০৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে বুড়িচংয়ে সনদ প্রদান ও চেক বিতরণ কুমিল্লায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপন কুমিল্লায় আইনজীবী আজাদ হত্যার চার্জশিটে আ’লীগ-বিএনপির ৩৫ জন নেতাদের নাম রেজিস্টার অফিস স্থাপনের মধ্য দিয়ে ময়নামতি উপজেলা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু — ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন কুমিল্লায় র‍্যাব-১১ এর অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, গাঁজা ও স্কাফসহ ৩ জন গ্রেফতার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পুকুরে বিষপ্রয়োগ করে ব্যবসায়ির মাছ নিধন কুমিল্লায় প্রেমিককে ৪ টুকরো করে হত্যা; দুই দিন পর মিলাদ ও খিচুড়ি বিতরণ বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে অভিভাবক সমাবেশ কুমিল্লা নগরীর কাঁটাবিলে জোরপূর্বক প্রবাসীর জমি দখলের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন কুমিল্লার উন্নয়ন ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে সদর আসনের প্রার্থী রিয়াদের সংবাদ সম্মেলন

কুমিল্লায় টনসিল অপারেশনে গিয়ে কিশোরীর মৃত্যু; ৩ লাখ টাকায় ধামাচাপা

  • তারিখ : ০৮:৫৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
  • 6

জহিরুল হক বাবু।।
নিহত ৭ম শ্রেনীতে পড়ুয়া মীমের জীবনের মূল্য তিন লাখ টাকায় ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া কৃষ্ণপুর গ্রামে নিহত মীমের বাড়িতে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা করা হয়। এই সময় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন, কুমিল্লা বাগিচাগাও এলাকার চিকিৎসক জহিরুল হকের আত্নীয় সাবেক পুলিশের উপ পরিদর্শক মুসলিমসহ স্থানীয় কয়েকজন মানুষের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগী পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহত মীমের এক আত্নীয় বলেন, ভাই আমরা গরিব মানুষ। মীমের মৃত্যুর পর আমরা চেয়েছিলাম থানায় মামলা করতে। কিন্তু পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। আমরা তাদের সাথে আইন বলেন, ক্ষমতা বলেন কিছু দিয়েই পারমু না। তাদের কথায় আমরা বাধ্য হয়েছি। পরে সোমবার বিকেলে চেয়ারম্যান সাহেব, মুসলিম দারোগাসহ কয়েকজন বসে মীমের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দিছে।

এই বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোমবার বিকেলে ডাক্তার জহিরুল হকের পক্ষে শহরের মুসলিম দারোগাসহ স্থানীয় কয়েকজন মিলে বসে নিহত মীমের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।

বুধবার রাতে ওই চিকিৎসক জহিরুল হক বলেন, দেখেন তারা আমার এলাকার লোক। অসহায় পরিবার। মীমের বাবার অবস্থা খুব একটা ভাল না। আর আমরা ইচ্ছে করে এমন করিনি। এইটা একটা দূর্ঘটনা। আমি ওই সময় অপারেশন থিয়েটারেও ছিলাম না। অ্যানেসথেসিয়া জুনিয়র কনসালটেন্ট মাঈনুদ্দিন মিয়াজী অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পরপরই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। এখন আমরা মানবিক দিক চিন্তা করে তাদের পরিবারিকে আর্থিক সহায়তা করেছি। আমি একা করি নাই। আমার সাথে অ্যানেসথেসিয়ার মাঈনুদ্দিন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সহায়তা করেছে। আর যেহেতু অ্যানেসথেসিয়ার বিষয়ের সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারণা নাই সেহেতু কেন এমন হয়েছে আমি সেইটা বলতে পারবো না।

এইদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় কোভিডের সময় অস্থায়ীভাবে মাঈনুদ্দিন মিয়াজী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করে। পরে গেল বছর ডিসেম্বর মাসে বদলি জনিত নোয়াখালী সদর হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে যোগদান করে।

তিনি বলেন, জহির স্যার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার পর আমি অ্যানেসথেসিয়া দেয়া শুরু করি। ওনি না থাকলে তো আমি অ্যানেসথেসিয়া দিবোই না। তবে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার রোগীকে তিনটি ঔষধ দেয়া লাগে। ফেন্টানাইল নামে একটা ঔষধটা দেয়ার পর রোগির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয়। আমি রোগির ওজন ৪৮ কেজি অনুযায়ী ৬০ মাইক্রোগ্রাম ফেন্টানাইল দেয়। তারপর হঠাৎ তার অবস্থা অবনতি হতে থাকে। প্রেসার কমে যায়। অক্সিজেন লেভেল ভাল ছিল। প্রেসার না উঠাতে আমরা তাকে সদর হাসপাতালে পাঠায়। তিন লাখ টাকা দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

মিমের মৃত্যুর পরের দিন কুমিল্লা সিভিল সার্জন এই ঘটনার অভিযোগের সত্যতা জানতে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট জামশেদ আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য আদেশ দেয়।

এই বিষয়ে কুমিল্লা জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন তদন্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগীর পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়েছে এই বিষয়টি আমার জানা নাই। অ্যানেসথেসিয়ার মাঈনুদ্দিন মিয়াজী নোয়াখালী থেকে এসে প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতে পারে কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি দায়িত্ব পালনের পর কেউ চাইলে প্রাইভেট চেম্বার করতে পারে।

উল্লেখ্য যে, গলায় টনসিলের অপারেশনের জন্য রোববার বিকেলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে মীম নগরীর ঝাউতলা এলাকার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন জহিরুল হকের কাছে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মীমকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের হেলথ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে। অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পরপরই অবস্থার অবনতি হয় মীমের। চিকিৎসক জহিরুল জানান, মীমের হার্ট ব্লক হয়ে গেছে। পরে দ্রুত সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় মীম।

কুমিল্লায় টনসিল অপারেশনে গিয়ে কিশোরীর মৃত্যু; ৩ লাখ টাকায় ধামাচাপা

তারিখ : ০৮:৫৯:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

জহিরুল হক বাবু।।
নিহত ৭ম শ্রেনীতে পড়ুয়া মীমের জীবনের মূল্য তিন লাখ টাকায় ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া কৃষ্ণপুর গ্রামে নিহত মীমের বাড়িতে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা করা হয়। এই সময় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন, কুমিল্লা বাগিচাগাও এলাকার চিকিৎসক জহিরুল হকের আত্নীয় সাবেক পুলিশের উপ পরিদর্শক মুসলিমসহ স্থানীয় কয়েকজন মানুষের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগী পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহত মীমের এক আত্নীয় বলেন, ভাই আমরা গরিব মানুষ। মীমের মৃত্যুর পর আমরা চেয়েছিলাম থানায় মামলা করতে। কিন্তু পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। আমরা তাদের সাথে আইন বলেন, ক্ষমতা বলেন কিছু দিয়েই পারমু না। তাদের কথায় আমরা বাধ্য হয়েছি। পরে সোমবার বিকেলে চেয়ারম্যান সাহেব, মুসলিম দারোগাসহ কয়েকজন বসে মীমের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দিছে।

এই বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সোমবার বিকেলে ডাক্তার জহিরুল হকের পক্ষে শহরের মুসলিম দারোগাসহ স্থানীয় কয়েকজন মিলে বসে নিহত মীমের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।

বুধবার রাতে ওই চিকিৎসক জহিরুল হক বলেন, দেখেন তারা আমার এলাকার লোক। অসহায় পরিবার। মীমের বাবার অবস্থা খুব একটা ভাল না। আর আমরা ইচ্ছে করে এমন করিনি। এইটা একটা দূর্ঘটনা। আমি ওই সময় অপারেশন থিয়েটারেও ছিলাম না। অ্যানেসথেসিয়া জুনিয়র কনসালটেন্ট মাঈনুদ্দিন মিয়াজী অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পরপরই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। এখন আমরা মানবিক দিক চিন্তা করে তাদের পরিবারিকে আর্থিক সহায়তা করেছি। আমি একা করি নাই। আমার সাথে অ্যানেসথেসিয়ার মাঈনুদ্দিন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সহায়তা করেছে। আর যেহেতু অ্যানেসথেসিয়ার বিষয়ের সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারণা নাই সেহেতু কেন এমন হয়েছে আমি সেইটা বলতে পারবো না।

এইদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় কোভিডের সময় অস্থায়ীভাবে মাঈনুদ্দিন মিয়াজী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগদান করে। পরে গেল বছর ডিসেম্বর মাসে বদলি জনিত নোয়াখালী সদর হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে যোগদান করে।

তিনি বলেন, জহির স্যার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকার পর আমি অ্যানেসথেসিয়া দেয়া শুরু করি। ওনি না থাকলে তো আমি অ্যানেসথেসিয়া দিবোই না। তবে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার রোগীকে তিনটি ঔষধ দেয়া লাগে। ফেন্টানাইল নামে একটা ঔষধটা দেয়ার পর রোগির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয়। আমি রোগির ওজন ৪৮ কেজি অনুযায়ী ৬০ মাইক্রোগ্রাম ফেন্টানাইল দেয়। তারপর হঠাৎ তার অবস্থা অবনতি হতে থাকে। প্রেসার কমে যায়। অক্সিজেন লেভেল ভাল ছিল। প্রেসার না উঠাতে আমরা তাকে সদর হাসপাতালে পাঠায়। তিন লাখ টাকা দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

মিমের মৃত্যুর পরের দিন কুমিল্লা সিভিল সার্জন এই ঘটনার অভিযোগের সত্যতা জানতে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট জামশেদ আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য আদেশ দেয়।

এই বিষয়ে কুমিল্লা জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন তদন্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগীর পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেয়া হয়েছে এই বিষয়টি আমার জানা নাই। অ্যানেসথেসিয়ার মাঈনুদ্দিন মিয়াজী নোয়াখালী থেকে এসে প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতে পারে কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি দায়িত্ব পালনের পর কেউ চাইলে প্রাইভেট চেম্বার করতে পারে।

উল্লেখ্য যে, গলায় টনসিলের অপারেশনের জন্য রোববার বিকেলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে মীম নগরীর ঝাউতলা এলাকার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন জহিরুল হকের কাছে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মীমকে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের হেলথ অ্যান্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে। অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পরপরই অবস্থার অবনতি হয় মীমের। চিকিৎসক জহিরুল জানান, মীমের হার্ট ব্লক হয়ে গেছে। পরে দ্রুত সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায় মীম।