আতাউর রহমান।।
জন্ম থেকেই নেই দুই হাত। তবুও পড়াশোনার স্বপ্ন ছাড়েনি শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু আরশাদুল ইসলাম। চরম দারিদ্র্য আর জীবনের কঠিন বাস্তবতায় এক বছর ধরে স্কুলের বাইরে থাকলেও তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আজও অটুট।
এমন এক সংগ্রামী শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতে পাশে দাঁড়িয়েছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) মাহমুদা জাহান।
মঙ্গলবার ( ২৩ ডিসেম্বর ) বিকেলে ইউএনও মাহমুদা জাহান সরেজমিনে আরশাদুলের খোঁজখবর নেন।
এ সময় তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী উপহারসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পড়াশোনায় সহযোগিতাসহ সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।
ইউএনওর এই মানবিক উদ্যোগে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া দেখা গেছে। তারা আশা প্রকাশ করেন, প্রশাসনের সহায়তায় আরশাদুল আবারও স্কুলে ফিরে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। নিয়মিত সহায়তা পেলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সে একদিন সমাজে উদাহরণ হয়ে উঠবে এমনটাই বিশ্বাস এলাকাবাসীর।
আরশাদুল ইসলাম কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের শিদলাই ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া এলাকায় নানাবাড়িতে বসবাস করছে। জন্মের পর থেকেই সে সেখানেই বেড়ে উঠছে। তার বাবা সুমন মিয়া পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী ছিলেন। তিন বছর আগে সুমন মিয়ার আকস্মিক মৃত্যুর পর পরিবারটি চরম আর্থিক সংকটে পড়ে।
পরবর্তীতে নানি কোহিনূর বেগমের সহায়তায় কয়েক বছর পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও অর্থাভাবে গত এক বছর ধরে আরশাদুলের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পড়াশোনা অব্যাহত থাকলে বর্তমানে সে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই হাত না থাকলেও আরশাদুল পা ও মুখ ব্যবহার করে লেখাপড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। স্কুলে যেতে না পারলেও বইয়ের প্রতি তার আগ্রহ একটুও কমেনি। সুযোগ পেলেই বই-খাতা নিয়ে বসে পড়ে সে। পড়াশোনার প্রতি তার এই অদম্য আগ্রহ স্থানীয়দেরও অবাক করে।
আরশাদুল ইসলাম বলেন, আমি আবার স্কুলে যেতে পারবো। ইউএনও স্যার আমাকে স্কুলে যেতে বলেছেন এবং আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমি আবারও পড়তে পারবো এজন্য আমি খুব খুশি।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) মাহমুদা জাহান বলেন, উপজেলার শিদলাই এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী আরশাদুল ইসলাম নামের এক শিশুর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ও উৎসাহিত করার জন্য তার প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণসহ সাময়িকভাবে সহায়তা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধকতা কোনো শিশুর শিক্ষার পথে বাধা হতে পারে না। আরশাদুলের মতো আগ্রহী ও সাহসী শিশুর পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। তার পড়াশোনা যেন কোনো কারণে বন্ধ না হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।











