নেকবর হোসেন।।
কুমিল্লায় শারদীয় দূর্গোৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচাইতে বড় উৎসব। গত ৬ অক্টোবর বুধবার শুভ মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা শুররু হয়েছিলো। মঙ্গলবার (১১অক্টোবর) মহাষষ্ঠিতে বোধন পূজা ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শারদীয় দূর্গোৎসবকে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় সমগ্র কুমিল্লায় জেলায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি, সনাতন ধর্মাবলম্বী মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ এবং শেষ সময়ে কর্ম ব্যস্ততার মধ্যে দিনরাত পার করছেন পূজার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা।
এ বছর কুমিল্লায় বেড়েছে শারদীয় দুর্গোৎসবের পূজা মণ্ডপ। গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় ৪৭টি পূজা মণ্ডপ বেড়ে সর্বশেষ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯৫টিতে। যা সরকারি হিসাব মতে ৭৮৮টি।, আজ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হবে দেবী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। বর্তমানে দেবী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু না হলেও প্রতিটি পূজা মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আর দেবী পূজাকে সামনে রেখে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা।
এ ছাড়া কুমিল্লা নগরীসহ ১৭টি উপজেলায় ৭৯৫টি পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। এর মধ্যে জেলার মুরাদনগর উপজেলায় সর্বো”চ ১৪৬ এবং মেঘনা উপজেলায় সর্বনিম্ন মেঘনা উপজেলায় ৭টি পূজা মন্ডপ। মুরাদনগরে গত বছর ১৩৬টি পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল শারদীয় উৎসব। এ বছর ওই উপজেলায় বেড়েছে ১০টি পূজা মন্ডপ। এছাড়া দেবীদ্বার উপজেলায় বেড়েছে ১২টি পূজা মন্ডপ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা মহানগরীতে ৬৬টি, সদর উপজেলায় ২৫টি, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৩২টি, চৌদ্দগ্রামে ২২টি, বরুড়া উপজেলায় ৮৪টি, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি, লাকসাম উপজেলায় ৩৬টি, লালমাই উপজেলায় ১৬টি, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ৯টি, বুড়িচং উপজেলায় ৪৩টি, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ১৮টি, চান্দিনা উপজেলায় ৭২টি, দেবীদ্বার উপজেলায় ৯০টি, হোমনা উপজেলায় ৫৩টি, তিতাস উপজেলায় ১৬টি, দাউদকান্দি উপজেলায় ৪৭টি পূজা মন্ডপ।
অতিথি অনুসারে এবার দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে ঘোটকে (ঘোড়ায়) আগমন করবেন। পাঁচদিনের অর্চনা শেষে দোলায় (নৌকা) মর্তলোক থেকে স্বামীগৃহ কৈলাশে ফিরেন যাবেন।
এছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজাকে ঘিরে জেলা পূজা উদযাপন কমিটি ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। উপজেলা পর্যায়ে পূজা উদযাপন কমিটিকে নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহ শান্তিপূর্ণ ও জাকজমক পরিবেশে পূজা উদযাপনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জেলার পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিব দা বলেন বলেন, মাতা দেবী দূর্গার শুভ আগমন উপলক্ষে আমাদের পূজা মন্ডপ গুলোতে প্রতিমা তৈরি করা হয়, বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জা করা হয়, আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এ কাজগুলো এখন সকল মন্ডবেই শেষ পর্যায়ে। সরকার কর্তৃক করোনার কারনে পূজা বিষয়ে কিছু নির্দেশনা রয়েছে আমরা সে নির্দেশনা অনুসরণ করেই মায়ের পূজা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। শারদীয় দূর্গোৎসব উপলক্ষে সকল সনাতন ধর্মাবলম্বী মাঝে এক আনন্দে জোয়ার বইছে।
কুমিল্লায় জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী বলেন,তালিকা প্রস্তুতির পরও কয়েকটি পূজা মন্ডপ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে ওই পূজা মন্ডপগুলো সরকারি তালিকায় যুক্ত হয়নি। তবে পূজা মন্ডপগুলো আমাদের জানা আছে।এছাড়া আমরা নিরপত্তা বিষয় সার্বিকক্ষণ জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করছ।নগরীর বাইরের পূজা মন্ডপগুলো নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন আমাদের আমাদের কমিটির সদস্যরা।
নিরপত্তা বিষয় জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, প্রতিটি মন্ডপ ও আশপাশ সাদা পোশাকের কর্মকর্তা, ডিবি পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এবং র্যাব সমন্বিতভাবে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলবে।পূজা মন্ডপগুলোতে আনসারে পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ান করা হয়েছে।এছাড়া আমাদের বিশেষ মোবাইল টিম জেলাব্যাপি কাজ করছে করছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, র্যাব, আনসার এর প্রতিনিধিরা থাকবেন।তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীদের পূজা মণ্ডপে প্রবেশ করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে জেলার সকল মন্ডপগুলোতে প্রতিমা গড়ার প্রধান কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তে কারিগররা তাদের সুনীপুন হাতের ছোয়ায় আর রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমা সাজ গোছ করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page