কুমিল্লার ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হত্যার অভিযোগপত্রে কাউন্সিলর সাত্তার

নিউজ ডেস্ক।।
কুমিল্লার ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন হত্যার চার বছর পর এক কাউন্সিলরসহ ১৬ জনের নামে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন – পিবিআই।

বৃহস্পতিবার পিবিআইয়ের কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের কথা জানান।

এ মামলার সবশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পিবিআইয়ের কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক এম এ মঞ্জুর।

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের শামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা যুবক কুমিল্লার ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনকে মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যা করে।

দেলোয়ার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া নগরীর হাউজিং এলাকার একটি কলেজের প্রভাষক ছিলেন তিনি।

অভিযোগপত্রে এই খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের টানা দুইবারের কাউন্সিলর মো. আবদুস সাত্তারের কথা বলা হয়েছে। সাত্তার কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন।

অভিযোগপত্র সম্পর্কে পিবিআইয়ের কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, তাদের হাতে গ্রেপ্তার এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দীর্ঘ তদন্তের পর কিলিং মিশন বাস্তবায়নকারী এবং নেপথ্যে থাকা পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকাণ্ডের সহযোগীদের তারা চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।

পিবিআই কার্যালয় ও নিহতের পরিবাবের সদস্যরা জানান, ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর নির্বাচনী সভার কথা বলে কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার মোবাইল ফোনে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ারকে। সভা শেষে সাত্তারের অফিস থেকে ফেরার পথে ওইদিন রাতে নিজ বাড়ির কাছাকাছি শামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকায় দেলোয়ারকে গুলি করে হত্যা করে একদল লোক।

ঘটনার পরদিন নিহতের বড় ভাই মো. শাহাদাত হোসেন নয়ন বাদী হয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলায় ‘কিলার রেজাউল’ হিসেবে পরিচিত একই এলাকার বাসিন্দা পুলিশের তালিকাভুক্ত কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী রেজাউল করিম ও তার সহযোগী কাউছারসহ অজ্ঞাতনামা অনেককে আসামি করা হয়।

পুলিশ জানায়, রেজাউলের বিরুদ্ধে ১২টি হত্যা মামলাসহ মোট ৩০টি মামলা রয়েছে। সবশেষ ২০২১ সালের ১৮ জুন কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলি, মাদকসহ রেজাউলকে আটক করে বিজিবির সদস্যরা। বর্তমানে রেজাউল কুমিল্লা কারাগারে রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দেলোয়ার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক এম এ মঞ্জুর জানান, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত কাউন্সিলর সাত্তারসহ ছয় জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রধান আসামি রেজাউল ছাড়া বাকিরা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।

“গত ২৩ জানুয়ারি স্বাক্ষর হওয়া চার্জশিট [অভিযোগপত্র] এরই মধ্যে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় প্রভাব বিস্তার, কাউন্সিলর নির্বাচনসহ রাজনৈতিক বিরোধে দেলোয়ারকে খুনের পরিকল্পনা করেন কাউন্সিলর সাত্তার।”

মঞ্জুর জানান, ২০১৭ সালের সিটি নির্বাচনে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন দেলোয়ার। আর ওই ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন দেলোয়ারের এক সময়ের কর্মী আবদুস সাত্তার।

তদন্তের বরাতে মঞ্জুর বলেন, “নির্বাচনের আগে সাত্তারকে দলীয় প্রার্থী করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন দেলোয়ার। পরে তিনি নিজেই দলীয় প্রার্থী হওয়ায় তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আর রেজাউলের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বাধা দিতেন দেলোয়ার। এজন্য তারা দেলোয়ারকে খুন করেন।”

পুলিশ পরিদর্শক এম এ মঞ্জুর আরও বলেন, সাত্তার পরিকল্পনাকারী। এছড়া চার্জশিটে নাম থাকা বাকি ১৫ জনের মধ্যে প্রধান আসামি রেজাউল আর শামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকার আতিকুল ইসলাম আতিক ছিলেন খুনের বাস্তবায়নকারী। আতিক ছিলেন ওই বাইকের চালক। নির্বাচনী সভা শেষে সাত্তারের অফিস থেকে বের হয়ে দেলোয়ার হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন।

“পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলে গিয়ে আতিক হঠাৎ মোটরসাইকেল থামালে পেছনে বসা রেজাউল সঙ্গে সঙ্গেই দেলোয়ারের মাথায় গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।”

অভিযোগপত্রে বাকি ১৩ জন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন এবং এরা সবাই কাউন্সিলর সাত্তার ও রেজাউলের সযযোগী বলে মঞ্জুরের ভাষ্য।

গত এক দশকে কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে যেসব হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন হত্যা বেশ আলোচিত। বিগত সময়গুলোতে দেখা গেছে কুমিল্লার রাজনৈতিক বিরোধে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো খুব একটা আলোর মুখ দেখেনি।

অভিযোগপত্র দেওয়ার পর পিবিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিহতের বড় ভাই মো. শাহাদাত হোসেন নয়ন বলেন, এবার আদালতের বিচারে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে চান তারা। অতীতে কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে খুনের ঘটনা গুলোর বিচার না হওয়ায় এভাবে খুনের ঘটনা বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে হত্যার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবদুস সাত্তার বলেন, “দেলোয়ার ভাই আমার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন। তার কাছ থেকে আমি রাজনীতি শিখেছি।”

হত্যা মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মূলত দেলোয়ার ভাইয়ের কাছের লোকেরাই এ ঘটনায় জড়িত। আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আশা করছি আদালতে আমি ন্যায় বিচার পেয়ে নির্দোষ প্রমাণিত হব।”

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page