স্টাফ রিপোর্টার।।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইতোমধ্যে কুমিল্লা জেলার ১১টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।
দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড এই ৯ আসনের প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ফোন করে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এতে করে দীর্ঘদিন পর বিএনপির রাজনীতিতে কুমিল্লা জেলায় নতুন প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন মাঠে সরব, নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
🔹 সবুজ সংকেত পেয়েছেন যারা-
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ অক্টোবর রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের ফোন করে মোবাইল ফোন সচল রাখতে এবং বড় কোনো জনসমাগম এড়িয়ে চলতে নির্দেশ দেন। এই ফোন কলগুলিই মূলত “প্রাথমিক মনোনয়ন অনুমোদনের” ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সূত্র মতে, যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে তারা হচ্ছেন-
কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি–মেঘনা): বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
কুমিল্লা-২ (হোমনা–তিতাস): কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর): সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া): জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব হাজী জসিম উদ্দিন
কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সদর দক্ষিণ): বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন
কুমিল্লা-৮ (বরুড়া): জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম–মনোহরগঞ্জ): কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম
কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট–লালমাই): সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূইয়া
কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম): চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা
এই নয়জনকে ঘিরে এখন নির্বাচনী তৎপরতা, প্রস্তুতি ও সমর্থকদের প্রত্যাশা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
🔹 দুটি আসন শরিক দলের জন্য ছাড়
দলীয় সূত্রের তথ্যমতে, বিএনপি জোটের শরিকদের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখতে কুমিল্লার দুটি আসন ছেড়ে দিতে যাচ্ছে।
এর মধ্যে-
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনটি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি-র) কাছে যেতে পারে, যেখানে হাসানাত আবদুল্লাহ সম্ভাব্য প্রার্থী।
কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদ-এর জন্য রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দলীয় নেতারা বলছেন, “এই সিদ্ধান্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট রাজনীতিকে আরও সুসংগঠিত করবে।”
🔹 নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও নতুন প্রাণ
প্রার্থী চূড়ান্তের খবর কুমিল্লা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি অঙ্গনে নতুন সজীবতা নিয়ে এসেছে। নেতাকর্মীরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে ব্যানার–পোস্টার তৈরি শুরু করেছেন, আবার কেউ কেউ এলাকায় সফর শুরু করেছেন। প্রত্যেক সম্ভাব্য প্রার্থীর নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক কর্মতৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে যেসব নেতারা ফোন পাননি বা নিশ্চিত বার্তা পাননি, তাদের অনুসারীদের মধ্যে হালকা হতাশা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
🔹 ফেসবুকে তালিকা প্রকাশে তোলপাড়
কুমিল্লা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিউর রহমান রাজিব তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ১১টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেন। পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়লে জেলা বিএনপি ও কেন্দ্রীয় মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে রাজিব পোস্টটি ডিলিট করে দাবি করেন, “তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল।” তবে ওই পোস্টে উল্লেখিত নামগুলোর সঙ্গে পরবর্তীতে আলোচিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম মিল পাওয়ায় বিষয়টি এখনো আলোচনায় রয়েছে।
🔹 মনিরুল হক চৌধুরীকে ঘিরে আলোচনার ঝড়
মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সরব আলোচনা চলছে। সোমবার সন্ধ্যায় ওই দুই উপজেলার বিএনপির কয়েকজন নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান।
এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মনিরুল হক চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানা যায়। তবে তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু গোপনই রয়ে গেছে।
কুমিল্লা-১০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূইয়া বলেন, “দলীয় হাই কমান্ড থেকে মাঠে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যতদূর জানি, এক সপ্তাহের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক ফোন পাব।”
কুমিল্লা-৬ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, “বিএনপির মনোনয়নের মূল শর্ত হলো -যারা আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন, কর্মীদের পাশে ছিলেন এবং অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত নন, তারাই মনোনয়ন পাবেন। সেই মানদণ্ডে আমি এক নম্বরে আছি। ইনশাল্লাহ, কুমিল্লা-৬ আসনে মনোনয়ন আমিই পাব।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এবার কুমিল্লা জেলাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী কৌশল সাজাচ্ছে। গত এক দশকে আন্দোলন, গ্রেপ্তার ও রাজনৈতিক চাপের মধ্যেও কুমিল্লা বিএনপি সক্রিয় ছিল। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবার “ত্যাগী ও মাঠে থাকা” নেতাদের অগ্রাধিকার দিতে চাইছে। “কুমিল্লা হচ্ছে বিএনপির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঘাঁটি। এখানকার প্রার্থী নির্ধারণ গোটা জোট রাজনীতির দিক নির্দেশনা দেবে।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেখানেই প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদন করা হবে। এদিকে যারা সবুজ সংকেত পেয়েছেন, তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে “মাঠে নীরবে কাজ চালিয়ে যেতে।”










