ডাঃ জহিরের খুনি পাপ্পু; কুমিল্লায় ভয়ঙ্কর এক অপরাধীর নাম

মাহফুজ নান্টু।।
কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স জাফরখান সড়কের বাসিন্দা প্রয়াত আবদুল আজিজ ভুইয়ার ছেলে সালাউদ্দিন মোর্শেদ পাপ্পু। আবদুল আজিজের ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে পাপ্পু ষষ্ঠ।

চলাফেরা একেবারেই সাধারণ। তবে বাস্তবে এক ভয়ঙ্কর অপরাধী এই পাপ্পু। অন্যের জায়গা দখল, অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনা ঘটিয়ে কোটিপতি বনে গেছেন এই সন্ত্রাসী।

২২ অক্টোবর দুপুরে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জহিরুল হককে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন সালাউদ্দিন মোর্শেদ পাপ্পু। পরদিন ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডা. জহিরুল হক।

স্থানীয়রা জানান, রেসকোর্স এলাকায় শাপলা টাওয়ারের পরিচালনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ডা. জহিরুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ ঘটনায় ডা. জহিরুল হকের স্ত্রী ফারহানা আফরিন হিমি বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

আসামিরা হলেন- সালাউদ্দিন মোর্শেদ ভূঁইয়া ওরফে পাপ্পু, তার স্ত্রী সুমী, ছেলে আরহাম ও আহনাফ এবং সিলভার ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ।

ঘটনার দিনই পাপ্পুকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আর এই সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেরিয়ে আসতে থাকে এই সন্ত্রাসীর নানা অপকর্মের কাহিনী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্ব বিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর নগরীর রেসকোর্স এলাকার বাসা থেকে একটু দূরে বিএনপি নেতা এসএম তৌহিদ সোহেলকে কুপিয়ে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা। নিহত সোহেল ছিলেন পাপ্পুর বড় ভাই। ওই ঘটনায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন পাপ্পু। আর ভাই হত্যার এই মামলাকে পুঁজি করে টাকা কামানোর পথ বের করে নেন এই সন্ত্রাসী। মামলার আসামির তালিকা থেকে নাম তুলে নেয়ার বিনিময়ে ভাইয়ের খুনিদের থেকে পাপ্পু হাতিয়ে নেন প্রায় দেড় কোটি টাকা।

শুধু তাই নয়, পাপ্পু তার নিহত ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানদেরও বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। ভাড়া বাসায় থাকার পরও পাপ্পুর হাত থেকে তাদের নিস্তার মেলেনি। ভাবি ও ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের প্রায়ই নির্যাতন করতেন এই পাপ্পু।

স্থানীয়রা জানান, সালাউদ্দিন মোর্শেদ পাপ্পু ঠিকাদারির আড়ালে মানুষের জায়গা দখল, নিজেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বড়কর্তার কাছের মানুষ হিসেবে প্রচার করে চাঁদাবাজি এবং কম দামে ফ্ল্যাট বিক্রির কথা বলে প্রতারণা ও পাওনা টাকা ফেরত না দেয়াসহ অসংখ্য অপরাধ করে আসছিলেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘পাপ্পুর একটি টিনশেড বাড়িতে আমি শিক্ষার্থীদের পড়াতাম। পরে আমি অন্যত্র বাসা ভাড়া নিলে এই পাপ্পু আমার কাছে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়। বহু কষ্টে আমি পাপ্পুর অত্যাচার থেকে রক্ষা পাই।’

নাম না প্রকাশ করার শর্তে শাপলা টাওয়ারের এক বাসিন্দা বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে ডা. জহিরুল হক আশঙ্কা করেছিলেন পাপ্পু তাকে যে কোনো সময় মেরে ফেলতে পারে। গেল শনিবার সেই শঙ্কাই সত্যি হলো।

শাপলা টাওয়ারের বাসিন্দারা জানান, ভবনের দোতলার দুটিসহ মোট ৬টি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন ডা. জহির। দোতলায় চেম্বার করতেন তিনি। তবে শাপলা টাওয়ারের বিল্ডার্স ফারুকের প্ররোচনায় পাপ্পু প্রায়ই ডা. জহিরকে দোতলার ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে হুমকি দিতেন।

এ নিয়ে কয়েক দফা সালিশ বৈঠক করে সমাধান দিতে ব্যর্থ হন কুমিল্লা শহর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী শারমিন আউয়াল পারভেজ বাপ্পি।

বাপ্পি বলেন, ‘সে (পাপ্পু) খুবই ভয়ঙ্কর লোক। শাপলা টাওয়ারের বাসিন্দাদের থেকে নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করতো পাপ্পু। টাওয়ারের বাসিন্দাদের বিদ্যুতের সাবস্টেশন তৈরির করার নামেও ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছে সে। এগুলো সবাই জানে।’

রেসকোর্স ইস্টার্ন প্লাজার কয়েকজন দোকানি জানান, কয়েক বছর আগে ইস্টার্ন প্লাজার দোকান মালিক সমিতির নির্বাচনে সুবিধা করতে না পেরে বাইরে থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে পাপ্পু মার্কেটের ভেতর অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেন। সে সময় রাজনৈতিক নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

পাপ্পুর স্ত্রী ও দুই ছেলে গ্রেপ্তার

ডা. জহিরুল হত্যা মামলার আসামি পাপ্পুর স্ত্রী ও দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার রাতে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের হাজীপাড়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ডা. জহিরুল হক হত্যার এজাহারনামীয় প্রধান আসামি সালাউদ্দিন মোর্শেদ পাপ্পুর স্ত্রী রোকসানা আলম সুমি, তার ছেলে আরহাম আজিজ ও আহনাফ আজিজ।

বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রাজেস বড়ুয়া বলেন, ‘পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডা. জহিরুল হক হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি।’

কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন বলেন, ‘আমরা ডা. জহিরুল হত্যা মামলায় প্রধান আসামি পাপ্পু, তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছি। পাপ্পুকে ৭ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছি। আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তবে অফিসিয়ালি এখনও কাগজপত্র আমাদের হাতে আসেনি।’

মামলার আরেক আসামি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে- এমন প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সব আসামির ব্যাপারে সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করি তদন্ত শেষ করে দ্রুতই মামলার চার্জশিট দিতে পারব।’

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page