সোহরাব হোসেন।।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের গৌরসার গ্রামের সংগ্রামী মা পারুল বেগমের জীবন এখন এক দুর্বিষহ বাস্তবতার নাম। স্বামী খোরশেদ আলম মারা যাওয়ার পর চার মেয়েকে নিয়ে কোনোভাবে সংসার চালানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু ছোট মেয়ের অসুস্থতা তার জীবনে এনেছে নতুন দুঃস্বপ্ন।
প্রায় দুই বছর আগে সমাজের মানুষের সহায়তায় ছোট মেয়ের বিয়ে হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে মেয়েটি। অসুস্থতার কারণে স্বামীর সংসার থেকেও ডিভোর্স দিয়ে তাকে মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে রয়েছে মাত্র ১০ মাসের ফুটফুটে শিশুপুত্র।
এখন সেই মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামেই লড়ছেন এই অসহায় মা। নাতির দুধ থেকে শুরু করে মেয়ে ও নিজের খাবার যোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেও কেউ খবর নেয় না—এমন অভিযোগ পারুল বেগম এর কণ্ঠে।
পারুল বেগম বলেন, মানুষের কাছে চেয়ে মেয়ের বিয়ে দিলাম। এখন মেয়ের চিকিৎসা করাবো কিভাবে বাবা? ঢাকায় বা ভালো হাসপাতালে নিয়ে গেলে সুস্থ হয়ে উঠবে—ডাক্তাররাও এমন আশ্বাস দেন। কিন্তু ওষুধের টাকাই পাই না। তিন বেলা খেতে পারি না, দুই বেলাও কখনো জোটে না। না খেয়ে থাকি ঠিক আছে, কিন্তু দুধের শিশুটাকে কি খাওয়াবো?”
মানুষের কাছে আর হাত পাততে সংকোচ বোধ করছেন তিনি। “গ্রামের মানুষ আমার জন্য অনেক করেছে। আর কারও কাছে চাইতে লজ্জা লাগে। তবুও বাচ্চার কথা ভেবে বলতে বাধ্য হচ্ছি—দেশবাসীর কাছে একটু সহযোগিতা চাই। অন্তত এক বেলা যেন ভালো কিছু খেতে পারি।”
স্বামীহারা মা, মানসিকভাবে অসুস্থ মেয়ে আর ১০ মাসের শিশুকে নিয়ে পারুল বেগমের এই বাঁচার লড়াই শুধু মানবতার কাছে এক নীরব আর্তনাদ। একটু সহানুভূতি, একটু সহযোগিতা হয়তো ফিরিয়ে দিতে পারে একটি পরিবারকে নতুন করে বেঁচে থাকার শক্তি।











