নিজস্ব প্রতিবেদক, সদর দক্ষিণ।।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বীকৃতি কিংবা শহীদদের তালিকায় আজও নাম উঠেনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড সংলগ্ন উত্তর রামপুরের নয় শহীদের । তাঁদের লাশ কোথায় দাফন হয়েছে আজও তা জানার সুযোগ হয়নি । নয় শহীদ পরিবার ও পাকিস্তানিদের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণে বেঁচে যাওয়া সায়েদ আলীর পরিবার স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আজ অবধি বিভিন্ন জনের কাছে ধরণা দিয়েও কোন প্রকার স্বীকৃতির মুখ দেখেনি ।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল শুক্রবার। জুম্মা’র নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড সংলগ্ন উত্তর রামপুর (মিস্ত্রি পুকুর পাড়) এর শহীদ আলী মিয়া মজুমদার, শহীদ গণি মিয়া মজুমদার, শহীদ আহমদ আলী,শহীদ আছমত আলী,শহীদ সুলতান আহমদ আর্মি, শহীদ মফিজ উদ্দিন, শহীদ আব্দুল গফুর,শহীদ আব্দুল খালেক, মোঃ সায়েদ আলী,মোঃ আব্দুল মজিদ ও অজ্ঞাতনামা আরো একজনকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানিরা। পাকিস্তানিদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ভাগ্যক্রমে মোঃ সায়েদ আলী ও মোঃ আব্দুল মজিদ বেঁচে গেলেও অন্যান্যরা আর ফিরে আসে নি। তাঁদের লাশ কোথায় দাফন হয়েছে আজও তা জানার সুযোগ হয়নি শহীদ পরিবারের। কিন্তু বিজয়ের ৫০ বছরে এই শহীদদের নামে কোন স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়নি। এমনকি শহীদদের নামের তালিকায় পর্যন্ত তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
১৯৭১ সালের পাকিস্তানীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে উত্তর রামপুরের মোঃ সায়েদ আলী অশ্রুঝরা কন্ঠে বলেন, ৩০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা আমাকে আটক করে প্রথমে কুমিল্লা এয়ারপোর্টে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখান থেকে বাছাই করে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে একদিন এক রাত্র হাত-পা ঝুলিয়ে আমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। মহান আল্লাহ তায়ালা অশেষ মেহেরবানীতে প্রাণে বেঁচে যাই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোন প্রকার সার্টিফিকেট পেয়েছেন কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে পাকিস্তানিদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছি, কোন প্রকার সার্টিফিকেটের জন্য নয়। বেঁচে আছি,ভালো আছি এতটুকুতেই সন্তুষ্ট।
উত্তর রামপুর মধ্যমপাড়া শহীদ আলী মিয়া মজুমদারের ছেলে ফরিদ আহমদ মজুমদার জানান, দিনটি ছিল ৩০ এপ্রিল শুক্রবার ১৯৭১ সাল। জুম্মা’র নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমার বাবা শহীদ আলী মিয়া মজুমদার,তাঁর সহোদর গণি মিয়া মজুমদারসহ একই দিনে মোট এগারোজন কে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানিরা। এদের মধ্যে ভাগ্যক্রমে দুই জন বেঁচে আসতে পারলেও বাকি নয়জন পাকিস্তানিদের হাতে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বহু সরকার ক্ষমতায় এসেছে। শহীদদের স্বীকৃতি বা সম্মাননা তো দূরের কথা, কোন সরকার এ পর্যন্ত উত্তর রামপুর এলাকার শহীদ পরিবারগুলোর কোনো খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয়নি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ লালনের মধ্য দিয়ে অদ্যবদি রাজনীতি করে আসছি। বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান শেখ হাসিনা, কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একটাই চাওয়া উত্তর রামপুরের শহীদদের স্বরণে যেন মিস্ত্রিপুকুরপাড় এলাকায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদদের স্বরণ রাখতে পারবে।
উত্তর রামপুর ছয় বাড়ির শহীদ আহমেদ আলীর নাতি রুহুল আমিন মজুমদার জানান, আমার দাদা আহমদ আলী দেশের জন্য প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন। আরেক চাচা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় পর পর তিনবার আমাদের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে পাকিস্তানিরা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য কোন প্রকার স্বীকৃতি কিংবা স্মৃতি রাখার ব্যবস্থা হয়নি। একজন শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়াটা খুবই দুঃখজনক। আর্থিক সহযোগিতা নয়, শহীদ হিসাবে সরকারের লিষ্টে কমপক্ষে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
শহীদ আছমত আলীর ছেলে হাজী সেলিম মিয়া জানান, শহীদ পরিবারের সদস্য হয়েও বিজয়ের সূবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন স্বীকৃতি কিংবা সুযোগ সুবিধা পাইনি। এটা খুবই দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভাশিস ঘোষ জানান, তালিকাভুক্ত শহীদদের স্বরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল জানান, দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়া শহীদদের নাম তালিকাভুক্ত না হওয়া অত্যান্ত দুঃখ জনক। শহীদ পরিবারকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন এর পরামর্শ দেন তিনি।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page