আতাউর রহমান।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ষোলো বছর ধরে ডায়াবেটিস রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে ব্রাহ্মণপাড়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ভরসার স্থানে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্রাহ্মণপাড়া ডায়াবেটিস সমিতির একটি প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবী ডা. যোবায়দা হান্নান এবং বিশিষ্ট ডায়াবেটিস চিকিৎসক ডা. আতাউর রহমান জসিমের উদ্যোগে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে ব্রাহ্মণপাড়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল। এরপর থেকে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সরকারি অনুদান ছাড়াই সমাজসেবী মানুষের সহযোগিতায় ষোলো বছর ধরে এই উপজেলাসহ আশপাশের অন্যান্য উপজেলার ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে হাসপাতালটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধান্যদৌল বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ব্রাহ্মণপাড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। উপস্থিত এসব রোগীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এদের মধ্যে বৃদ্ধ ও মাঝবয়সী রোগীর সংখ্যাই বেশি। কেউ চিকিৎসা নিয়েছেন, কেউ বা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। হাসপাতালটি গাছাপালাবেষ্টিত স্বস্তিদায়ক পরিবেশে স্থাপিত হওয়ার রোগীদের মধ্যে অসহিষ্ণুতার কোনো লক্ষ্মণ দেখা যায়নি। সবাই সুশৃংখলভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর চিকিৎসকরাও এরকম পরিবেশে চিকিৎসা দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণপাড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী হাসপাতালের জন্য জমি দান করেন। ডা. যোবায়দা হান্নানের মৃত্যুর পর ডা. আতাউর রহমান জসিম ডায়াবেটিস সমিতির সহযোগিতায় হাসপাতালটির যাবতীয় কাজ চলমান রাখেন। ডা. আতাউর রহমান জসিম শুরু থেকে বিনা সম্মানীতে একা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। তবে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়াবেটিস চিকিৎসার পাশাপাশি অন্যান্য রোগের চিকিৎসা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের। এতে বিশেষ করে উপজেলার অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের রোগীরা বেশি উপকৃত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ডায়াবেটিস রোগী আরিফুল ইসলাম লিটন বলেন, ব্রাহ্মণপাড়ায় ডায়াবেটিস রোগের ভালো কোনো চিকিৎসক নেই। ভালো কোনো চিকিৎসক দেখাতে হলে আমাদেরকে জেলা শহর কুমিল্লায় যেতে হতো। তবে এই হাসপাতালটি চালু হওয়ায় এই উপজেলার মানুষ অনেক সুবিধা পাচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হাসপাতালটি এখন ভরসার স্থল।
ডায়াবেটিস রোগী সালেহা বেগম বলেন, আমার যখন প্রথম ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তখন কুমিল্লা শহর ছাড়া ডাক্তার দেখানোর কোনো উপায় ছিল না। এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা পাওয়ায় আমাদের জন্য অনেক উপকার হয়েছে। এখানে ডাক্তারের ভিজিট দিতে হয় না। সপ্তাহে একদিন ছাড়া প্রতিদিন ডাক্তার পাওয়ার কারণে আমার মতো ডায়াবেটিস রোগীদের বিপাকে পড়তে হয় না।
ডায়াবেটিস চিকিৎসক ডা. আতাউর রহমান জসিম বলেন, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজসেবী ডা. যোবায়দা হান্নান আমাদের প্রেরণা ছিলেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে এই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। এখন তিনি নেই। তাঁর আদর্শ লালন করে আমরা হাসপাতালটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমার বাড়িও এই উপজেলায়। তাই এই উপজেলার ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সেবার লক্ষ্যেই আমরা হাসপাতালটি প্রথমে ক্ষুদ্র পরিসরে আজ থেকে ষোলো বছর আগে শুরু করেছিলাম। এখন আমরা সেই অবস্থা থেকে মানব সেবার মন-মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সহযোগিতায় অনেকদূর এগিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আমরা হাসপাতালটিকে ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রসারিত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page