০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুবিতে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলনের অ্যাবস্ট্রাক্ট জমাদানের সময়সীমা বৃদ্ধি শিক্ষক সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় ফের অস্থিরতায় কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুল তুরস্কের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কুবির শিক্ষক–শিক্ষার্থী বিনিময় চুক্তি, নেই টিউশন ফি বেগম জিয়ার আরোগ্য কামনায় হাজী ইয়াছিনের ধারাবাহিক কুরআন খতম ও দোয়া চৌদ্দগ্রামে চিওড়া ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচনী সমন্বয় সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় কৃতী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও সংবর্ধনা প্রদান জীবনের বাকি সময়টা কুমিল্লা-৬ আসনের নেতাকর্মীদের সঙ্গেই থাকতে চাই -হাজী ইয়াছিন বুড়িচংয়ে যৌতুকের দাবিতে প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ; আটক ২ কুবির দত্ত হলে প্রথমবারের মতো আন্তঃহল বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন সংবাদ প্রকাশে নির্ভীক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক যুগ

গুলিতে বাসার ছাদে বাবার কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি

  • তারিখ : ১১:৪২:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪
  • 67

নিউজ ডেস্ক।।
দুপুরে খাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিল মেয়েটি। খানিক পরেই রাস্তায় সংঘর্ষ বাধে। বাসার সামনে হইহল্লা শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে।

রক্তে ভেজা মেয়েকে নিয়ে তখনই বাবা ছোটেন হাসপাতালে। বাসার কাছের ক্লিনিকে চিকিৎসকেরা বেশিক্ষণ রাখলেন না। পাঠিয়ে দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সে রাতেই মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে আশ্বস্ত করেন চিকিৎসকেরা। মেয়েটিকে রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। গত শুক্রবার বিকেলে গুলি লাগে মেয়েটির। সেদিন রাতে অস্ত্রোপচারের পর শনিবার পার হয়। রোববার ও সোমবার আইসিইউতে একটু একটু করে আঙুল নাড়ছিল মেয়েটি। স্বজনদের বুকে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু গতকাল বুধবার সকালের দিকে মেয়েটির সে নড়াচড়াও থেমে যায়। সবাইকে কাঁদিয়ে মেয়েটি চলে যায় না-ফেরার দেশে।

সাড়ে ছয় বছর বয়সী মেয়েটির নাম রিয়া গোপ। মা-বাবার সঙ্গে থাকত নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায়। চারতলা বাড়ির ওপরের তলায় থাকত ওরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের রেশ নারায়ণগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছিল। শুক্রবার বিকেলে নয়ামাটি এলাকায় চলছিল সংঘাত, আর গোলাগুলি। সেই গুলিতেই প্রাণ গেল ছোট্ট রিয়ার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, ‘গানশট ইনজুরি’।

দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। স্থানীয় একটি রড-সিমেন্টের দোকানে ব্যবস্থাপকের কাজ করেন দীপক। বিয়ের পাঁচ বছর পর এ দম্পতির ঘর আলো করে আসে রিয়া। এ বছরই ভর্তি হয়েছিল স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন দীপক কুমার। সঙ্গে ছিলেন আরও স্বজনেরা। কথা হয় রিয়ার এক স্বজনের সঙ্গে। তিনি বললেন, বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে বাবার কোলেই গুলিবিদ্ধ হয় মেয়েটা। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে!

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের রেশ নারায়ণগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছিল। শুক্রবার বিকেলে নয়ামাটি এলাকায় চলছিল সংঘাত, আর গোলাগুলি। সেই গুলিতেই প্রাণ গেল ছোট্ট রিয়ার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, ‘গানশট ইনজুরি’।

গতকাল রিয়ার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার কিছু পরে। মর্গ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার আগে স্ট্রেচারে রাখা মেয়েটির মুখ দেখানো হয় স্বজনদের। মুহূর্তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। রিয়ার ছোট খালা আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার ছোট মারে, তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলি! তোরে ছাড়া আমরা কেমনে বাঁচব?’

একমাত্র মেয়েকে হারানোর শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন দীপক কুমার। মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝি নাই। আমার কোলেই মেয়ের মাথা থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল।’ বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।

error: Content is protected !!

গুলিতে বাসার ছাদে বাবার কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি

তারিখ : ১১:৪২:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

নিউজ ডেস্ক।।
দুপুরে খাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিল মেয়েটি। খানিক পরেই রাস্তায় সংঘর্ষ বাধে। বাসার সামনে হইহল্লা শুনে বাবা ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে।

রক্তে ভেজা মেয়েকে নিয়ে তখনই বাবা ছোটেন হাসপাতালে। বাসার কাছের ক্লিনিকে চিকিৎসকেরা বেশিক্ষণ রাখলেন না। পাঠিয়ে দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সে রাতেই মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে আশ্বস্ত করেন চিকিৎসকেরা। মেয়েটিকে রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। বলা হয়, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না। গত শুক্রবার বিকেলে গুলি লাগে মেয়েটির। সেদিন রাতে অস্ত্রোপচারের পর শনিবার পার হয়। রোববার ও সোমবার আইসিইউতে একটু একটু করে আঙুল নাড়ছিল মেয়েটি। স্বজনদের বুকে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু গতকাল বুধবার সকালের দিকে মেয়েটির সে নড়াচড়াও থেমে যায়। সবাইকে কাঁদিয়ে মেয়েটি চলে যায় না-ফেরার দেশে।

সাড়ে ছয় বছর বয়সী মেয়েটির নাম রিয়া গোপ। মা-বাবার সঙ্গে থাকত নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায়। চারতলা বাড়ির ওপরের তলায় থাকত ওরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের রেশ নারায়ণগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছিল। শুক্রবার বিকেলে নয়ামাটি এলাকায় চলছিল সংঘাত, আর গোলাগুলি। সেই গুলিতেই প্রাণ গেল ছোট্ট রিয়ার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, ‘গানশট ইনজুরি’।

দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। স্থানীয় একটি রড-সিমেন্টের দোকানে ব্যবস্থাপকের কাজ করেন দীপক। বিয়ের পাঁচ বছর পর এ দম্পতির ঘর আলো করে আসে রিয়া। এ বছরই ভর্তি হয়েছিল স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন দীপক কুমার। সঙ্গে ছিলেন আরও স্বজনেরা। কথা হয় রিয়ার এক স্বজনের সঙ্গে। তিনি বললেন, বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে বাবার কোলেই গুলিবিদ্ধ হয় মেয়েটা। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে!

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের রেশ নারায়ণগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছিল। শুক্রবার বিকেলে নয়ামাটি এলাকায় চলছিল সংঘাত, আর গোলাগুলি। সেই গুলিতেই প্রাণ গেল ছোট্ট রিয়ার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, ‘গানশট ইনজুরি’।

গতকাল রিয়ার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার কিছু পরে। মর্গ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার আগে স্ট্রেচারে রাখা মেয়েটির মুখ দেখানো হয় স্বজনদের। মুহূর্তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। রিয়ার ছোট খালা আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার ছোট মারে, তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলি! তোরে ছাড়া আমরা কেমনে বাঁচব?’

একমাত্র মেয়েকে হারানোর শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন দীপক কুমার। মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝি নাই। আমার কোলেই মেয়ের মাথা থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল।’ বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।