০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুমিল্লার মা–মেয়ে হত্যাকাণ্ড; প্রশ্নের ভিতরে কিছু প্রশ্ন! কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্লিনিং ক্যাম্পেইন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হালচাষের ট্রাক্টর উল্টে কিশোর নিহত কুমিল্লায় ধর্ষণের বাধা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ও মাকে খুন; মূলহোতা মোবারক গ্রেফতার পাশাপাশি দাফন করা হলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেয়ে ও তার মাকে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ফকির বাজার আনন্দ আইডিয়া ইসলামিক স্কুলে মিলাদ ও পুরস্কার বিতরণ কুমিল্লার দেবিদ্বারে মাদক কেলেঙ্কারিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বহিষ্কার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তার মা হত্যায় ক্লাস স্থগিত ঘোষণা কুমিল্লায় মা-মেয়ে খুন, সিসিটিভি ফুটেজে রহস্যজনক ব্যক্তির প্রবেশ-প্রস্থান ব্রাহ্মণপাড়ায় বিশুদ্ধ পানির নামে অস্বাস্থ্যকর পানি বিক্রি, ব্যবসায়ীকে জরিমানা

কুমিল্লার মা–মেয়ে হত্যাকাণ্ড; প্রশ্নের ভিতরে কিছু প্রশ্ন!

  • তারিখ : ১০:২২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 1057

কুমিল্লায় মা তাহমিনা বেগম ফাতেমা ও মেয়ে সুমাইয়া আফরিন রিনথির হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, আসামি মোবারক হোসেন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ভিকটিমের বাসায় প্রবেশ করেন। ১১টা ২৩ মিনিটে বের হয়ে ১১টা ৩৪ মিনিটে পুনরায় ফিরে এসে প্রথমে মাকে, পরে মেয়েকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন এবং মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান।

কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রাত ২টা ৩০ মিনিটেই তারা পুলিশকে অবগত করেছে। এই টাইমলাইনের বিশাল অমিল পুরো ঘটনাকে রহস্যাবৃত করে তুলছে।

শারীরিক ও বাস্তব প্রশ্ন
একজন প্রাপ্তবয়স্কা ও সুঠাম দেহের নারীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করতে যথেষ্ট সময় লাগে। এ সময় প্রবল প্রতিরোধ হওয়ার কথা, আর হত্যাকারীর শরীরে আঁচড় বা আঘাতের চিহ্ন থাকার সম্ভাবনাও প্রবল। অথচ পুলিশের বয়ানে এসবের কোনো উল্লেখ নেই।

তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়—একসাথে দুইজনকে একই কায়দায় হত্যা করা কি বাস্তবসম্মত? প্রথমজনের হত্যার পর দ্বিতীয়জন কীভাবে চুপচাপ একই পরিণতির শিকার হলো?

টাইমলাইনের অসঙ্গতি
পরিবারের দাবি, রাত ২টা ৩০ মিনিটেই তারা পুলিশকে খবর দিয়েছে। অথচ পুলিশের বয়ান অনুযায়ী সকাল ১১টা ৩৪ মিনিটের পরপরই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

এখানে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে—
দুই ভাই এত রাতে একসাথে বাড়িতে এলেন কেন?

এর আগে তারা কোথায় ছিলেন?

তারা হত্যার আগেই না পরে লাশ দেখলেন?

এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।

চুরি ও উদ্ধার রহস্য
এই ঘটনায় শুধুমাত্র মোবাইল ও ল্যাপটপ চুরি হয়েছে, কিন্তু নগদ অর্থ বা গহনা অক্ষত রয়েছে।

অন্যদিকে, উদ্ধার দেখানো ডিভাইসগুলো সত্যিই ভিকটিমের কি না—IMEI ও সিরিয়াল নম্বর যাচাই ছাড়া তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

সামাজিক চাপ ও দ্রুত পদক্ষেপ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুলিশকে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল আসামি গ্রেফতারের জন্য। এতে পুলিশের ওপর তীব্র চাপ তৈরি হয়।

ফলে প্রশ্ন জাগে—এই চাপের মুখে প্রভাবিত হয়ে পুলিশ কি তড়িঘড়ি করে “নিরাপদ কাউকে” গ্রেফতার দেখিয়েছে? আইনের শাসনে আবেগ বা চাপ নয়, বরং সত্য ও প্রমাণই হওয়া উচিত বিচার প্রক্রিয়ার ভিত্তি।

তবে উপরোক্ত প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি প্রকৃত অপরাধীও হতে পারেন—এটিও অবহেলা করার মতো নয়।

আহ্বান
এই মামলায় একের পর এক প্রশ্ন উঠে আসছে। এগুলো আড়াল করা হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাই ঘটনার পেছনে যদি কোনো ঘটনা থেকে থাকে, তাকে আড়াল না করে প্রকৃত অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আমরা চাই—অপরাধী যেই হোক না কেন, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

✍️ জয়নাল মাযহারী
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও জজ কোর্ট কুমিল্লা।
০৯/০৯/২০২৫ইং

error: Content is protected !!

কুমিল্লার মা–মেয়ে হত্যাকাণ্ড; প্রশ্নের ভিতরে কিছু প্রশ্ন!

তারিখ : ১০:২২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুমিল্লায় মা তাহমিনা বেগম ফাতেমা ও মেয়ে সুমাইয়া আফরিন রিনথির হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, আসামি মোবারক হোসেন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ভিকটিমের বাসায় প্রবেশ করেন। ১১টা ২৩ মিনিটে বের হয়ে ১১টা ৩৪ মিনিটে পুনরায় ফিরে এসে প্রথমে মাকে, পরে মেয়েকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন এবং মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান।

কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রাত ২টা ৩০ মিনিটেই তারা পুলিশকে অবগত করেছে। এই টাইমলাইনের বিশাল অমিল পুরো ঘটনাকে রহস্যাবৃত করে তুলছে।

শারীরিক ও বাস্তব প্রশ্ন
একজন প্রাপ্তবয়স্কা ও সুঠাম দেহের নারীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করতে যথেষ্ট সময় লাগে। এ সময় প্রবল প্রতিরোধ হওয়ার কথা, আর হত্যাকারীর শরীরে আঁচড় বা আঘাতের চিহ্ন থাকার সম্ভাবনাও প্রবল। অথচ পুলিশের বয়ানে এসবের কোনো উল্লেখ নেই।

তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়—একসাথে দুইজনকে একই কায়দায় হত্যা করা কি বাস্তবসম্মত? প্রথমজনের হত্যার পর দ্বিতীয়জন কীভাবে চুপচাপ একই পরিণতির শিকার হলো?

টাইমলাইনের অসঙ্গতি
পরিবারের দাবি, রাত ২টা ৩০ মিনিটেই তারা পুলিশকে খবর দিয়েছে। অথচ পুলিশের বয়ান অনুযায়ী সকাল ১১টা ৩৪ মিনিটের পরপরই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

এখানে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে—
দুই ভাই এত রাতে একসাথে বাড়িতে এলেন কেন?

এর আগে তারা কোথায় ছিলেন?

তারা হত্যার আগেই না পরে লাশ দেখলেন?

এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।

চুরি ও উদ্ধার রহস্য
এই ঘটনায় শুধুমাত্র মোবাইল ও ল্যাপটপ চুরি হয়েছে, কিন্তু নগদ অর্থ বা গহনা অক্ষত রয়েছে।

অন্যদিকে, উদ্ধার দেখানো ডিভাইসগুলো সত্যিই ভিকটিমের কি না—IMEI ও সিরিয়াল নম্বর যাচাই ছাড়া তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

সামাজিক চাপ ও দ্রুত পদক্ষেপ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পুলিশকে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল আসামি গ্রেফতারের জন্য। এতে পুলিশের ওপর তীব্র চাপ তৈরি হয়।

ফলে প্রশ্ন জাগে—এই চাপের মুখে প্রভাবিত হয়ে পুলিশ কি তড়িঘড়ি করে “নিরাপদ কাউকে” গ্রেফতার দেখিয়েছে? আইনের শাসনে আবেগ বা চাপ নয়, বরং সত্য ও প্রমাণই হওয়া উচিত বিচার প্রক্রিয়ার ভিত্তি।

তবে উপরোক্ত প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি প্রকৃত অপরাধীও হতে পারেন—এটিও অবহেলা করার মতো নয়।

আহ্বান
এই মামলায় একের পর এক প্রশ্ন উঠে আসছে। এগুলো আড়াল করা হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাই ঘটনার পেছনে যদি কোনো ঘটনা থেকে থাকে, তাকে আড়াল না করে প্রকৃত অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আমরা চাই—অপরাধী যেই হোক না কেন, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

✍️ জয়নাল মাযহারী
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও জজ কোর্ট কুমিল্লা।
০৯/০৯/২০২৫ইং