মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে অর্থমন্ত্রীর আবেদন বাতিল; কুমিল্লায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক।।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম লেখাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুজন মন্ত্রী গত বছর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) আবেদন করেছিলেন। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল যে আবেদন জামুকার কাছে করেছিলেন, যাচাই-বাছাইয়ের পর তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সরকারী দলের একজন মন্ত্রী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আবেদন করা ও তা বাতিল হয়ে যাওয়া নিয়ে কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্ঠি হয়েছে।

মঙ্গলবার জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পাতায় সংবাদটি ছাপা হওয়ার পর বিষয়টি সকলের নজড়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন মহল বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।

নিয়ম অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই ও তালিকা প্রণয়নের কাজটি জামুকার মাধ্যমে হয়। গত বছরের ১৫ জুন জামুকার ৭৫তম সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁর জন্ম ১৯৬২ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি। সে হিসাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় তাঁর বয়স ১০ বছরের কম ছিল। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ন্যূনতম বয়স কত হবে, তা নির্ধারণ করা আছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কারও বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস না হলে তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে না।

রেজাউল করিমকে কীভাবে এ স্বীকৃতি দেওয়া হলো, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠার পর বিষয়টি নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামুকা। গত ৮ ফেব্রæয়ারি জামুকার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে কমিটি তাঁর সঙ্গে কথা বলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বর্তমানে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন। দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে ২০ হাজার টাকা, পাঁচ হাজার টাকা বিজয় দিবসের ভাতা এবং দুই হাজার টাকা বাংলা নববর্ষ ভাতা পান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বছরে একজন সব মিলিয়ে ভাতা পান প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

জামুকা সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য যে আবেদনটি করেন, তার ওপর গত বছরের অক্টোবরে জামুকার ৭৭তম বৈঠকে পর্যালোচনা হয়। আবেদনে বলা হয়, তিনি ১৯৭১ সালে সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থান করে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ আবেদনের সঙ্গে তিনজন সহযোদ্ধার প্রত্যয়নও যুক্ত করা হয়। ওই বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের আবেদনটি জামুকার বিশেষ উপকমিটিতে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। আবেদনটি পর্যালোচনা করে উপকমিটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে তিনি ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণিত নন’। উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রীর জন্ম ১৯৪৭ সালে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা ইউনিয়নে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে আবেদনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ দুজন সাংসদও রয়েছেন। তাঁরা হলেন গোপালগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এবং ঢাকা-১১ আসনের সাংসদ এ কে এম রহমতুল্লাহ। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া তাঁর প্রয়াত বাবা সোহরাব হোসেনের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে আবেদন করেছেন। এই তিনজনের মধ্যে ফারুক খানের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করতে গত বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে জামুকার ৭২তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়। তবে তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখন জামুকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে ফারুক খানের বিষয়ে সেনাসদরের মতামত নেওয়া হবে। গত ৮ ফেব্রæয়ারি জামুকার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

উপকমিটির এ পর্যবেক্ষণের বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে গত রাতে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে প্রথম আলো। তবে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দুই মন্ত্রী ও সাংসদের আবেদনের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (পদাধিকারবলে জামুকার চেয়ারম্যানও) প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্তির বিষয়ে জামুকার সুপারিশের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন অনেকে। এ জন্য তাঁদের বিষয়ে আরেকটু যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর অর্থমন্ত্রীর আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উপকমিটি যাচাই-বাছাই করে যা পেয়েছে, তাই বলেছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন, এটা তারা আমাকে জানিয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিবের বাবার বিষয়ে দুবার আবেদন করলেও মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সত্যতা না পাওয়ায় তাঁকে গেজেটভুক্ত করা হয়নি। আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।’

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য সাংসদ এ কে এম রহমতুল্লাহর আবেদনটি গত বছরের আগস্টে জামুকার ৭৬তম বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। জামুকা নথিপত্র যাচাই করে দেখেছে, আবেদনে সাংসদ নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করার জন্য লাল মুক্তিবার্তার যে নম্বর দিয়েছেন, তা সঠিক নয়। তবে জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক ওই বৈঠকের কার্যপত্রে মন্তব্য করেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ কে এম রহমতুল্লাহর ‘স্বীকৃতি প্রাপ্য’। পরে তাঁর আবেদনটি জামুকার বিশেষ উপকমিটিতে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। উপকমিটিতে এ নিয়ে নতুন করে এখনো আলোচনা হয়নি।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page