০৫:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুমিল্লার মুরাদনগরে পোড়া তেলে শিশু খাদ্য তৈরি, ১ লাখ টাকা জরিমানা কুমিল্লায় কিস্তির চাপ সহ্য করতে না পেরে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা ২০২৬ সালে নতুন ক্যাম্পাসে উদ্বোধন হবে ৪টি হল ও ৪টি অ্যাকাডেমিক ভবন: কুবি উপাচার্য মনোহরগঞ্জে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত দাউদকান্দিতে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, আতঙ্কিত পথচারীরা ও স্কুলগামীরা দাউদকান্দিতে যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান কুমিল্লায় মহাসড়কে গরুবাহী ট্রাক ছিনতাই: ১৯টি গরু ও ২ লাখ টাকা লুট গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে প্রবাসীদের ভূমিকা অতুলনীয় -ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় ভণ্ড রাজারবাগের আস্তানা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

কুমিল্লায় টাকা আত্মাসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী সদস্যসের মামলা

  • তারিখ : ০৮:০১:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অক্টোবর ২০২১
  • 5

মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা।
নারী ইউপি সদস্যসের পাঁচ বছরের সম্মানী ভাতা আত্মাসাতের অভিযোগ উঠেছে এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বাদী হয়ে মঙ্গলবার কুমিল্লা জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য।

এমন ঘটনা কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তর হাওলায়।

অভিযুক্ত আবদুল হান্নান ওরফে হিরু। তিনি মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৯ নং উত্তর হাওলা উইনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

ভুক্তভোগী লাকী মজুমদার । তিনি ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং সংরক্ষিত (বর্তমানে ৭,৮,৯) এর মহিলা সদস্য।

মামলায় ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য লাকী মজুমদার উল্লেখ করেন, গত ২০১৬ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছর অক্টেবর পর্যন্ত মাসিক ৪ হাজার ৪শ টাকা করে মোট ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পাবেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সম্মানী ভাতা তাকে দেয়া হয় নি। বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান ওরফে হিরুকে জানালে তিনি নানা রকম ভয়ভীতি দেখাতেন।

বিষয়টি নিয়ে ইউপি সদস্য লাকি মজুমদার বলেন, উপজেলা থেকে প্রতি মাসে ৩ হাজার ৬শ টাকা সম্মানী ভাতা পাই। তবে গত ৫ বছর আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সম্মানী ভাতা পাইনি। চেয়ারম্যান আমারে ভয়ভীতি দেখাইয়া আমার সম্মানী ভাতা আত্মাসাৎ করছে। কোন কাজে আমাকে ডাকে না। রেজুলেশন হলেও আমি জানি না। কারো জন্মনিবন্ধনে আমার সীল সই থাকলে সেই নিবন্ধন চেয়ারম্যান বাদ করে দেন। আমি একজন নির্বাচিত সদস্য হয়েও চেয়ারম্যানের রোষানলে পড়ে খুব অসহায় অবস্থায় আছি।

পরে বাধ্য হয়ে আমি গত ৫ অক্টোবর কুমিল্লা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত ৬ এর বিচারক মিথিলা জাহান নীপার আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। পরে বিচারক মামলাটি তদন্ত করে আগামী ২ নভেম্বর তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

জেলা গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সত্যজিত বড়ুয়া জানান, এখনো মামলার কাগজপত্র আমার কাছে আসে নি। মামলার কাগজ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সরেজমিনে মনোহরগঞ্জ থানার উত্তর হাওলা ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকার লোকজনের সাথে চেয়ারম্যানের সর্ম্পক ভালো নেই। নাম না প্রকাশ করার শর্তে অন্তত কুড়িজন এলাকাবাসী বলেন, চেয়ারম্যানকে আমরা তার কার্যালয়ে পাই না। তবে যখন পাই ওই সময় কোন কাজে গেলে তিনি ভালো ব্যবহার করেন না।

এছাড়াও এলাকাবাসী আরো জানান, চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরুর বিরুদ্ধে ২০১০ সালে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি চাঁদাবাজির একটি মামলা হয়। পরে ২০১৩ সালে ওই মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামী হন তিনি।

পরে ২০২০ সালের শেষের দিকে মনোহরগঞ্জে দু’ব্যক্তিকে কুপিয়ে গুরতর জখম করে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরু তার লোকজন। এ ঘটনায় আহত খোরশেদ আলম বাদী হয়ে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বিষয়টি নিয়ে মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব কবীর জানান, ২০১৩ সালের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা নেই। তবে গত বছর মারামারির একটি মামলায় চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরুর বিরুদ্ধে একটি গ্রেফতারী পরোয়ানা আছে।

তাহলে তাকে গ্রেফতার করতে না পারার কি কারন থাকতে পারে এমন প্রশ্নে ওসি মাহবুব কবীর বলেন, তিনি এলাকায় থাকেন না। তাই গ্রেফতার করতে পারছি না।

তবে এলাকাবাসীর মতে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরু সব সময় এলাকায় থাকেন। মাঝে মাঝে মোটরবাইক শো-ডাউন করেন। ইউপি অফিসটিকে তিনি এখন ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন। প্রাইভেটকার ও মোটর বাইক নিয়ে বিভিন্ন লোকজন আসেন। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে আড্ডা চলে।

ইউপি সদস্যসের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরু বলেন, ওই নারী সদস্য অফিসে আসে না। যে কারনে তার সম্মানী ভাতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি কি পাঁচ বছর ধরেই অফিসে আসেন না এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরু বলেন, প্রথম কয়েক মাস এসেছিলো। পরে আর আসেন নি। রেজুলেশনে তার নাম থাকে না, জন্ম নিবন্ধনের সুপারিশ করলে আপনি তা বাদ করে দেন এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়।

error: Content is protected !!

কুমিল্লায় টাকা আত্মাসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী সদস্যসের মামলা

তারিখ : ০৮:০১:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অক্টোবর ২০২১

মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা।
নারী ইউপি সদস্যসের পাঁচ বছরের সম্মানী ভাতা আত্মাসাতের অভিযোগ উঠেছে এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বাদী হয়ে মঙ্গলবার কুমিল্লা জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য।

এমন ঘটনা কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তর হাওলায়।

অভিযুক্ত আবদুল হান্নান ওরফে হিরু। তিনি মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৯ নং উত্তর হাওলা উইনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

ভুক্তভোগী লাকী মজুমদার । তিনি ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং সংরক্ষিত (বর্তমানে ৭,৮,৯) এর মহিলা সদস্য।

মামলায় ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য লাকী মজুমদার উল্লেখ করেন, গত ২০১৬ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছর অক্টেবর পর্যন্ত মাসিক ৪ হাজার ৪শ টাকা করে মোট ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পাবেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সম্মানী ভাতা তাকে দেয়া হয় নি। বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান ওরফে হিরুকে জানালে তিনি নানা রকম ভয়ভীতি দেখাতেন।

বিষয়টি নিয়ে ইউপি সদস্য লাকি মজুমদার বলেন, উপজেলা থেকে প্রতি মাসে ৩ হাজার ৬শ টাকা সম্মানী ভাতা পাই। তবে গত ৫ বছর আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সম্মানী ভাতা পাইনি। চেয়ারম্যান আমারে ভয়ভীতি দেখাইয়া আমার সম্মানী ভাতা আত্মাসাৎ করছে। কোন কাজে আমাকে ডাকে না। রেজুলেশন হলেও আমি জানি না। কারো জন্মনিবন্ধনে আমার সীল সই থাকলে সেই নিবন্ধন চেয়ারম্যান বাদ করে দেন। আমি একজন নির্বাচিত সদস্য হয়েও চেয়ারম্যানের রোষানলে পড়ে খুব অসহায় অবস্থায় আছি।

পরে বাধ্য হয়ে আমি গত ৫ অক্টোবর কুমিল্লা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত ৬ এর বিচারক মিথিলা জাহান নীপার আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। পরে বিচারক মামলাটি তদন্ত করে আগামী ২ নভেম্বর তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

জেলা গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সত্যজিত বড়ুয়া জানান, এখনো মামলার কাগজপত্র আমার কাছে আসে নি। মামলার কাগজ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে সরেজমিনে মনোহরগঞ্জ থানার উত্তর হাওলা ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকার লোকজনের সাথে চেয়ারম্যানের সর্ম্পক ভালো নেই। নাম না প্রকাশ করার শর্তে অন্তত কুড়িজন এলাকাবাসী বলেন, চেয়ারম্যানকে আমরা তার কার্যালয়ে পাই না। তবে যখন পাই ওই সময় কোন কাজে গেলে তিনি ভালো ব্যবহার করেন না।

এছাড়াও এলাকাবাসী আরো জানান, চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরুর বিরুদ্ধে ২০১০ সালে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি চাঁদাবাজির একটি মামলা হয়। পরে ২০১৩ সালে ওই মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামী হন তিনি।

পরে ২০২০ সালের শেষের দিকে মনোহরগঞ্জে দু’ব্যক্তিকে কুপিয়ে গুরতর জখম করে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরু তার লোকজন। এ ঘটনায় আহত খোরশেদ আলম বাদী হয়ে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বিষয়টি নিয়ে মনোহরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব কবীর জানান, ২০১৩ সালের মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা নেই। তবে গত বছর মারামারির একটি মামলায় চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরুর বিরুদ্ধে একটি গ্রেফতারী পরোয়ানা আছে।

তাহলে তাকে গ্রেফতার করতে না পারার কি কারন থাকতে পারে এমন প্রশ্নে ওসি মাহবুব কবীর বলেন, তিনি এলাকায় থাকেন না। তাই গ্রেফতার করতে পারছি না।

তবে এলাকাবাসীর মতে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরু সব সময় এলাকায় থাকেন। মাঝে মাঝে মোটরবাইক শো-ডাউন করেন। ইউপি অফিসটিকে তিনি এখন ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন। প্রাইভেটকার ও মোটর বাইক নিয়ে বিভিন্ন লোকজন আসেন। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে আড্ডা চলে।

ইউপি সদস্যসের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরু বলেন, ওই নারী সদস্য অফিসে আসে না। যে কারনে তার সম্মানী ভাতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি কি পাঁচ বছর ধরেই অফিসে আসেন না এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান হিরু বলেন, প্রথম কয়েক মাস এসেছিলো। পরে আর আসেন নি। রেজুলেশনে তার নাম থাকে না, জন্ম নিবন্ধনের সুপারিশ করলে আপনি তা বাদ করে দেন এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়।