মোঃ শরিফ খান আকাশ।।
দেবে যাওয়া সড়কের ওপর তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়েই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার দুলালপুর সুরুজ মিয়া এন্ড খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাঁকো পারাপারের সময় দুর্ঘটনার মুখোমুখিও হতে হচ্ছে তাদের। যার ফলে সাঁকো পারাপারের সময় তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। অভিভাবকরাও ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন।
জানা গেছে, উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের দুলালপুর সুরুজ মিয়া এন্ড খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সাথে বিদ্যালয়ে পাঠ দেয়া-নেয়া চলে আসছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১৪ জন শিক্ষক ও ৭শ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার কারণে গত কয়েকমাস আগে বন্যার কারণে বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের বিদ্যালয়ের ভবন ও পুকুর ঘেঁষা বিদ্যালয়ে প্রবেশের একমাত্র সড়কটির ৩শ গজ জায়গা পুকুরের দিকে দেবে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুলালপুর সুরুজ মিয়া এন্ড খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন ও পাশের পুকুর ঘেঁষা সড়কের দেবে যাওয়া অংশে সাময়িকভাবে চলাচলের জন্য বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। আর এই বাঁশের সাঁকো দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন বিদ্যালয়ে পাঠ নিতে আসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এতে দুর্ঘটনার ভয়ে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিভাবকরাও সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকছেন। সড়কটি দ্রুত সংস্কার না হলে বিদ্যালয়ের ভবনও ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী। তাই সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা।
বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল-আমীন বলেন, বিগত বন্যায় আমাদের স্কুলের পশ্চিম পাশের রাস্তাটি পুকুরে ভেঙে পড়ায় আমাদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। রাস্তাটি মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ করছি।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার জিদনী বলেন, বন্যার কারণে আমাদের বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের সড়কটি ভেঙে গেছে। সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে। মাঝে মাঝে কেউ কেউ পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। আমরা ভয়ে ভয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে সড়ক পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাই। আমরা চাই এই সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।
অভিভাবক সদস্য বদিউজ্জামান ভূইয়া বলেন, কয়েকমাস আগে বিদ্যালয় ঘেঁষা সড়কটি ভেঙে গেছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ছেলে মেয়েরা পারাপার হচ্ছে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা চাই সড়কের ওই অংশটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রহমান তালুকদার বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে লেখাপড়া ও খেলাধুলা সুনামের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন আছে। বিগত বন্যায় বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের রাস্তাটির পৃরায় ৩শ গজ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ভেঙে যাওয়া অংশে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। বাঁশের সাঁকো দিয়ে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছে। মাঝে মাঝে কোনো কোনো শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে বইপত্র ভিজিয়ে ফেলছে। আমি আশা করব উপজেলা কর্তৃপক্ষ এই বিদ্যালয়ের প্রতি দৃষ্টি দিবেন।
দুলালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: আনিসুর রহমান ভূইয়া রিপন বলেন, এ রাস্তাটি সংস্কারের জন্য আমি এলজিএসপি-৩ ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫ লাখ ১২ হাজার ৩১২ টাকা বরাদ্দ এনে রাস্তাটির কাজ করেছিলাম। তবে সাম্প্রতিক বন্যায় সড়কির প্রায় ৩শ গজ পুকুরের দিকে দেবে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যাওয়া-আসা করতে অসুবিধা হচ্ছে। সড়কটি সংস্কারের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহিদুল করিম বলেন, দুলালপুর সুরুজ মিয়া এন্ড খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭শ’র বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। আমি ওই বিদ্যালয়ে মাসখানেক আগে গিয়েছিলাম। সেখানে বিদ্যালয়ের পাশের পুকুরের পাড় ঢালাই করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। হঠাৎ করেই সেই রাস্তাটি দেবে গেছে। এতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পা পিছলে পুকুরে পড়ে যাচ্ছে। এটি অচিরেই মেরামত করা দরকার। তবে স্থানীয় সরকারের এ মুহূর্তে কোনো বরাদ্দ নেই। ওই বিদ্যালয়েরও তহবিল তেমন ভালো না। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অথবা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যদি সম্ভব হয় রাস্তাটি মেরামত করা খুবই দরকার।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা জাহান বলেন, আমি এ উপজেলায় মাত্র কয়েকদিন আগে যোগদান করেছি। বিদ্যালয় ঘেঁষা সড়কটির বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। শিক্ষার্থীরা যেন কোনোভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে সেদিক বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আমি শিগগিরই বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করব।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page