কুমিল্লায় ভিডিও কলে স্বামীর বাড়িতে প্রেমিকা ও প্রবাসে প্রেমিকের আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার।।
একই কবরস্থানে দাফন চেয়ে চিরকুট লিখে ভিডিও কলে স্বামীর বাড়িতে প্রেমিকা ও প্রবাসে প্রেমিক ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বেতুয়ায় এই ঘটনা ঘটে। স্বামীর বাড়ি থেকে নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত গৃহবধূ খাদিজা আক্তার ঊর্মি (১৬) কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানাধীন মাটিয়ারা গ্রামের জামাল হোসেনের মেয়ে।

সে চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ১৪ অক্টোবর লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বেতুয়া (কৃষ্ণপুর) গ্রামের রংমিস্ত্রি আরিফুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এদিকে নিহত ওমান প্রবাসী প্রেমিক সাফায়েত হোসেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।

ঊর্মি চিরকুটে লিখেছে, ‘চাইছিলাম দুজনে একসঙ্গে বেঁচে থাকতে। বাঁচতে দিল না। এটা সত্যি, ও আমার প্রথম সাথি। ওরে আমি বিয়ে করছি। কিন্তু ওর জায়গায় আমি অন্য কাউরে দিতে পারি নাই, পারবও না। তোমরা সুখে থেকো। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওর ফ্যামিলিকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম। ওরে আমার সঙ্গে নিয়ে গেলাম।

আপনাদের কাছে একটা শেষ ইচ্ছা থাকবে। বাবা-মা ও ভাই-বোনের কাছে একটা আবদার, দুনিয়াতে যেহেতু একসঙ্গে থাকতে দেও নাই, আমাদের দাফনটা যেন একসঙ্গে হয়। এক দিন আগে-পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন দাফন করে। সে চাওয়াটা যেন পূরণ করেন আপনারা।’

প্রবাসী সাফায়াত মৃত্যুর আগে চিরকুটে লিখেছেন, ‘শেষ ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব আপনাদের। আমার মৃত্যুর কারণ একমাত্র ওর ফ্যামিলি। আমার মোবাইলে সব রেকর্ড করা আছে। সব কিছু ভিডিও করা আছে। আমার মৃত্যুর জন্য কে কে দায়ী সব কিছু আমার মোবাইলে রেকর্ড করা আছে আর ভিডিও করা আছে। আমার মোবাইল তার প্রমাণ। আমার মোবাইল চেক করলে সব পাবেন। রেকর্ড অপশনে আর গ্যালারিতে সব আছে। গ্যালারিতে আমার আটটা ভিডিও আছে। সবগুলো দেখবেন। লক খুলে রেকর্ড অপশনে ঢুকবেন, ইমোতে দুইটা আর বাকিগুলো গ্যালারিতে পাবেন। তার দেওয়া চিঠি আছে আরিফ নামের আইডিতে। আমাদের মৃত্যুর কারণ তারা। কোনো দিন ক্ষমা করব না।’

ঊর্মির মা নুরুন্নাহার জানান, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে সাফায়াত নামের একজন প্রবাসী ছেলের সম্পর্ক ছিল। ১৪ অক্টোবর সম্মতি নিয়েই মেয়েকে বিয়ে দিই। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে হাসি-খুশিতেই ছিল। শনিবার রাতে হঠাৎ শুনি ঊর্মি ও তার প্রেমিক সাফায়াত ভিডিও কলে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। প্রবাসী ছেলেটাই আমার মেয়ের মাথা খারাপ করে দিয়েছে।

সাফায়াতের বাবা আবদুল খালেক বলেন, ‘এক বছর আগে ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ছেলে হঠাৎ বিদেশে কর্মস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। খবর নিয়ে শুনলাম ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে আমার ছেলের সঙ্গে । ঊর্মি নামের এক মেয়ের পরিচয় হয়েছিল। হঠাৎ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে গেছে। শনিবার রাতে সেই মেয়ে আমার ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলে চিরকুট লিখে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি।’

বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িত নিকাহ রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দাবি জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছেলেসহ দুটি জীবনের আলো নিভে গেছে। তিনটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর জন্য মেয়ের বাল্যবিয়ে দায়ী।’

আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে মামলা করবেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের চিরকুট হাতে পেয়েছি। তা ছাড়া মৃত্যুর আগে আমার ছেলের থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেয়ের মা।’

লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, ‘বিয়ের ১৩তম দিনে নববধূ প্রবাসী প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। শুনেছি, প্রবাসী প্রেমিকও একইভাবে আত্মহত্যা করেছে। শনিবার রাত অনুমান ১১টায় নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের পাশে হাতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যার আগে মেয়েটি তার মা-বাবার উদ্দেশে এটি লিখেছিল। এই ঘটনায় নববধূর ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।’

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page