মনোয়ার হোসেন।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মাছ শিকার প্রতিযোগিতার নামে অবৈধভাবে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথদীঘির পানি আটকে রাখার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। তারা দাবি করেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত সমাধীস্থান এবং শতবর্ষী স্থানীয় কবরস্থান এখন পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের জগন্নাথদীঘির পাড় এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের শাহী জামে মসজিদ সংলগ্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জগন্নাথদীঘি শাহী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন, সমাজসেবক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহজাহান ও শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হোসাইন প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করেন, দীঘির বর্তমান ইজারাদার মাছ শিকার প্রতিযোগিতার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পানি আটকে রেখেছেন। ফলে আশেপাশের এলাকার ঘরবাড়ি, শতবর্ষী কবরস্থান ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধীস্থল ধীরে ধীরে ভেঙে দীঘির পানিতে বিলীন হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, “এই দীঘিটি সরকারি হলেও এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস ও আবেগের প্রতীক। এখানে দশ-বারো গ্রামের মানুষের পূর্বপুরুষদের কবর রয়েছে। এখনো এখানেই সবাইকে দাফন করা হয়। বহু বেওয়ারিশ লাশের কবরও রয়েছে। কিন্তু পানির উচ্চতা বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত কবরস্থান ও ঘরবাড়ি ভাঙছে।”
স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে পানি ছেড়ে দিয়ে কবরস্থান রক্ষায় প্রশাসনের জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবক মো. কোরবান আলী, মো. কালা মিয়া, মো. শাহআলম, মোখন মিয়া, দ্বীন মোহাম্মদ দীলু, প্রবাসী মো. আজহারুল ইসলাম মুন্না, যুবনেতা মোহাম্মদ রনি, মোহাম্মদ সাইমনসহ আশেপাশের গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ।
এ বিষয়ে চিওড়া মৎস্যচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি ও দীঘির ইজারাদার প্রতিনিধি মো. ফখরুল ইসলাম ফয়সাল বলেন, “আমরা কয়েক মাস আগে দীঘিটি লিজ নিয়েছি। আগে থেকেই কবরস্থানটি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। সাময়িকভাবে মাছ শিকারীদের বড়শি প্রতিযোগিতার সুবিধার্থে পানি আটকে রাখা হয়েছে। প্রতিযোগিতা শেষে পানি ছেড়ে দেওয়া হবে।”
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জামাল হোসেন বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমি আগে জানতাম না। এখন সাংবাদিকদের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ দিলে মুক্তিযোদ্ধা সমাধী ও কবরস্থান রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”











