০১:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা ব্যর্থ ইউনূস সরকার; কুমিল্লায় ইসলামী ৮ দলের নেতারা কুমিল্লা-৪ আসনে এনসিপির মনোনয়ন ফরম কিনলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ কুমিল্লার নতুন জেলা প্রশাসক মু. রেজা হাসান দেবিদ্বারে লকডাউন কর্মসূচির প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ কুমিল্লায় মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা হাজী ইয়াছিনের পক্ষে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি; ১১তম দিনে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান বুড়িচংয়ে কোরপাই থেকে নাজিরা বাজার পর্যন্ত টহল-চেকপোস্টে তল্লাশি জোরদার কুমিল্লায় গত ২৪ ঘণ্টায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ২৬ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার কুমিল্লায় নাশকতার অভিযোগে আ.লীগ নেতা গ্রেফতার কুমিল্লা–৬ আসনে টানা কর্মসূচির দশম দিনে হাজী ইয়াছিনের পক্ষে গণস্বাক্ষর অভিযান

হুইলচেয়ারে করে স্বপ্ন পূরণের পথে শাহনাজ এবং নাহিদ

  • তারিখ : ০৯:০০:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১
  • 47

কুবি প্রতিনিধি।।
বাইক এক্সিডেন্টে ভেঙে গেছে একটি পা, স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটার সক্ষমতা নেই নাহিদের। পরিবারের আশা ছেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একদিন বড় অফিসার হবে। অন্যদিকে ছোটবেলা থেকেই পায়ে হাঁটার সৌভাগ্য হয়নি শাহনাজের। চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হুইলচেয়ার৷ মেয়ের জন্য নিজেকে উজাড় করেছেন মা নূরজাহান বেগম।

বলছিলাম হুইলচেয়ারে করে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা আমিন উল্লাহ নাহিদ এবং শাহনাজের কথা। স্বপ্ন পূরণে প্রতিবন্ধকাতা যে কোনো বাধা হতে পারে না তারা দুজনই সেটার প্রমাণ।

কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ। রোববার (২৪ অক্টোবর) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নিতে কুমিল্লা ইপিজেড থেকে আসেন থেমে না যাওয়া অদম্য নাহিদ। তাকে পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছে দেন দায়িত্বরত বিএনসিসি সদস্যরা৷

অন্যদিকে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার মেয়ে শাহনাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে পরীক্ষা দেন। তিনি আমেনা বেগম গার্লস স্কুল থেকে ৪.৪৪ এবং লালমাই সরকারী কলেজ থেকে ৪.৭৫ পেয়ে কৃতকার্য হয়। সকালে হুইলচেয়ারে বসে মাকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেন শাহনাজ। পরে রোভার সদস্যদের সহয়তায় কক্ষে যান তিনি।

এদিকে নাহিদ এবং শাহনাজ যখন পরীক্ষা দিচ্ছেন তখন বাইরে অপেক্ষা করছিলেন নাহিদের ভাই এবং শাহনাজের মা নূরজাহান। নাহিদের ভাই বলেন, ‘আমার ভাই খুবই পরিশ্রমী৷ পড়ালেখার প্রতি তার প্রবল ইচ্ছা। বাইক এক্সিডেন্টে তার একটি পা ভেঙে গেলেও আমার ভাই থেমে থাকেনি, কখনো হাল ছাড়ে নি। স্বপ্ন পূরণে নিজের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে সবসময়। ভাইকে নিয়ে আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনের গল্পটাও সংগ্রামের।’

আজকের দিনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখে না এমন ছেলে–মেয়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রত্যেকের পরিবারও এমন স্বপ্ন দেখে, আমার ছেলে-আমার মেয়ে নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক, পরিবারের ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করুক। নাহিদ এবং শাহনাজও স্বপ্ন দেখেন ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।

কথা হয় অদম্য নাহিদ এবং শাহনাজের সাথে৷ নাহিদ জানায়, ‘সবার মতো আমারও স্বপ্ন আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার৷ ভালো কোনো সাবজেক্ট নিয়ে ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো এটাই আমি প্রত্যাশা করি৷ আর আমার এতটুকু পর্যন্ত আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার পরিবারের। যদি পরিবারের সহযোগিতা না পেতাম তাহলে হয়ত আমি হাল ছেড়ে দিতাম সবার কাছে আমার জন্য দোয়া কামনা করছি৷’

শাজনাজ বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই হাটঁতে পারি না। আমার স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। আমি পড়াশুনা করতে চাই। পড়াশুনা করে আমার মতো পিছিয়ে থাকা শারীরিকভাবে অপূর্ণাঙ্গদের নিয়ে কাজ করতে চাই। আমার এতদূর আসার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মায়ের। আমার এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা আমার মা। মায়ের প্রবল প্রচেষ্টায় আমি এতদূর আসতে পেরেছি।’

শাহনাজের মা নূরজাহান বলেন, ‘আমার মেয়ে শারীরিকভাবে সক্ষম না হলেও ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় সে খুবই মনোযোগী। প্রবল ইচ্ছায় সে এতদূর আসতে পেরেছে। পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ দেখে আমি তাকে থামিয় দেয় নি। আমি সবসময় চাই আমার মেয়ে ভালো কিছু করুক।’

কথা শেষ করেই হুইল চেয়ার ঠেলে এগিয়ে চললেন শাহনাজ-নাহিদ। আশপাশের সবাই কিছু সময়ের জন্য চেয়ে থাকেন তাদের দিকে। হয়তো তারা বলছিলেন, ‘তোমরা থেমো না, এগিয়ে যাও।’

উল্লেখ্য, গুচ্ছ পদ্ধতির অধীনে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার (২৪ অক্টোবর) ২, ৩৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি একাডেমিক ভবনের ৫৪টি কক্ষে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়৷ আগামী পহেলা নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে গুচ্ছের ‘সি’ ইউনিট তথা বাণিজ্য বিভাগের পরীক্ষা।

error: Content is protected !!

হুইলচেয়ারে করে স্বপ্ন পূরণের পথে শাহনাজ এবং নাহিদ

তারিখ : ০৯:০০:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১

কুবি প্রতিনিধি।।
বাইক এক্সিডেন্টে ভেঙে গেছে একটি পা, স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটার সক্ষমতা নেই নাহিদের। পরিবারের আশা ছেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একদিন বড় অফিসার হবে। অন্যদিকে ছোটবেলা থেকেই পায়ে হাঁটার সৌভাগ্য হয়নি শাহনাজের। চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হুইলচেয়ার৷ মেয়ের জন্য নিজেকে উজাড় করেছেন মা নূরজাহান বেগম।

বলছিলাম হুইলচেয়ারে করে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা আমিন উল্লাহ নাহিদ এবং শাহনাজের কথা। স্বপ্ন পূরণে প্রতিবন্ধকাতা যে কোনো বাধা হতে পারে না তারা দুজনই সেটার প্রমাণ।

কুমিল্লা ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ। রোববার (২৪ অক্টোবর) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নিতে কুমিল্লা ইপিজেড থেকে আসেন থেমে না যাওয়া অদম্য নাহিদ। তাকে পরীক্ষা কক্ষে পৌঁছে দেন দায়িত্বরত বিএনসিসি সদস্যরা৷

অন্যদিকে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার মেয়ে শাহনাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে পরীক্ষা দেন। তিনি আমেনা বেগম গার্লস স্কুল থেকে ৪.৪৪ এবং লালমাই সরকারী কলেজ থেকে ৪.৭৫ পেয়ে কৃতকার্য হয়। সকালে হুইলচেয়ারে বসে মাকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেন শাহনাজ। পরে রোভার সদস্যদের সহয়তায় কক্ষে যান তিনি।

এদিকে নাহিদ এবং শাহনাজ যখন পরীক্ষা দিচ্ছেন তখন বাইরে অপেক্ষা করছিলেন নাহিদের ভাই এবং শাহনাজের মা নূরজাহান। নাহিদের ভাই বলেন, ‘আমার ভাই খুবই পরিশ্রমী৷ পড়ালেখার প্রতি তার প্রবল ইচ্ছা। বাইক এক্সিডেন্টে তার একটি পা ভেঙে গেলেও আমার ভাই থেমে থাকেনি, কখনো হাল ছাড়ে নি। স্বপ্ন পূরণে নিজের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে সবসময়। ভাইকে নিয়ে আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনের গল্পটাও সংগ্রামের।’

আজকের দিনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখে না এমন ছেলে–মেয়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রত্যেকের পরিবারও এমন স্বপ্ন দেখে, আমার ছেলে-আমার মেয়ে নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক, পরিবারের ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করুক। নাহিদ এবং শাহনাজও স্বপ্ন দেখেন ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।

কথা হয় অদম্য নাহিদ এবং শাহনাজের সাথে৷ নাহিদ জানায়, ‘সবার মতো আমারও স্বপ্ন আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার৷ ভালো কোনো সাবজেক্ট নিয়ে ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো এটাই আমি প্রত্যাশা করি৷ আর আমার এতটুকু পর্যন্ত আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার পরিবারের। যদি পরিবারের সহযোগিতা না পেতাম তাহলে হয়ত আমি হাল ছেড়ে দিতাম সবার কাছে আমার জন্য দোয়া কামনা করছি৷’

শাজনাজ বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই হাটঁতে পারি না। আমার স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। আমি পড়াশুনা করতে চাই। পড়াশুনা করে আমার মতো পিছিয়ে থাকা শারীরিকভাবে অপূর্ণাঙ্গদের নিয়ে কাজ করতে চাই। আমার এতদূর আসার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মায়ের। আমার এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা আমার মা। মায়ের প্রবল প্রচেষ্টায় আমি এতদূর আসতে পেরেছি।’

শাহনাজের মা নূরজাহান বলেন, ‘আমার মেয়ে শারীরিকভাবে সক্ষম না হলেও ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় সে খুবই মনোযোগী। প্রবল ইচ্ছায় সে এতদূর আসতে পেরেছে। পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ দেখে আমি তাকে থামিয় দেয় নি। আমি সবসময় চাই আমার মেয়ে ভালো কিছু করুক।’

কথা শেষ করেই হুইল চেয়ার ঠেলে এগিয়ে চললেন শাহনাজ-নাহিদ। আশপাশের সবাই কিছু সময়ের জন্য চেয়ে থাকেন তাদের দিকে। হয়তো তারা বলছিলেন, ‘তোমরা থেমো না, এগিয়ে যাও।’

উল্লেখ্য, গুচ্ছ পদ্ধতির অধীনে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে রোববার (২৪ অক্টোবর) ২, ৩৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি একাডেমিক ভবনের ৫৪টি কক্ষে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়৷ আগামী পহেলা নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে গুচ্ছের ‘সি’ ইউনিট তথা বাণিজ্য বিভাগের পরীক্ষা।