নেকবর হোসেন।।
৪ ডিসেম্বর দেবীদ্বার পাক হানাদার মুক্তদিবস। ১৯৭১সালের এই দিনে দেবীদ্বার পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করার লক্ষ্যে দেবীদ্বার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। সকাল ১০টায় সর্বস্তরের জনতার উপস্থিতিতে উপজেলা কমপ্লেক্স থেকে একটি বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের স্মরনে দেবীদ্বার নিউমার্কেট মুক্তিযোদ্ধা চত্তর ও গণকবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, উপজেলা পরিষদ চত্তরে ‘হল রোমে’ আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধে দেবীদ্বার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা করা হয়েছে।
১৯৭১ সলের রক্তে ঝরা দিনগুলোতে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমনে হানাদার মুক্ত হয়েছিল কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল। তারই ধারাবাহিকতায় দেবীদ্বার এলাকা হানাদার মুক্ত হয়েছিল ৪ ডিসেম্বর। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে ওইদিন হানাদারদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা করে। ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী ‘কুমিল্লা-সিলেট’ মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ সেতুটি মাইন বিষ্ফোরনে উড়িয়ে দেয়। মিত্রবাহিনীর ২৩ মাউন্ড ডিভিশনের মেজর জেনারেল আর.ডি হিরার নেতৃত্বে বৃহত্তর কুমিল্লায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংক বহর বুড়িচং ব্রাক্ষনপাড়া হয়ে দেবীদ্বারে আসে। হানাদাররা ওই রাতেই দেবীদ্বার ছেড়ে কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসে পালিয়ে যায়। ধীরে ধীরে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন গ্রুপ দেবীদ্বার সদরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরই মধ্যে মিত্রবাহিনীর ট্যাংক বহরটি দেবীদ্বার থেকে চান্দিনা রোডে ঢাকা অভিমুখে যাওয়ার সময় মোহনপুর এলাকায় ভুল বোঝাবুঝির কারনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গুলি বিনীময় হলে মিত্রবাহিনীর ৬ সেনা সদস্য নিহত হয়। এই দিনে দেবীদ্বারের উল্লাসিত জনতা ও মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে বিজয় উল্লাসে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে মেতে উঠে। দুপুর পর্যন্ত ওইদিন হাজার হাজার জনতা বিজয় উল্লাসে উপজেলা সদর প্রকম্পিত করে তোলে।
তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্ট সন্নিকটে থাকায় এঅঞ্চলের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। স্বাধীনতা ঘোষনার মাত্র ৩ দিনের মধ্যেই অর্থাৎ ২৯মার্চ রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরের বাইরে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সু-সজ্জিত ১৪জনের একটি দল ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে পায়ে হেটে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সেনা ছাউনি কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনম্যান্টে যাওয়ার পথে দেবীদ্বার এলাকায় স্থানীয় জনতার সাথে সন্মূখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। ওই যুদ্ধে নিরস্ত্র বাংগালীরা পুরো দলটিকে পরাস্ত করে বিজয় ছিনিয়ে আনার গৌরব অর্জণ করে। স্বাধীনতা ঘোষনার মাত্র ৩ দিনের মধ্যে রাজধানী, বিভাগীয় ও জেলা শহরের বাইরে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সু-সজ্জিত ১৪সদস্যের পাক সেনার একটি দলকে পরাস্ত করে নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের বিজয় ছিনিয়ে আনার গৌরব সম্ভবতঃ এটাই বাংলাদেশে প্রথম।
যে যুদ্ধটি ‘ভিংলাবাড়ি-জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে সমজিদ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত এবং কাক ডাকা ভোর রাত থেকে সন্ধ্যা নাগাদ এ যুদ্ধে ১৪ পাক সেনাকে হত্যা করতে আবুল কাসেম, সৈয়দ আলী, আব্দুল মজিদ, তব্দল ড্রাইভার, মমতাজ বেগম, সফর আলী, নায়েব আলী, সাদত আলী, লালমিয়া, ঝারু মিয়া, আব্দুল ড্রাইভার, ফরিদমিয়া, আব্দুর রহিমসহ ৩৩বাঙ্গালী শহীদ ও অর্ধশতাধিক বাঙ্গালী আহত হয়েছিলেন। যে যুদ্ধে দেবীদ্বার থানার অস্ত্রাগার লুন্ঠন করে ওই লুন্ঠিত অস্ত্র এবং বঙ্গজ হাতিয়ার লাঠি, দা, সাবল এমনকি মরিচের গুড়া নামক অস্ত্রটিও শত্রু নিধনে ব্যবহার হয়েছিল সেদিন।
১৪এপ্রিল সমতট রাজ্যের রাজধানী খ্যাত এবং হিন্দু অধ্যুসিত বরকামতা গ্রামে পাক হানাদাররা হামলা চালানোর সংবাদে কমিউনিস্ট নেতা আব্দুল হাফেজের নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ হাজার বাঙ্গালী মাত্র দুটি থ্রী-নট থ্রী রাইফেল ও লাঠি নিয়ে শত্রুসেনাদের উপরঝাপিয়ে পড়ে। রাইফেলের গুলিতে এক প্লাটুন সৈন্যেও পাঁচজন লুটিয়ে পড়লে কিংকর্তব্য বিমূঢ় পাক সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ওই রাতে ফিরে এসে হিংস্র হায়ানারা লুটপাট, নির্যাতনসহ অগ্নীসংযোগে পুরো গ্রামটি জ¦ালিয়ে ছারখার করে দেয়।
২৪জুন মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার বাখরাবাদ গ্রামে পাক হায়ানাদের এক নারকীয় হত্যাজজ্ঞে অগ্নীসংযোগ লুটপাট, নারী নির্যাতনসহ ২৪০ নিরীহ বাঙ্গালীকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ওই দিন ২১যুবককে ধরে দেবীদ্বার ক্যাম্পে আনার পথে একজন পালিয়ে গেলেও অপর ২০জনকে দেবীদ্বার সদরে পোষ্ট অফিস সংলগ্নে ধৃতদের কর্তৃক গর্ত খুড়ে চোখ বেঁধে ব্রাস ফায়ারে হত্যা করে একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলে বাকী ১৯জনকে ওই গর্তে চাপা দেয়া হয়। দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক দীর্ঘ আন্দোলনের পর গত আগষ্ট মাসে ওই বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মান করা হয়।
৬সেপ্টেম্বর রাজাকারদের সহযোগীতায় পাক হায়ানারা বারুর গ্রামে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিলে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল সম্মূখ সমরে জয়নাল আবেদীন, বাচ্চুমিয়া, শহিদুল ইসলাম,আলী মিয়া, আব্দুস সালাম, সফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেনসহ ছয় মুক্তিযোদ্ধা শাদাত বরণ করেন ভাগ্যক্রমে অপর একজন বেঁেচ যান।
১৪ সেপ্টেম্বর দেবীদ্বার উপজেলার মহেশপুর গ্রামে পাক হায়েনাদের বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ ১৪ নিরীহ বাঙ্গালী ।
২নং সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নির্দেশে নারায়নগঞ্জ নৌবন্দর ধ্বংস করতে যাওয়া ১৭ সেপ্টেম্বর নৌ-কমান্ডো’র ল্যাপ্টেন্যান্ট মোঃ ফজলুল হকের নেতৃত্বে নৌকমান্ডের ৫সদস্যের একটি দল বাগিরতি নদীর তীরে ট্রেনিং শেষে দেবীদ্বার পোনরা হয়ে যাওয়ার পথে পাক সেনাদের সাথে মুখমুখী যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এ যুদ্ধে নারায়নগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা আবুবকরসহ ২জন যোদ্ধা শহীদ হন।
ওই সময় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের রাজামেহার এলাকায় মাইন বিস্ফোরনে সাত পাকসেনা নিহত হলে ওই এলাকার দু’পাশের প্রায় তিন কিলো মিটার এলাকা জ্বালিয়ে দেয় শত্রুসেনারা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেবীদ্বার উপজেলার নলআরায় (ফতেহাবাদ গ্রামের একটি গভীর জঙ্গল) এবং ন্যাপ প্রধান এলাহাবাদ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page