অনলাইন ডেস্ক।।
কুমিল্লা জেলায় প্রায় ৬৫ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেওয়ার জন্য শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রতীক। অথচ ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরেও কুমিল্লা শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনও পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান বলছেন নকশা বিড়ম্বনা থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা যাচ্ছে না। সরকার নকশা নির্ধারণ করলে নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।
কুমিল্লা জেলায় ২ হাজার ১০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তারমধ্যে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে মাত্র ৭১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর বাকি ১ হাজার ৩৮৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই। শিশুরা জাতীয় দিবসগুলোতে বাঁশ, কলাগাছ ও কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে তাতেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়েও শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছেন। এতে করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পেতে হয়। সেই সাথে নানা সময় ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।
বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল ও স্মৃতিবিজড়িত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মরণে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এই দিন সরকারি ছুটির দিন হলেও, দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় খোলা থাকে। ভাষা শহীদদের স্মরণে সর্বস্তরের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরিতে বের হন শহীদ মিনারে ফুল দিতে। আর যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেখানে তৈরি করা হয় অস্থায়ী শহীদ মিনার। ভাষা শহীদদের স্মরণে বিদ্যালয়গুলোতে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সবাই মিলেই বিদ্যালয়গুলোতে উদযাপন করে থাকেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার উদাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ শতাধিক। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে তারা ইট, বাঁশ বা কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানায়।
এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জোনাইদ জানায়, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার না থাকায়, ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হতো না। ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির দিন কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে তারা।
মুরাদনগর উপজেলার কুলুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্থানীয় অভিভাবক মোরর্শেদা আক্তার জানান, এই বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। স্কুল জরাজীর্ণ। স্কুলের জায়গা দখল করে স্থানীয় একটি চক্র ভবন তৈরি করছে। যার কারণে এই বিদ্যালয়ে কোনও খেলার মাঠও নেই। জায়গা সংকটে স্থাপন করা যাচ্ছে না শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দেওয়া তথ্য মতে, কুমিল্লা জেলায় ২ হাজার ১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলায় ৬০, লাকসামে ৫৭, দেবিদ্বারে ১২৯, মুরাদনগরে ১১২, দাউদকান্দিতে ১২৭, চৌদ্দগ্রামে ১৭, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯১, বরুড়ায় ১১৮, বুড়িচংয়ে ১২১, চান্দিনায় ৪১, হোমনায় ৬৮, নাঙ্গলকোটে ১৩৮, মেঘনায় ৫৩, মনোহরগঞ্জে ৮৬, তিতাসে ৬২, সদর দক্ষিণে ৬৬ এবং লালমাইয়ে ৪৩ মোট ১ হাজার ৩৮৯টি বিদ্যালয়ে ২১ ফেব্রুয়ারির দিন ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনার নেই। তারমধ্যে কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসার সঙ্গে একই ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদের ফুলের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনার নেই কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কাশই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন জানান, তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারির দিন শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে অনেক বেগ পেতে হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা গেলেও ভাষা শহীদের শ্রদ্ধার জানানোর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অজানা থেকে যায়।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল মান্নান বলেন, কুমিল্লা জেলায় ২ হাজার ১০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তারমধ্যে ৭১৭টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকালেও বাকি ১ হাজার ৩৮৯টি বিদ্যালয়ে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদের শ্রদ্ধা জানানো জন্য শহীদ মিনার নেই। বর্তমানে সরকারের নির্দেশে শহীদ মিনার নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। কারণে একই নকশায় দেশের সকল শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। নকশার জন্য কোনও কোনও বিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন শহীদ মিনারের কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে। নকশা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের নকশা ঘোষণা করলেই কুমিল্লা জেলার যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেখানে সর্বপ্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page