স্টাফ রিপোর্টার।।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে (কুমেক) একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টার ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর ‘ছাত্রলীগ’ সমর্থক ১০ ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে আজীবনের জন্য কলেজ ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ওই শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মির্জ্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম। তবে শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিষয়টি অতি তুচ্ছ এবং এখানে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে দাবি করেছেন। যদিও অধ্যক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পাওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা হলেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ২৫তম ব্যাচের হৃদয় রঞ্জন নাথ ও আনোয়ার হোসেন, ২৭তম ব্যাচের শহিদুল ইসলাম, জয় সরকার ও সামিউল হক, ২৮তম ব্যাচের শাইখ আবেদিন, তালুকদার মো. ফারহান ও তাহসিনুল হক, ৩০তম ব্যাচের আফ্রিদি ইসলাম ও ৩১তম ব্যাচের ইয়াসির জোনায়েদ। এর মধ্যে ২৫তম ব্যাচের হৃদয় রঞ্জন নাথকে ক্যাম্পাসে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫তম ব্যাচের হৃদয় রঞ্জন নাথকে ক্যাম্পাসে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সামিউল হকের দুই বছরের জন্য ইন্টার্ন প্রশিক্ষণ স্থগিত করা হয়েছে। জয় সরকার এবং শাইখ আবেদিনেরও দুই বছরের জন্য ইন্টার্ন প্রশিক্ষণ স্থগিত করা হয়েছে। তালুকদার মো. ফারহান ও তাহসিনুল হকের ২৪ মাস পেশাগত পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখাসহ দুই বছরের জন্য হোস্টেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে । এ ছাড়া তাঁদের পরবর্তী আচরণ তদারক করা হবে।
এক বছরের জন্য ইন্টার্ন প্রশিক্ষণ স্থগিত হয়েছে আনোয়ার হোসেন এবং শহিদুল ইসলামের। আফ্রিদি ইসলামকে ১২ মাস পেশাগত পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখাসহ দুই বছর হোস্টেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাঁর পরবর্তী আচরণ তদারক করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ইয়াসির জোনায়েদকে ছয় মাসের জন্য পেশাগত পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত ও কলেজের হোস্টেলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় মেডিকেল কলেজের গেটে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হৃদয় রঞ্জন নাথের নেতৃত্বে ২৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুজাহিদ ত্বহাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একইসঙ্গে আরেক শিক্ষার্থী আবদুল মান্নানকেও হেনস্তা করা হয়। পরে তাদের শিবিরের নেতাকর্মী বলে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এ ঘটনার পর ৩ মার্চ আবদুল মান্নানের মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে হাতবোমা দিয়ে মান্নানকে বিস্ফোরক মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। এছাড়াও গত ৯ মার্চ কলেজ ক্যাম্পাসে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকায় দীর্ঘদিন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মির্জ্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী, ওই দিনই ১০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করার পরই এ পদক্ষেপ নেওয়া এবং এই শাস্তি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
তিনি আরও বলেন, এ শাস্তির পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই। সবাই আমাদের ছাত্র। শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণের পরই তাদের শান্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page