জহিরুল হক বাবু
কুমিল্লার বিশিষ্ট আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ হত্যা মামলায় পুলিশ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, তার মেয়ে ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার সূচনা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর এবং স্থানীয় বিএনপি নেতা মোঃ ইসতিয়াক সরকার বিপুসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী নেতাদের নাম রয়েছে।
রবিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহিনুল ইসলাম এ চার্জশিট দাখিল করেন।
ঘটনার পটভূমি
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কুমিল্লা শহরের মোগলটুলিতে বিজয় মিছিল চলাকালে গুলিতে আহত হন আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। পরে ১৬ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় একই বছরের ১৭ আগস্ট বাগিচাগাঁওয়ের বাসিন্দা আইনজীবী মোঃ মোস্তফা জামান জসিম বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রথমে মামলার এজাহারে বাহাউদ্দিন বাহার বা তার মেয়ের নাম ছিল না। তবে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি ও তদন্তের মাধ্যমে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়।
অভিযোগ ও প্রমাণ
চার্জশিটে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তাহসীন বাহার সূচনার বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা, হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ হিসেবে জমা দেওয়া হয়েছে—
নিহত আজাদের শরীরে প্রাপ্ত ১৪টি পিলেট
ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি
স্থানীয় দুটি দৈনিকের সংবাদপত্রের কাটিং
প্রধান আসামি সৈয়দ রায়হানের লাইসেন্সকৃত শটগান
তার ৫০ রাউন্ড গুলির মধ্যে ১৮ রাউন্ড অনুপস্থিত থাকার প্রমাণপত্র
অভিযুক্তদের মোবাইল ফোনের তথ্য
মোট ৪৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং তাদের সমন ইস্যুর আবেদন করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত ৩৫ জনের নাম
সৈয়দ রায়হান আহম্মেদ – মোগলটুলির ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, সৈয়দ আবির হোসেন আহম্মেদের ছেলে
মোঃ ফয়সাল হাসান রাজিব – মোগলটুলির মৃত এমডি মুরাদের ছেলে
গোলাম মহিউদ্দিন সুমন – মোগলটুলির মৃত শহিদ মিয়ার ছেলে
মোঃ রকিবুর রহমান রকি – মোগলটুলির এ কে এম নুরুর রহমান নান্নুর ছেলে
আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার – কুমিল্লা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য, মুন্সেফবাড়ির আবদুস সালামের ছেলে
আতিক উল্লাহ খোকন – কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ঝাউতলার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে
তাহসীন বাহার সূচনা – আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে, মুন্সেফবাড়ি
ফাহিম ওরফে বডিগার্ড ফাহিম – চৌধুরীপাড়ার ফয়েজ আহমেদের ছেলে
গোলাম সারোয়ার ফাহিম ওরফে মোটা ফাহিম – ফাহিমের ভাই
মোঃ মোস্তফা আল হাদি জুয়েল ওরফে অনিক – মোগলটুলির বারেক সর্দার বাড়ির মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে
মোঃ রুমি ইসলাম – মোগলটুলির কুমিল্লা হাইস্কুলের পিছনের আলমগীর হোসেনের ছেলে
জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া – মোগলটুলির সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ রায়হানের বোনজামাই, কসবার মাইজখারের মৃত নান্নু ভূইয়ার ছেলে
মোঃ ইসতিয়াক সরকার বিপু – স্থানীয় বিএনপি নেতা, মোগলটুলির আবদুল আলিম সরকারের ছেলে
মোঃ জিসান – মোগলটুলির মোঃ ইসরাফিলের ছেলে
মনির হোসেন বিপ্লব – গাংচরের মকবুল হোসেনের ছেলে
মুকবুল হোসেন ওরফে ডেঙ্গা মুকবুল
ফরহাদ জামান অভয় – শাহ সুজা মসজিদ রোডের ফজলুল হক খোকনের ছেলে
নাজমুল হোসেন আকিব – আউয়াল মিয়ার ছেলে
কাজী মোঃ তারেক – মোগলটুলির কাজী মোঃ শরীফের ছেলে
ইমরান হোসেন – কুমিল্লা হাই স্কুলের পিছনের নজরুল ইসলামের ছেলে
সুজন হোসেন – মোগলটুলির শামসু মিয়ার ছেলে
মোঃ আক্তার হোসেন – পুরাতন চৌধুরী পাড়ার
এমদাদুল হক ওরফে জুম্মান – উত্তর গাংচরের মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে
মোঃ মহসিন – মোগলটুলির শুক্কুর মিয়ার ছেলে
কাজী মোজাম্মেল হক রিফাত – শাহসুজা মসজিদ রোডের কাজী স্বপনের ছেলে
মাসুদ রানা প্রধান – পশ্চিম রেইসকোর্সের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে
টিপু সুলতান ওরফে টাইগার টিপু – ঠাকুরপাড়া সারদা পালের মাঠের নসিব উল্লাহর ছেলে
আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর – কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পশ্চিম কান্দিরপাড়ের আবদুল হালিমের ছেলে
রুহুল আমিন জুয়েল – রেইসকোর্সের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে
মোঃ মনিরুল আলম – রেইসকোর্স ধানমন্ডি রোডের আলমগীরের ছেলে
মোঃ রিপন মিয়া – টিএন্ডটি কলোনীর মৃত মানিক মিয়ার ছেলে
আরিয়ান ইসলাম ওরফে লাচ্চি আরাফাত – মোগলটুলির রফিকুল ইসলামের ছেলে
জহিরুল ইসলাম মিঠু – মোগলটুলির মৃত তাজুল ইসলামের ছেলে
টুটুল মিয়া – শাহসুজা মসজিদ রোডের আবদুস সালামের ছেলে
ফরহাদ হোসেন হৃদয় – শরীফ মিয়ার ছেলে
মামলার অগ্রগতি
৩৫ আসামির মধ্যে ১৮ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। বাকিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এ মামলার এক আসামি মোঃ বাচ্চু ওরফে কালা বাচ্চু কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এটি জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম মামলা যার চার্জশিট আদালতে দাখিল হলো।