মনির হোসাইন
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাস জ্বর। পাশাপাশি বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। ছোট-বড় সবাই আক্রান্ত হলেও শিশুদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে অন্যান্য সদস্যও আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি ও বহির্বিভাগে ৬৫০-৭০০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শয্যা সংকটের কারণে অনেকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ যাচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিকে।
গত সোমবার সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীর দীর্ঘ লাইন। শিশু চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড়। প্রতিদিন ১৭০-১৮০ জন শিশুকে চিকিৎসা দিচ্ছেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন। ১৮ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ২৫ জন, মহিলা ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার বিপরীতে ৩৮ জন এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ১৫ শয্যার বিপরীতে ৩১ জন।
শিশু ওয়ার্ডের অধিকাংশ রোগী জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
ভুবনঘর গ্রামের শারমিন আক্তার জানান, ছয় দিন ধরে সন্তানের জ্বর-ঠান্ডা। ফার্মেসির ওষুধে সুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে এসেছেন। নিমাই কান্দির সাথী আক্তার বলেন, তিন দিন ধরে শিশুর জ্বর-কাশি, ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। শুশুন্ডা গ্রামের সোহেল মিয়া জানান, বাসায় ওষুধ খাওয়ানোর পরও সন্তানের জ্বর না কমায় হাসপাতালে এনেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও অন্যান্য কারণে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। সতর্ক থাকার জন্য তিনি শিশু ও বয়স্কদের ধুলাবালি থেকে দূরে রাখা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নিশ্চিত করা, মাস্ক ব্যবহার, বেশি পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে নবজাতকের ক্ষেত্রে বেশি সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, বর্ষাকাল ও বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিন শত শত রোগী আসছেন, যাদের অধিকাংশ ভাইরাসজনিত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। ধারণক্ষমতার চেয়ে রোগী বেশি হলেও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।