নেকবর হোসেন।।
‘যাবার দিনে এ কথাটি জানিয়ে যেন যাই যা দেখেছি, যা পেয়েছি তার তুলনা যে নাই’.. রবি ঠাকুরের কবিতার লাইন দুটি যেনো বার বার জানান দিচ্ছে সিনিয়র সহকারি জজ এর পদমর্যাদা সম্পন্ন একজন মানবিক ও দৃঢ়চিত্তের বিচারকের বিদায়বেলায়।যিনি প্রায় পাঁচ বছর কুমিল্লা জেলাা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে কর্মরত থেকে কর্মজীবনের সবটুকু সততা দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নাম ফারহানা লোকমান।
নিয়মের আবর্তেই তিনি বদলীজনিত কারণে বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) কুমিল্লা জজকোর্ট ভবনে অবস্থিত জেলা লিগ্যাল এইড অফিস ছেড়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে ফেনী জেলায় যোগদান করছেন।
নতুন কর্মস্থলে যাওয়ার আগে ফারহানা লোকমানকে ফুলেল ভালোবাসা ও সম্মাননায় সিক্ত করেছেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের প্যানেল আইনজীবীসহ অফিসের সহকর্মীগণ।
লিগ্যাল এইড পরিবারের এ ভালোবাসার জবাবে বিদায়ী এ কর্মকর্তার উক্তি ছিল- ‘যাবার বেলায় আমি অনেক তৃপ্ত আমাদের আইনজীবী ও সহকর্মীদের অফুরন্ত ভালোবাসায়। কুমিল্লায় কর্মজীবনে আমি আমার সবটুকু সততা দিয়ে বিচার, নিষ্পত্তি, পরামর্শমূলক কাজ করেছি। লিগ্যাল এইডের এই কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ কর্মযজ্ঞ একেবারে শেষ হয়না। আমি চলে যাচ্ছি, আমার স্থলে যিনি আসছেন তিনিও এভাবে কাজ করে যাবেন।
লিগ্যাল এইডে এসে দরিদ্র,অসহায় বিচার প্রার্থীরা সরকারি খরচে তাদের মামলা, আইনি পরামর্শ সংক্রান্ত সহায়তা নির্বিঘ্নে পেয়েছেন উল্লেখ করে সিনিয়র সহকারি জজ ফারহানা লোকমান বলেন, কুমিল্লায় লিগ্যাল এইডের র্কাক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে আমার সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়ে সাধ্যমত কাজ করেছি। লিগ্যাল এইডের কার্যক্রমের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এখানে বিচার প্রার্থীদের হয়রানী কমেছে। মামলা যেমন বেড়েছে তেমনি নিস্পত্তির সংখ্যাও বেড়েছে। কুমিল্লা জেলা লিগ্যাল এইডের আজকের এই গতিশীলতা আমাকে পুলকিত করেছে।
ফারহানা লোকমান বলেন,কুমিল্লায় আমার কর্মজীবনের শেষদিন পর্যন্ত চেষ্টা করেছি অসহায়, সুবিধাবঞ্চিতদের সেবা দিয়ে যেতে। কখনো সফল হয়েছি কখনো বরণ করতে হয়েছে ব্যর্থতা। তবে আন্তরিকতার অভাব ছিলো না কখনো। অনেক চেহারা মনে চোখে ভাসছে আজ। যার কোনটা ছোট্ট শিশুর, কোনটা অসহায় বৃদ্ধের, কোনটা যোদ্ধা কোন নারীর, কোনটা অধিকার বঞ্চিত বোনের, কোনটা অসহায় মুক্তিযোদ্ধার। যে সব কাজ শুরু করেছিলাম কিন্তু শেষ করতে পারিনি তাদের কথাও মনে পরছে খুব। আমি নেই তো কি হয়েছে! লিগ্যাল এইড অফিস কুমিল্লা আছে। এতে মানুষের আনাগোনা থাকবে, হাসিকান্না থাকবে। লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে আমি যা দিয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী কর্মস্থলে আমার পাথেয় হয়ে থাকবে।
কুমিল্লার বিচারাঙ্গণে নিয়োজিত সকলের ভালোবাসা, সহযোগিতা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমার মনে থাকবে। এ ভালোবাসা সহযোগিতা কখনোই মুছে যাবার নয়।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page