ ও সাতমোড়া গ্রামের আল আমিন মিয়ার ছেলে সোহাগ মোটরসাইকেল নিয়ে মুরাদনগর উপজেলার নাগেরকান্দি তিতাস এলাকা থেকে পার্শ্ববর্তী হোমনা উপজেলার কাশিপুর মাঠে খেলা দেখতে যাওয়ার সময় রঘুনাথপুর মাছের আড়ৎয়ের সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে।
এ সময় ঘটনাস্থলেই শফিউল্লাহ'র ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহাগের মৃত্যু হয়। সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় একমাস পর নিহত শফিউল্লাহ’র বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একই উপজেলার আলীরচর গ্রামের সিএনজি চালক মাইন উদ্দিন কে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সিএনজি চালক মাইনউদ্দিন ১ মাস ২০ দিন কারাগারে ছিলেন।
মামলার একবছর পর ময়নাতদন্তের জন্য আদালত দুটি লাশ উঠানোর নির্দেশ দিলে গত ২১শে সেপ্টেম্বর রবিবার শফিউল্লাহ'র লাশ উত্তোলন করা হলেও সোহাগের লাশ উত্তোলন করতে গেলে তার পরিবার বাধাঁ দেন। মৃত্যুর ব্যাপারে সোহাগের পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় তার লাশ উত্তোলন করা হয়নি।