জহিরুল হক বাবু
কুমিল্লা নগরীতে দিন দিন বেড়ে চলেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইকারী চক্রের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীরা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছিনতাই এখন নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
এদিকে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরার অধিকাংশই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এসব ক্যামেরা মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
টানা ছিনতাই, আহতের সংখ্যা বাড়ছে
৭ আগস্ট ভোর ৬টার দিকে নগরীর টমছম ব্রিজ সংলগ্ন কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার পাশে এক মাদ্রাসা শিক্ষক ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। তার কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
৪ আগস্ট শাসনগাছা এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন চান্দিনার বাসিন্দা ইব্রাহীম। তার কাছ থেকেও মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পর ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। একইদিন সকালে বসন্তপুর স্বতন্ত্র মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান টমছম ব্রিজ এলাকায় ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। হাতব্যাগ ছিনিয়ে নিতে বাধা দিলে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে তিনি কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গেলো কয়েক মাসের ভয়াবহ চিত্র
সম্প্রতি কুমিল্লা নগরীর পুরাতন চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা কালিপদ দেবনাথ ও তার বন্ধু কক্সবাজার থেকে ফেরেন। ২ আগস্ট ভোর রাতে তারা লাকসাম সড়কের সালাউদ্দিন মোড়ে পৌঁছালে সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে আসা পাঁচজনের একটি ছিনতাইকারী দল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ১৭ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
কালিপদ দেবনাথ জানান, হঠাৎ করে তারা ঘিরে ধরে অস্ত্র ঠেকিয়ে সব কিছু নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন। একই সড়কে বৃহস্পতিবার ও বুধবারও দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, তবে ভুক্তভোগীরা পুলিশকে জানাননি।
সাইফুল নামে এক ভুক্তভোগী জানান, টমছম ব্রিজ এলাকায় ছিনতাইকারীরা এক ধরনের ‘রাজত্ব’ কায়েম করেছে। একবার তিনি ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় ছিনতাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পান। ছোটন ভৌমিক নামে আরেকজন বলেন, দক্ষিণ চর্থা, সালাউদ্দিন মোড়, ঠাকুরপাড়া প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট এলাকায় নির্জন মুহূর্তে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
টাকা-পয়সা নিয়ে চলাচলে ভয়ের পরিবেশ
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিক শিল্পনগরীর একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ঠাকুরপাড়া, বিসিক শিল্প এলাকা, ছায়াবিতান ও দৌলতপুর এলাকায় টাকা-পয়সা নিয়ে নিরাপদে চলাচল করা যায় না। রাত হলে মাদকাসক্ত একদল যুবক টাকার জন্য হিংস্র হয়ে ওঠে। এসব এলাকায় রাতে পুলিশের টহল চোখে পড়ে না বলেও অভিযোগ তাদের।
এছাড়া সম্প্রতি টাউনহলে অনুষ্ঠিত এনসিপির পথসভা শেষে একাধিক মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি হয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য ও করণীয়
চুরি ও ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশের উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহিনুল ইসলাম বলেন, “আসলে লিখিত অভিযোগ খুব বেশি পাইনি। তবে যেসব এলাকায় ছিনতাই বেশি হচ্ছে, সেসব জায়গায় টহল বৃদ্ধি করা হবে। পাশাপাশি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের ধরতে এলাকাভিত্তিক অভিযান চালানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সিটি কর্পোরেশনকে সিসিটিভি ক্যামেরা সংস্কারের বিষয়ে জানিয়েছি। তারা দ্রুত মেরামতের আশ্বাস দিয়েছে। যেখানে ক্যামেরা নেই সেখানে নতুন ক্যামেরা স্থাপন জরুরি।”
নগরবাসীর প্রত্যাশা
কুমিল্লাবাসীর আশা—দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে নগরীতে ছিনতাইয়ের দৌরাত্ম্যের অবসান ঘটানো হবে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।