ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের খাবার পরিবেশনে অনিয়মের সংবাদ করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার জাগোনিউজ২৪.কম-এর প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানুর জামিন দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিক তানুকে ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ডালিম কুমার রায় সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুর ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অন্যদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে তার জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় ঠাকুরগাঁও সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
সাংবাদিক তানুর আইনজীবী আরিফ নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল আজিজ বাদী হয়ে সদর থানায় তিন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় জাগোনিউজ২৪.কমের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানুকে ১ নম্বর আসামি করা হয়।
মামলার অন্য দুই আসামি হলেন— বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটু ও নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি রহিম শুভ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(১)(ক) ২৫(১)(খ) ২৯(১)/৩১(১)/৩৫(১) ধারায় করা ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৫ জুলাই জাগোনিউজ২৪.কম, নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক যুগান্তরের অনলাইনে সংস্করণে করোনা রোগীর খাবার নিয়ে ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, জনরোষ সৃষ্টিকারী মানহানিকর’ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে, দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে খবর নিতে গেলে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশ রাত ৮টায় সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুকে গ্রেফতার করে। পরে তানু থানাহাজতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।
শনিবার (১০ জুলাই) দিনগত রাত ১টার দিকে তানুর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে পাঠান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম।
অপরদিকে, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নাদিরুল আজিজের করা মামলার এজাহারের একটি কপি জাগো নিউজের হাতে এসেছে। মামলার ওই এজাহারে জাগো নিউজে গত ৫ জুলাই প্রকাশিত ‘দিনে বরাদ্দ ৩০০ হলেও করোনা রোগীদের খাবার দেয়া হচ্ছে ৭০ টাকার!’ শিরোনামের সংবাদের খাবার সরবরাহে অনিয়মের সত্যতা উঠে এসেছে।
মামলার এজাহারে বাদী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক উল্লেখ করেছেন, ‘গত জুন মাসে ২/১ দিন খাবার সরবরাহে সামান্য ব্যত্যয় ঘটলেও অন্যান্য সময় সরকারি বরাদ্দ মোতাবেক যথাযথভাবে রোগীদের খাবার প্রদান করা হচ্ছে।’
তত্ত্বাবধায়কের দাবি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরই তিনি হাসপাতালে খাবার সরবরাহে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, হাসপাতালের পাচক (বাবুর্চি) ও রোগীদের খাবার পরিবেশনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য জানতে পেরেছেন।
অর্থাৎ সংবাদ প্রকাশের পরই তিনি খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং তার দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লিখিত হাসপাতালে ‘দু-একদিন খাবার সরবরাহে ব্যত্যয়’-এর তথ্য জানতে পেরেছেন। অথচ ‘খাবার সরবরাহে ব্যত্যয়’-এর বিষয়ে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।
এদিকে, এজাহারে ‘দু-একদিন খাবার সরবরাহে ব্যত্যয়’ ঘটার তথ্য অকপটে স্বীকার করা হলেও তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘ভাবমূর্তি বিনষ্ট’ এবং ‘সুনাম ক্ষুণ্ন’ হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
অপরদিকে, তানুকে গ্রেফতারের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুক্তি দাবিতে এবং মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার চেয়ে জেলা প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সাংবাদিকরা। তারা তানুর মুক্তি ও সাংবাদিকদের নামে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এছাড়া তানভীর হাসান তানুকে গ্রেফতারের ঘটনায় সর্বস্তরে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তানুর মুক্তির দাবিতে এবং মামলা প্রত্যাহার চেয়ে জেলা প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন সাংবাদিকরা। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তাল হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও ফেসবুক পোস্ট করে নিন্দা জানাচ্ছেন।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page