শান্তনু হাসান খান (বিশেষ প্রতিনিধি)
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে মাথা ভাঙ্গা একটি অনগ্রসর জনপদ। পাশাপাশি নিলখী ও ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান নাজিরুল হক ভূইয়া, জালাল উদ্দিন খন্দকার, মফিজুল ইসলাম গনি এবারের চলতি দায়িত্বে চেয়ারম্যান। তবে গণি চেয়ারম্যান পর পর তিনবারের তিন প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত। তিনি ২০১৬ তে ধানের শীষ নিয়ে বিজয়ী। আর মাথাভাঙ্গার চেয়ারম্যান নাজিরুল হক ভূইয়া ঘুরে দাড়িয়েছেন দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে। এর আগে বরাবর বিএনপি’র ঘাঁটি ছিল।
আগামীতে এই তিন জন চেয়ারম্যান নির্বাচনের মাঠে থাকবেন। পাশাপাশি আরো লড়বেন সাবেক চেয়ারম্যান সুরুজ চেয়ারম্যানের যোগ্য সন্তান নজরুল ইসলাম। নিলখীতে নতুন প্রার্থী লুৎফুর রহমান লাখ মিয়া।
এদিকে নতুন প্রার্থী নজরুল ইসলাম মাথাভাঙ্গা ৮নং ওয়ার্ডের ভোটার। বেড়ে উঠেছেন এ জনপদে। তার বাবা মরহুম সিরাজুল ইসলাম (সুরুজ চেয়ারম্যান) ১৯৬৭ সালে হোমনাতে আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে স্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে রাজনীতি সমাজনীতি করে নন্দিত হয়ে আছেন। তারই সন্তান এই নজরুল ইসলাম। ৪৬ বছরের নজরুল পড়াশুনা করেছেন হোমনায়। পরে নারায়নগঞ্জের তোলারাম কলেজের ছাত্র ছিলেন। ছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগেরগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ দিয়েই তার রাজনীতিতে আসা। ১৯৯৭ তে মাথাভাঙ্গা ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এরপর জীবন জীবিকার তাগিদে সৌদী প্রবাসী হয়ে যান। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে আগ্রহ প্রকাশ করলে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে আসেন। তবে এবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত-মাঠে থাকবেন।
তিনি বলেন, আমার অতীতের পলিটিকেল ক্যারিয়ার ও এলাকার গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করলে সিলেকশন কমিটি তথা আমার নেত্রী-জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দল থেকে নমিনেটেড করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি নির্বাচনের মাঠকে গুছিয়ে রেখেছি। এখানে যে কোন প্রার্থীকে ডিঙ্গিয়ে আমি ইনশাল্লাহ কামিয়াব হবো। আর তখনই মাথাভাঙ্গার পুঞ্জিভূত সমস্যা চিহ্নিত করে সবাইকে নিয়ে কাজ করবো। পাশাপাশি জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল কনসেপ্টকে প্রাধান্য দিয়ে আমার গ্রাম আমার শহর আলোকিত করবো।
এদিকে বর্তমান চেয়ারম্যান নাজিরুল হক ভূইয়া ২০১৬ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আগামীতে পুণরায় নেত্রী আমাকে দলের টিকেট দিবেন। আর তখনও অসমাপ্ত কাজগুলোকে সমাপ্ত করে আমার ইউনিয়নকে আরো এক ধাপ সামনে নিয়ে যাবো।
নাজিরুল হক ভূইয়া মাথাভাঙ্গা ১ নং ওয়ার্ডের ভোটার। পড়াশোনা হোমনা কলেজে। তার বড় ভাই এসকেএম সিদ্দিকুর রহমান আবুল। তিনি হোমনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তার ছোট ভাই জসিম উদ্দিন লিটন যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। পাশাপাশি সাংবাদিকতা। হোমনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। তাদের গোটা পরিবার আওয়ামী ঘরনার।
তবে চেয়াম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ থাকলেও তা ধোপে টিকে না। এলাকায় তিনি থাকেন না, তথ্য সেবাকেন্দ্রে তথ্য নিতে আসলে অতিরিক্ত মাশূল দিতে হয়। রাস্তা-ঘাট এখনো অতোটা উন্নত হয়নি। তবে এসব বিষয়ে চেয়ারম্যান যুক্তি খন্ডান। বলেন, নির্বাচনের আগে সাংবাদিকদেরকে কান গরম করে দিতে একটি মহল সবসময় পথ চেয়ে থাকে।
এদিকে নিলখীর বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ জামাল উদ্দিন খন্দকার। তিনি ২০১৬ তে আওয়ামীলীগের টিকিটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি প্রবাসে ছিলেন। অনেকে বলেন, এলাকায় অনেক ত্যাগী নেতা থাকা সত্ত্বেও তিনি নমিনিয়েশন বাণিজ্য করে নৌকার টিকেট পেয়েছেন। মাঠ ছিল খালি। সুতরাং তিনি নির্বাচিত হয়ে যান। তবে এটা ছিল বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম এম কে আনোয়ারের ইউনিয়ন। বরাবর এখানে বিএনপি চেয়ারম্যানরাই কর্তৃত্ব করেন। তবে এবার ছাত্রলীগের মতিউর রহমান ও যুবলীগের লুৎফুর রহমান রাখ মিয়া মাঠে থাকবেন। এলাকায় গ্রহণযোগ্য রয়েছে যুবলীগের লাখ মিয়ার পক্ষে। মতিউর রহমান এলাকাতে বেশ প্রশ্নবিদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে লাখ মিয়া বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবার তেমন কোন সুযোগ নেই। আগামীতে দলীয়ভাবে নির্বাচিত হতে পারবো বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস । আর সে বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি নির্বাচনের মাঠকে গুছিয়ে রেখেছি। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে এবং জনগণ যদি ভোট প্রদান করতে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পবিত্র আমানত প্রয়োগ করতে পারে তাহলে ইনশাল্লাহ আমি দল থেকে উঠে আসবো। আর নির্বাচিত চেয়াম্যান হিসাবে আমার নিলখী ইউনিয়কে অত্যাধুনিক- মডেল ডিজিটালাইস্ট ইউনিয়ন উপহার দিবো। পাশাপশি জননেত্রী শেখ হাসিনার এবারের প্রতিপাদ্য- “আমার গ্রাম-আমার শহর” বাস্তবায়িত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।
উল্লেখ্য হোমনা ইউপি নির্বাচন; ২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা, ৪ নভেম্বর প্রত্যাহারের শেষ দিন ও ২৮ নভেম্বর ভোট গ্রহন।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page