চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা জহির আহম্মদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনা আক্তারের দুর্নীতির অভিযোগে অপসারণ ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে সচেতন এলাকাবাসীর উদ্যোগে বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কে এ উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির আহমেদ ভূঁইয়া, বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও ভুক্তভোগি মো: হারিসুল আলম, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মো: ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া প্রমুখ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো: অহিদুর রহমান মজুমদার, আতিকুর রহমান, আব্দুল্লাহ আল ফরহাদ, রেজাউল করিম মিন্টু, আরিফুর রহমান আরব সহ এলাকার সচেতন অভিভাবক মহল, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বিদ্যালয়ের ছাত্রীবৃন্দ।
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক শাহিনা আক্তার এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়ম, এতিম শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রণোদনার টাকা আত্মসাত, বিদ্যালয়ের বিদায়ী শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে ব্যাপক হয়রানি ও বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা, তুচ্ছ ঘটনায় দুইজন শিক্ষকের যথাক্রমে ১৮ ও ৩০ মাসের বেসরকারি বেতন আটকে রাখা, কোনো রকম টেন্ডার ছাড়া বিদ্যালয়ের একটি পুরাতন ভবন বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত ও বিদ্যালয় আঙ্গিনার গাছ বিক্রির ৭০ হাজার টাকা, বিদ্যালয় ফান্ডের অর্থ আত্মসাত সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্দ এলাকাবাসী দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক শাহিনা আক্তার এর অপসারণ চেয়ে এর আগেও বিদ্যালয় ঘেরাও এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। তখন স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সহায়তায় স্বসম্মানে বিদ্যালয় আঙ্গিনা ত্যাগ করেন ওই প্রধান শিক্ষক। সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস পেয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা কিছুটা শান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ভুক্তভোগি বিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষক গত ২৯.০১.২০২৫ইং তারিখে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। এদিকে দুর্নীতি পরায়ন এ প্রধান শিক্ষকের খুঁটির জোর কোথায় তা দেখতে চায় এলাকাবাসী। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগি শিক্ষক মো: হারিসুল আলম বলেন, প্রধান শিক্ষক শাহিনা বেগম আমার প্রমোশন হওয়ার পর বিদ্যালয়ে জমা থাকা শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল মূল সনদ আটক করে রাখেন। বারবার অনুরোধ করার পরও তিনি আমাকে সনদগুলো দেননি। তিনি পদত্যাগ পত্র বাবদ আমার থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি তুচ্ছ ঘটনায় আমার বেসরকারি বেতনের ২৭ হাজার ৩৬০ টাকা আটকে রাখেন। অদ্যবদি আমি সে টাকাগুলো পাইনি। এ বিষয়ে বহুবার উনার দারস্থ হয়েও কোনো সমাধান না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও নির্বাহী অফিসার বরাবর দরখাস্ত দিয়েছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোসা: শাহিনা আক্তারের মোবাইল নম্বরে (০১৮১৯-১১১০৯৭) একাধিকবার চেষ্টা করেও নম্বরটিতে কল না যাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম মীর হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানান, ‘আজই অভিযোগটি হাতে পেয়েছি। ইতিমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page