মো. আনোয়ারুল ইসলাম।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে অবৈধ খননযন্ত্র (ড্রেজার মেশিন) দিয়ে ফসলি জমি নষ্ট করে দিনের পর দিন মাটি উত্তলন ও ভরাট করে আসছেন আব্দুল কাদির নামের এক ড্রেজার মেশিন ব্যবসায়ী।
তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ স্থানীয় প্রভাশালী ব্যাক্তি ও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে এই অপকর্ম করে আসছেন বলে স্থানীয় লোকজন এমন অভিযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি বলেন জানান স্থানীয় কৃষকরা।
অবৈধ ড্রেজার মেশিন ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির (৫৫) সুনামগঞ্জ (সিলেট) এর বাসিন্দা। সে বর্তমানে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল বাজারের উত্তর পাশে স-মিল সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় লোকজন ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অবৈধ ড্রেজার মেশিন ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ পূর্বপাড়া এলাকায় স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য নাসিমা আক্তারের বাড়ি সংলগ্ন স্থানীয় এক ব্যক্তির জমি থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ মাটি উত্তল করে পাইপের মাধ্যমে দ্রুরদ্রুরান্তে বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও পকুর ভরাট করে আসছেন। বর্তমানে সে স্থানীয় ওই নারী ইউপি সদস্যের বাড়ির পাশে একটি জমি ভরাট করছেন এবং তার পাশেই অন্য এক ব্যক্তির একটি জমি প্রস্তুত করে রেখেছেন মাটি ভরাটের জন্য।
এ ছাড়া অবৈধ ড্রেজার মেশিন ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির ধান্যদৌল কালামুড়িয়া বিলের একটি জমিতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তল করে নাগাইশ গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকায় বড়ধুশিয়া সংলগ্ন বজলু মিয়ার বাড়ির পাশে আরও একটি ভরাট করছেন। খনন হওয়া জমির পাশেরে জমি গুলোর মালিকগণ অবৈধ ড্রেজার মেশিন মালিক ও মাটি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদিরের এমন অপকর্ম থেকে পরিত্রান চেয়ে স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
স্থানীয় লোকজনের প্রশ্ন, অবৈধ ড্রেজার মেশিনের বিরুদ্ধে বর্তমান সকার ও প্রশাসন যেখানে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সে অবস্থায় একজন ইউপি সদস্যের বাড়ির সামনে দীর্ঘদিন ধরে একটি অবৈধ ড্রেজার মেশিন চলে কি ভাবে?। অবৈধ ড্রেজার মেশিন মালিক আব্দুল কাদিরের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না কেন প্রশাসন?।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাগাইশ পূর্বপাড়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, অবৈধ ড্রেজার মেশিন মালিক আব্দুল কাদির সিলেট সুনামগঞ্জ থেকে এসে এই এলাকায় স্থানীয় প্রভাশালী লোকজনকে হাতে রেখে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তল ও ভরাট করে ফসলি জমি ও পুকুর নষ্ট করে আসছেন। তার এমন অপকর্মের জন্য ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত বিগা ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে এবং হচ্ছে। আব্দুল কাদির সহ অন্যান্য ড্রেজার মেশিন মালিকদের অবৈধ মাটি উত্তলনের ফলে দিন দিন হুমকির মুখে পাড়েছে উপজেলার ফসলি জমি গুলো। তাদের এই কর্মযজ্ঞ এভাবে চলতে থাকলে এক সময় দেখা যাবে এই উপজেলায় ফসল উৎপদন করার জন্য আর কোন জমি নেই। আব্দুল কাদের ওরফে ড্রেজার কাদের অবৈধ খননযন্ত্রের ভূমি খনন থেকে আমরা মুক্তি চাই। এসব মাটি উত্তলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের নিকট অকূল আবেদন জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, যেখানে ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে, তার পাশের দাগেই আমার পাঁচ বিঘা তিন ফসলি জমি রয়েছে। এই জমিতে বছরে তিন মৌসুমেই ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করি। এখানে পুকুর খনন করা হলে আমার জমি ভেঙে যাবে। আমি পুকুর খনন বন্ধের দাবি জানাই।
ড্রেজার মেশিন মালিক আব্দুল কাদির বলেন, আমি এ ভাবে এখানে ড্রেজার ব্যবসা করতে আসিনি। প্রশাসনের লোকজন ও উপরের মহলসহ সকল সাইট ম্যানেজ করেই এই এলাকায় ড্রেজার ব্যবসা করছি। আমাকে কেউ কিছু বলার এবং আমার বিরুদ্ধে কেউ কোন কিছু করার সুযোগ নেই। কে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিল, কে কি বলল তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে পুকুর খনন ও ফসলি জমি ভরাট করার কোনো সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আমি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page