০৮:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুবিতে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলনের অ্যাবস্ট্রাক্ট জমাদানের সময়সীমা বৃদ্ধি শিক্ষক সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় ফের অস্থিরতায় কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুল তুরস্কের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কুবির শিক্ষক–শিক্ষার্থী বিনিময় চুক্তি, নেই টিউশন ফি বেগম জিয়ার আরোগ্য কামনায় হাজী ইয়াছিনের ধারাবাহিক কুরআন খতম ও দোয়া চৌদ্দগ্রামে চিওড়া ইউনিয়ন বিএনপির নির্বাচনী সমন্বয় সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় কৃতী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও সংবর্ধনা প্রদান জীবনের বাকি সময়টা কুমিল্লা-৬ আসনের নেতাকর্মীদের সঙ্গেই থাকতে চাই -হাজী ইয়াছিন বুড়িচংয়ে যৌতুকের দাবিতে প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ; আটক ২ কুবির দত্ত হলে প্রথমবারের মতো আন্তঃহল বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন সংবাদ প্রকাশে নির্ভীক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক যুগ

চৌদ্দগ্রামে ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪০ দিন বিছানায় ইয়াকুব

  • তারিখ : ০৮:০৫:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 48

মনোয়ার হোসেন।।
পঞ্চম শ্রেণি পাস মো: ইয়াকুব হোসেন। বাড়ী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের বরৈয়া গ্রামে। কৃষক বাবার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে খুব অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন। স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রির সাথে হেলপার হিসেবে সামান্য বেতনে কাজ করতেন ইয়াকুব।

গত ৫ আগস্ট (সোমবার) বিকালে ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার পতনের পর এলাকার অন্যান্যদের সাথে আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা শহরে। ঐদিন বিকালে আনন্দ মিছিলকারী ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষের সাথে থানা পুলিশের হামলা-পাল্টা হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ইয়াকুব হোসেন থানার দক্ষিণ পাশে নিরাপদ দূরত্বেই ছিলেন। কিন্তু বিধির লিখন, যায়না খন্ডন। এ সময় পুলিশের ছোড়া দু’টি গুলি এসে লাগে ইয়াকুবের দুই পাড়ে। বামপাশের হাটুর নিচে লাগা গুলিটি একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে অপর পাশ বেধ করে বেড়িয়ে যায়। আর ডানপায়ের একপাশ ঘেষে লাগা গুলিটি হাটুর নিচের চামড়া ছিড়ে নিয়ে চলে যায়। পরে অচেতন অবস্থায় উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম সরকারি হাসপাতালে নেয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুই সপ্তাহের অধিক সময় চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বাসায় ফিরলেও শারীরিক অবস্থার তেমন একটা উন্নতি হয়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নীবিড় পর্যবেক্ষণে সবসময় থাকতে হচ্ছে তাকে। প্রায় তিন সপ্তাহ পরে সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে তাকে বাড়ি থেকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য নিয়ে যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে কুমিল্লা সিএমএইচ হাসপাতালে এক সপ্তাহ পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। এরপর বাসায় ফিরলেও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা সেবা এখনো চলমান। এক্ষেত্রে স্থানীয়রা বিভিন্ন ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে সহযোগিতা করলেও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য তাহা পর্যাপ্ত নয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে।

এদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বিছানায় পড়ে থাকায় মা-বাবার পক্ষে সংসার চালানো বেশ মুশকিল হয়ে পড়েছে। অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে প্রতিদিন ইয়াকুবের চিকিৎসা খাতে খরচ হচ্ছে অনেক টাকা। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। তারপরও পরিবারের লোকজন ধৈর্য্য হারা হয়নি। একদিন সুস্থ হয়ে ইয়াকুব স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে বলেই মা-বাবা সহ পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস।

সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকালে রোববার দুপুরে গুলিবিদ্ধ ইয়াকুব হোসেন বলেন, উৎসুক জনতার সাথে আনন্দ মিছিল দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ মরণ যন্ত্রণায় বিছানায় কাতরাচ্ছি। প্রচন্ড ব্যাথায় রাতে ঘুমাতে পারিনা। আমার কারণে পরিবারের সকলের রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসার ফলে আর্থিক সমস্যা সহ পরিবারকে পড়তে হয়েছে নানান সমস্যায়। চিকিৎসা ব্যয়ে আমার গ্রামের বিত্তবানরা সহ যুবসমাজ এগিয়ে এসেছে। তারপরও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখী আজ। আমি সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য, সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

ইয়াকুব হোসেনের পিতা জাফর আহমেদ জানান, ছেলের এই অবস্থায় কোনো কূল পাচ্ছিনা। সমাজের লোকেরা এগিয়ে আসায় কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে। এ সময় তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে মহান রবের সাহায্য প্রার্থনা করেন।

বড় বোন সাবরিনা ও হোসনা বলেন, একমাত্র ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ এক মাসের অধিক সময় বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে। চোখের সামনে কলিজার টুকরো ভাইয়ের এমন অসহায়ত্বে বোন হিসেবে সেবা ছাড়া কিছুই করতে পারছিনা। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন প্রিয় ভাইকে দ্রুত সুস্থতা দান করে।

error: Content is protected !!

চৌদ্দগ্রামে ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪০ দিন বিছানায় ইয়াকুব

তারিখ : ০৮:০৫:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মনোয়ার হোসেন।।
পঞ্চম শ্রেণি পাস মো: ইয়াকুব হোসেন। বাড়ী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের বরৈয়া গ্রামে। কৃষক বাবার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে খুব অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন। স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রির সাথে হেলপার হিসেবে সামান্য বেতনে কাজ করতেন ইয়াকুব।

গত ৫ আগস্ট (সোমবার) বিকালে ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার পতনের পর এলাকার অন্যান্যদের সাথে আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা শহরে। ঐদিন বিকালে আনন্দ মিছিলকারী ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষের সাথে থানা পুলিশের হামলা-পাল্টা হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ইয়াকুব হোসেন থানার দক্ষিণ পাশে নিরাপদ দূরত্বেই ছিলেন। কিন্তু বিধির লিখন, যায়না খন্ডন। এ সময় পুলিশের ছোড়া দু’টি গুলি এসে লাগে ইয়াকুবের দুই পাড়ে। বামপাশের হাটুর নিচে লাগা গুলিটি একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে অপর পাশ বেধ করে বেড়িয়ে যায়। আর ডানপায়ের একপাশ ঘেষে লাগা গুলিটি হাটুর নিচের চামড়া ছিড়ে নিয়ে চলে যায়। পরে অচেতন অবস্থায় উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম সরকারি হাসপাতালে নেয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুই সপ্তাহের অধিক সময় চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বাসায় ফিরলেও শারীরিক অবস্থার তেমন একটা উন্নতি হয়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নীবিড় পর্যবেক্ষণে সবসময় থাকতে হচ্ছে তাকে। প্রায় তিন সপ্তাহ পরে সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে তাকে বাড়ি থেকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য নিয়ে যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে কুমিল্লা সিএমএইচ হাসপাতালে এক সপ্তাহ পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। এরপর বাসায় ফিরলেও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা সেবা এখনো চলমান। এক্ষেত্রে স্থানীয়রা বিভিন্ন ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে সহযোগিতা করলেও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য তাহা পর্যাপ্ত নয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে।

এদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বিছানায় পড়ে থাকায় মা-বাবার পক্ষে সংসার চালানো বেশ মুশকিল হয়ে পড়েছে। অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে প্রতিদিন ইয়াকুবের চিকিৎসা খাতে খরচ হচ্ছে অনেক টাকা। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। তারপরও পরিবারের লোকজন ধৈর্য্য হারা হয়নি। একদিন সুস্থ হয়ে ইয়াকুব স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে বলেই মা-বাবা সহ পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস।

সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকালে রোববার দুপুরে গুলিবিদ্ধ ইয়াকুব হোসেন বলেন, উৎসুক জনতার সাথে আনন্দ মিছিল দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ মরণ যন্ত্রণায় বিছানায় কাতরাচ্ছি। প্রচন্ড ব্যাথায় রাতে ঘুমাতে পারিনা। আমার কারণে পরিবারের সকলের রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসার ফলে আর্থিক সমস্যা সহ পরিবারকে পড়তে হয়েছে নানান সমস্যায়। চিকিৎসা ব্যয়ে আমার গ্রামের বিত্তবানরা সহ যুবসমাজ এগিয়ে এসেছে। তারপরও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখী আজ। আমি সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য, সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

ইয়াকুব হোসেনের পিতা জাফর আহমেদ জানান, ছেলের এই অবস্থায় কোনো কূল পাচ্ছিনা। সমাজের লোকেরা এগিয়ে আসায় কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে। এ সময় তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে মহান রবের সাহায্য প্রার্থনা করেন।

বড় বোন সাবরিনা ও হোসনা বলেন, একমাত্র ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ এক মাসের অধিক সময় বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে। চোখের সামনে কলিজার টুকরো ভাইয়ের এমন অসহায়ত্বে বোন হিসেবে সেবা ছাড়া কিছুই করতে পারছিনা। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন প্রিয় ভাইকে দ্রুত সুস্থতা দান করে।