
ফয়সাল মিয়া, কুবি।।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও ইসলাম ধর্মকে কটূক্তি করার প্রতিবাদে দুই দফা দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৯ মে) সকাল ১০ টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বক্তব্য ও প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রক্টরিয়াল বডির কাছে স্থায়ী বহিষ্কার, মামলা দায়ের এবং আজকের মধ্যেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আলটিমেটাম জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর দুপুর ১:২০ এ যোহরের নামাজ আদায় করে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা জনসম্মুখে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এমন একটা স্থানে ইসলাম ধর্ম ও রাসূলুল্লাহ (সা.) কে নিয়ে কেউ কটূক্তি করবে আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে এখনো স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করবেনা, মামলা দায়ের করবেনা, পুলিশ প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করবেনা, সেটা মেনে নেয়া যায়না। রাসূল (সাঃ) আমাদের কলিজা, আমাদের ইমান। সে রাসূলকে অবমাননা মানে আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা বুঝেও এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেনা। এসময় তারা আরও বলেন, স্বপ্নীলকে যদি স্থায়ী বহিষ্কার না করা হয় আর একারণে সে যদি এই ক্যাম্পাসে আবার আসে তাহলে আমরা কিন্তু তাকে ছেড়ে দেবো না। এই ক্যাম্পাস হিন্দু মুসলমান সবার ক্যাম্পাস। এখানে আমরা চাইনা কোনো উগ্রবাদীর জায়গা হোক। ”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী পাভেল রানা বলেন, “আমাদের পরিচয় বাঙ্গালি হওয়ার আগে আমরা মুসলমান। যে মানুষটা তার পুুরো জীবন দুনিয়ার মানুষের জন্য, উম্মতের জন্য কাজ করে গেছেন তাকে নিয়ে কেউ অবমাননা করবে, সেটা আমাদের জীবন থাকতে আমরা মেনে নিতে পারিনা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি অতি দ্রুত স্বপ্নীলকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ”
প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, “যেহেতু এটা ধর্ম অবমাননার বিষয় তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আপাতত মামলা দায়ের না করে রাষ্ট্র কর্তৃক মামলা দায়েরের চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
কুমিল্লা জেলার এস.পি আব্দুল মান্নান কুমিল্লা নিউজকে জানান, “শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করলে আমরা দ্রুত মামলা দায়েরের চেষ্টা করবো। ”
তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি কতদূর সেই সম্পর্কে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ূন কবিরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। আজকে (রবিবার) আমরা প্রথম মিটিং করেছি। আগামী মঙ্গলবার আমরা আন্দোলনকারীদের, স্বপ্নীলের এবং প্রক্টরিয়াল বডির বক্তব্য শুনবো। এরপর আমরা বলতে পারবো ফাইনাল রিপোর্ট কবে দিতে পারবো। ”
উল্লেখ্য গত বুধবার (১৫ মে) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে প্রক্টর বরাবর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কারের আবেদন জানান। একই সময়ে প্রক্টর বরাবর তার নারী সহপাঠীরা তার বিরুদ্ধে টেলিগ্রাম গ্রুপে তাদের ছবি নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ করেন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু নোটিশের জবাব না দেয়ায় বৃহস্পতিবার (১৬ মে) কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এবং এই ঘটনার তদন্তের জন্য উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
চলতি মাসের ১৪ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) ও ইসলাম ধর্মকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রুপে এ মন্তব্যের বিভিন্ন স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোব সৃষ্টি হয় । কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শ্রী স্বপ্নীল মুখার্জি ফেইসবুকের কমেন্ট ও পোস্টে ইসলাম ধর্ম নিয়ে অশালীন বক্তব্য,ফিলিস্তিনের নিয়ে অশালীন কথাবার্তা ও বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ ( সঃ) কে নিয়া কটুক্তি করে। এ সংক্রান্ত খবর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোব সৃষ্টি হয়। তার এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক) প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।তীব্র আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন স্বপ্নিলকে অস্থায়ী বহিষ্কার করে । এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) তার মামলা ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানায় কুবির শিক্ষার্থীরা।