ভারত সীমান্তবর্তী গ্রামে প্রথমবার আড়াইশ বিঘায় হাসছে আউশ ধান

কুমিল্লা নিউজ ডেস্ক।।
ভারত সীমান্তবর্তী কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার একটি গ্রাম পাহাড়পুরের আনন্দপুর। গ্রামের আড়াইশ বিঘা জমিতে এতদিন দুই ফসল উৎপাদন হতো। প্রথমবারের মতো এসব জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছে। প্রথমবারই আশানুরূপ ফলনে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ফসল। প্রতিটি ক্ষেতে পাকা-আধা পাকা ধান রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে পরিপক্ক হয়ে যাবে সব ক্ষেতের ধান। পরে এসব ধান কাটবেন কৃষকরা।

কৃষকদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিতে শুক্রবার বিকালে মাঠ পরিদর্শন করেছেন কৃষি কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক। এখন থেকে প্রতি বছর জমিগুলোতে আউশ ধান লাগানোর কথা জানান তারা।

কৃষকরা বলছেন, এতদিন এসব জমিতে বছরে দুই ফসল উৎপাদন হতো। এখন থেকে আউশ, আমন, সরিষা-তিল ও বোরোর আবাদ করবেন তারা। বছরে ঘরে তুলবেন চার ফসল। এতে লাভবান হবেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আনন্দপুর বেলবাড়ি এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় শুক্রবার মাঠ দিবসের আয়োজন করেছে ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয়। মাঠ দিবসের আগে আউশের জমি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। অতিরিক্ত কৃষি অফিসার বানিন রায় আউশের মাঠ ঘুরে দেখান তাদের। কৃষকদের পক্ষে আনন্দপুরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভারত থেকে আসা পাগলী খালের ওপর স্লুইসগেট ও খালের পাড়ঘেঁষে উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য কর্মকর্তাদের কাছে রাস্তার দাবি জানান কৃষি অফিসার বানিন রায়। এটি বাস্তবায়িত হলে আড়াইশ বিঘা মাঠের ৫০ বিঘায় বছরব্যাপী সবজি চাষ সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘এত বছর আড়াইশ বিঘা জমিতে বছরে দুবার ফসল হতো। এখন থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় কৃষকরা এসব জমিতে চারটি ফসল পাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে এই এলাকার জন্য এই চার ফসল সুফল বয়ে আনবে।’

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রথমবারের মতো এসব জমিতে আউশ ধান হয়েছে। পুরো মাঠ সোনালি ফসলে রূপ নিয়েছে। এটি সবার জন্য আনন্দের খবর। আড়াইশ বিঘা জমিতে চার ফসল হলে তা শুধু বুড়িচং নয়, কুমিল্লার অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আড়াইশ বিঘা জমিতে চার ফসল করার জন্য সহযোগিতা চাইলে জেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা ব্রি-আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ইতোপূর্বে ৪০ জন কৃষককে ব্রি ধান-৪৮ ও ব্রি ধান-৯৮ জাতের বীজ সহায়তা, ব্রি-হাইব্রিড ধান-৭ জাতের দুটি প্রদর্শনী, ৬০ বিঘা জমির জন্য ২০ কেজি করে ইউরিয়া সার ও ৫৪ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রম তদারকি করেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাহেদ হোসেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবছর বুড়িচং উপজেলায় ২১০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ বেড়েছে। পতিত জমিতে আউশ আবাদের নানা কার্যক্রম গ্রহণের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গ্রামের কৃষকদের কাছে ছড়িয়ে গেছে ব্রি ধান-৪৮, ব্রি ধান-৮২, ব্রি ধান-৯৮ ও বিনা ধান-২১-এর বীজ। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব ধানের জাতগুলোতে বিঘাপ্রতি ১৬-১৭ মণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

ওই এলাকার কৃষকরা বলেন, ‘প্রথমবার একবিঘা জমিতে আউশ ধান করেছি। আগে প্রতি বছর আমন ও বোরো চাষ করতাম। এখন থেকে তিল ও সরিষা চাষ করবো। আউশের মাঠ ভরে গেছে। খুবই আনন্দ লাগছে। আশা করছি, বাম্পার ফলন হবে। তবে আমাদের ফলন আরও বেশি হবে যদি সেচ ব্যবস্থা ভালো হয়। সেচের জন্য পাগলী খালে একটা স্লুইসগেট হলে ভালো হতো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও ডিসি এসেছেন। বলেছেন একটা ব্যবস্থা করবেন। আমরাও চার ফসল চাষ অব্যাহত রাখবো।’

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page