ফয়সাল মিয়া, কুবি।।
ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বৈষম্যবিরোধী সাংস্কৃতিক মঞ্চের উদ্যোগে কাওয়ালী গান পরিবেশন করা হয়েছে।
সোমবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ এ কাওয়ালী গানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মুক্তমঞ্চে ভীড় করতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক- বর্তমান ও এলাকার স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ৷ তাদের সাথে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় এলাকার স্থানীয় লোকদের।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব কাওয়ালী গানের আসর বসানো হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পর মূলত এসব কাওয়ালী গানের আসর সারা দেশে ব্যাপকভাবে সারা পাচ্ছে।
গণ আত্মার কবিতা দ্রোহের গান কাওয়ালী সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ঢাকার একটি দল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের দর্শক মাতিয়েছে। কাওয়ালী সন্ধ্যায় কাওয়ালী গানের পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গান ও কবিতা পাঠ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
কাওয়ালি সুফিদের গান। বহুকাল আগে সুফী-সাধকগণ খোদার প্রেমে মশগুল হয়ে বিশেষ কোনো নামের জিকির করতেন। অর্থাৎ, একই শব্দ বা বাক্য পুনরাবৃত্ত করতেন। সুরের মাধ্যমে এই পুনরাবৃত্তি ঘটলে তাকে কাওয়ালি বলা হতো। অষ্টম শতাব্দীতে পারস্যের বিভিন্ন সুফি আস্তানায় এধরণের গানের আসর বসতো। একে মাহফিল-ই-সামা নামেও অবহিত করা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, ৯০০ খ্রিস্টাব্দে সুফি মতবাদ ও দর্শন বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। দার্শনিক কথাবার্তার সমন্বয়ে রচিত হওয়া এসব গানের আয়োজন তৎকালীন সুফিবাদ চর্চার অন্যতম মাধ্যম ছিল। কবি আবু হামিদ আল গাজ্জালি (১০৫৮-১১১১ খ্রিস্টাব্দ) এসব গান রচনার জন্য পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত গজলের অন্যতম স্রষ্টা।
চিতশীয়া ধারার প্রবর্তক হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রা.) নিজেও ধর্মীয় এই গানের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। হযরতের বিখ্যাত শিষ্য ছিলেন কুতুবুদ্দদিন বখতিয়ার কাকী (রহ.) এবং দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়া (র.) প্রমুখ। বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত আছে যে, কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী (র.) সামা সংগীতে টানা কয়েকদিন মশগুল থাকতেন। এরপর নিজামুদ্দিন আউলিয়ার (র.) দরবারেও কাওয়ালির আসর বসতো। নিজামুদ্দীন আউলিয়ার (র.) প্রিয় শিষ্য হযরত আমির খসরু (র.) কাওয়ালি গানকে রীতিসিদ্ধ করেন। অর্থাৎ, কাওয়ালিকে একটি নিয়মের মধ্যে এনে প্রচার করেন তিনি। এজন্য তাকে কাওয়ালীর জনক বলা হয়। সুফিবাদ চর্চার পাশাপাশি তিনি একাধারে কবি, গায়ক এবং একজন যোদ্ধাও ছিলেন। তার উপাধি ছিল ‘তুত-ই-হিন্দ’ বা হিন্দের তোতা পাখি।
কাওয়ালী সন্ধ্যার আয়োজন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী সাংস্কৃতিক মঞ্চের আহবায়ক হান্নান রহিম জানান, “বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে কাওয়ালী। সংস্কৃতির এই অংশটাকে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত করে রাখা হয়েছিলো। সংস্কৃতির সকল সেক্টরকে সম্মান জানানো উচিত সবার। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে এই স্বৈরাচারীর সময়ে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠান, কাওয়ালীর অনুষ্ঠান, সিরাত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তারই প্রতিবাদ আমরা এখন সব জায়গায় দেখছি। প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাওয়ালীর আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে পরিবেশনা করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাওয়ালী দল সঞ্চারী, কুমিল্লা শহরের দ্রোহের গানের একটি দল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আজাদী মঞ্চ। প্রোগ্রামের শুরু থেকেই মঞ্চের আশপাশ কাওয়ালী প্রেমীদের আনাগোনায় ভরে ওঠে। দর্শকবৃন্দের এমন আগ্রহে আমরা অনেক বেশি অনুপ্রাণিত। সামনের দিনগুলোতে কাওয়ালী নিয়ে আমাদের আরো বড় পরিকল্পনা থাকবে।”
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page