শান্তনু হাসান খানঃ
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিশাত আহমদ খানকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর অনেক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে খোদ কুমিল্লাতেও। এ নিয়ে আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, নিশাত খানের রাজনৈতিক দক্ষতা আর কর্মকান্ডে এমন কিছুই ঘটেনি যে তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
প্রচন্ড দাপটে সংগঠনকে নিশাত খান দিনে দিনে বেগবান করতে সহায়তা করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে সাফিয়া আপা ও মাহমুদা আপা বলেন-“নিশাতের রাজনৈতিক দক্ষতায় কুমিল্লা মহিলা আওয়ামীলীগ ঘুরে দাড়িয়েছে। তার নেতৃত্বে কুমিলায় তৃণমূল মহিলা আওয়ামীলীগের কর্মীরা এখন নিজেদের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করেছেন।
এদিকে নিশাত খানের অব্যাহতির বিষয়টি সভাপতি জোবেদা খাতুন পারুল ও সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর বেগমের পরস্পর বিরোধী মন্তব্য পাওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে নিশাত খান বলেন, আমি তৃণমূল থেকে উঠে এসে আওয়ামী ঘরনার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। এখনো আছি। কি কারণে আমাকে স্থানীয় দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে-বিষয়টি আমার কাছে পরিস্কার নয়। এখানে নেতৃত্বের বেড়াজালে পড়ে আমাকে সরিয়ে অন্য কোন মহিলাকে নেতৃত্বের ভার দিতে চান-এমনটাই প্রতীয়মান হয়। কেননা, সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকদ্বয় একজোট হয়ে আমাকে সরাতে আদাজল খেয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন। তাদের কোনো এখতিয়ার নেই দল থেকে আমাকে অব্যাহতি দেয়ার। এটা শুধু কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত হতে পারে।
নিশাত আরো বলেন-এর আগে আমার সভাপতি পারুল আপা, সাধারণ সম্পাদক কোহিনুর আপাদের মাঝে ক্ষমতা নিয়ে নিরব দন্ড চলে আসছিলো দীর্ঘদিন। আমি দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক রেল মন্ত্রী মুজিব ভাইকে বিষয়টি অবগত করলে-তিনি বিষয়টা মীমাংসার জন্য সবাইকে ডাকেন। তখন মুজিব ভাই বললেন-“একজন ভালো ও দক্ষ সাংগঠনিক সম্পাদক দায়িত্ব পালনে নিশাতের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়”। অথচ বিষয়টি কোহিনুর আপা ভাবছিলেন-তাকে মাইনাস করার যড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আসলে এমনটা নয়। আর দল থেকে অব্যাহতির বিষয়ে আমি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। তাঁরা সবাই একবাক্যে আমার প্রতি সায় দিয়ে বলেছেন-সভাপতির একক কোন সিদ্ধান্তে নিশাত খানকে তার পদ থেকে কোনো ভাবেই অব্যাহতি দিতে পারেন না। এটা পারুল ও কোহিনুরের একক সিদ্ধান্ত।
এদিকে স্থানীয়ভাবে তাকে মহিলা আওয়ামীলীগ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিলেও নিশাত আওয়ামীলীগ থেকে কোনভাবেই ছিটকে পড়েননি। বরং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের পছন্দের মানুষকে আমার জায়গাতে স্থলাভিষিক্ত করতে-এখন নানা কৌশলে আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চরিত্রে কালিমা লেপন করে মিথ্যে অজুহাত দাঁড় করিয়ে প্রবাকান্ড চালাচ্ছেন। যা অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে নিশাত খানকে নিয়ে সভাপতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঢালাও করে অপবাদ দিয়ে খ্যান্ত হননি-বরং তার প্রবাসী স্বামীর সাথে সখ্যতা করে নিশাত খানের বিরুদ্ধে একরকম মন্তব্য করেই যাচ্ছেন। তা একজন সিনিয়র নেতৃত্বের কাছে মানুষ কখনই আশা করেন না। পাশাপশি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কোহিনুরও পেছন থেকে কলকাঠি নাড়তে সাহায্য করছেন। অনেকে তাকে ‘মাস্টার মাইন্ড’ বা নাটের গুরু বলে আখ্যায়িত করছেন। কেননা তার প্রবাসী স্বামীর সাথে এ মুহুর্তে দুজুনের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত। পাল্টা-পাল্টি মামলায় মুখোমুখি অবস্থান।
অত্যন্ত নেক্কারজনকভাবে প্রবাসী স্বামী মিনহাজ বিভিন্ন কৌশলে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করে, নিশাতকে এখন নাজেহাল করতে ব্যর্থ অপচেষ্টা করেই যাচ্ছে। ফলে ক’দিন আগে ও নিশাত কে মিথ্যা হেবা মামলায় দলিল সৃজনের অজুহাতে নারায়নগঞ্জের এক মামলায় ক’দিন আগে তাকে হাজত বাস করতে হয়েছে। জামিনে এসে নিশাত এখন পাল্টা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। এর আগেও নিশাত কর্তৃক একটি নারী নির্যাতন মামলায় মিনহাজ আগাম জামিন নিয়ে প্রচন্ড দাপটে টাকা পয়সার বিনিময়ে নিশাতসহ কুমিলার স্বনামধন্য দু’জন এডভোকেটকে জড়িয়ে মামলা দায়ের করে-ওয়ারেন্ট ইস্যু করানো হয়। এসব বিষয়ে একজন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিনহাজকে সাহায্য করছেন বলে শোনা গেছে।
এদিকে নিশাত ও তার পুত্র সন্তান-স্বাধীন খুবই অসুস্থতার কারণে মিডিয়ার সামনে আসতে পারছেন না। তার সন্তানটি এখন হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত। উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তারগণ সিঙ্গাপুর অথবা ব্যাংকক রেফার করেছেন। বিষয়টি মানবিক হলেও তার প্রবাসী স্বামী মিনহাজ এসব থোড়াই কেয়ার করেন। বরং তার অবৈধ উপার্জনের লাখ লাখ টাকা এখন দু’হাতে খরচ করছেন-নিশাতকে এক হাত দেখিয়ে দেয়ার জন্য।
এর আগে নিশাত খান এক সাংবাদিক সম্মেলনে তার সন্তানের স্বীকৃতি আর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে জোর দাবী জানালেও প্রশাসন কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ- টাউট প্রতারক আর লেডী কিলার হিসেবে খ্যাত মিনহাজকে কোন ভাবেই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষগণ অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page