চান্দিনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নেয়া আ’লীগ নেতাকে মারধরের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার।।
এখনো প্রতীক বরাদ্দ হয়নি। শুরু হয়নি আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। এর আগেই উত্তপ্ত হয়েছে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) সংসদীয় আসনের মাঠের পরিবেশ।এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটুর পক্ষে কাজ করায় মহিচাইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মফিজুল ইসলামের উপর হামলা করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ।

এ সময় তাকে মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়। স্থানীয় মানুষ ছুটে আসায় মফিজুল ইসলাম প্রাণে রক্ষা পায় বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হুমকি প্রদান, টিটুর লোকজনের ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট বন্ধ করা, বিভিন্ন পরিচয়ে ডেকে নিয়ে টিটুর সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য হুমকি প্রদান অব্যাহত রয়েছে, যা সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে অন্তরায় বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে কেরখাল ইউনিয়নের ডুমরিয়া ব্রিজ পার হওয়ার পর এ হামলার ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুল ইসলাম ওই সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে মফিজুল ইসলাম বাড়ি ফেরার পথে যখন কেরনখাল ইউনিয়নের ডুমরিয়া ব্রিজ পার হচ্ছিলেন তখন শাহজাহানের নেতৃত্বে আরো ৪/৫ জন মফিজুল ইসলামের উপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় তাকে হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়।

পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করারও চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীয়রা ছুটে আসায় হামলাকারিরা চলে যায়। মফিজুল ইসলামের পরিবার এখন আতংকে রয়েছেন।

এর আগে ৭ নভেম্বর চান্দিনার মহিচাইলে আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিল করার প্রাক্কালে এমপি প্রাণ গোপাল মুঠোফোনে এই আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুল ইসলামকে হুমকি দেন। ওই সময় সাংসদ ডা. প্রাণ গোপাল মুঠোফোনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুল ইসলামকে বলেন-টিটুর (চান্দিনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুন্তাকিম আশরাফ টিটু) কি মিছিল বের করতাছো মহিচাইল বাজারে ? তখন মফিজুল ইসলাম উত্তরে বলেন- টিটুর না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিছিল বের করতাছি। তখন এমপি প্রাণ গোপাল আবার বলেন- মিছিলে টিটুর নাম উচ্চারিত হয়, একবারও যাতে না শুনি। টিটুর নামে যদি কোন শ্লোগান হয়, তাহলে এটার জবাব আমি তোমার কাছ থেকে নিবো। এটা আমার শেষ কথা। তখন মফিজুল ইসলাম বলেন- স্যার, আমার অপরাধ কি ? তখন এমপি প্রাণ গোপাল আবার বলেন- তুমি টিটুর নামে কেন শ্লোগান দিবা ? তখন মফিজুল ইসলাম বলেন- টিটু তো আওয়ামীলীগ করে, আমি আওয়ামী লীগ করি এবং আপনি আওয়ামী লীগ করেন।

আপনি তো আমারে একসেপ্ট (গ্রহণ) করেননি। আমি এখনো দলেই আছি। আমার অপরাধটা কি ? তখন এমপি ডা. প্রাণ গোপাল রাগান্বিত হয়ে বলেন- অপরাধটা টের পাইবি, টের পাইবি, আমি আসতাছি কিছুক্ষণ পরেই। এই বলে ফোন কেটে দেন এমপি ডা. প্রাণ গোপাল।

এছাড়া মফিজুল ইসলামের উপর হামলার নেতৃত্বদানকারি শাহজাহানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের স্ট্যাটাস এলাকাজুড়ে আতংক ছড়িয়েছে। শাহজাহানের ফেসবুক স্ট্যাটাস হল: “ ৭ দিন সময় যারা আওয়ামী লীগ করেন, বরকইট ইউনিয়নের নৌকার পক্ষে কাজ শুরু করেন, না হয় ভয়াবহ অবস্থা হবে ।”

এদিকে উপজেলার বাতাঘাষি ইউনিয়নে মুন্তাকিম আশরাফ টিটুর অনুসারি ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের উদ্বোধন করায় খেলা বন্ধ করে দেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও প্রশাসন, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। জুয়া-মাদক বন্ধ না করে খেলা বন্ধ করার বিষয়টি সর্বমহলে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরব রয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ছাত্রলীগ নেতা আহাম্মেদ ফয়সাল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন : আজকে সাতগাঁও শর্ট বাউন্ডারি নাইট টুর্নামেন্ট মুন্তাকিম আশরাফ টিটু ভাইয়ের কর্মী উদ্বোধন করার কারণে খেলা শুরু হওয়ার মাঝপথে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রশাসনের হস্তক্ষেপে খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধিক্কার জানাই এমন কর্মকাণ্ডে!

ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা মোঃ রাজিন বেপারী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন : আজকে সাতগাঁও শর্ট বাউন্ডারি নাইট টুর্নামেন্ট মুন্তাকিম আশরাফ টিটু ভাইয়ের অনুসারি ছাত্রলীগ কর্মী উদ্বোধন করার কারণে খেলা শুরু হওয়ার মাঝপথে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধিক্কার জানাই এহেন কর্মকাণ্ডে! কেন খেলা বন্ধ করা হলো তার জবাব চাই? জুয়া খেলা বন্ধ না করে কেন ক্রিকেট খেলা বন্ধ করা হলো?

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এমপি প্রাণ গোপাল ও চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চান্দিনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুন্তাকিম আশরাফ টিটু দুইজনেই আওয়ামী লীগ করেন। আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন যারা পায় নি, তাদের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর পথ খোলে দিয়েছেন। তিনি একটি স্বচ্ছ, অবাধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চান।

তাই মুন্তাকিম আশরাফ টিটুও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তো বিএনপি-জামায়াত না। টিটু সাহেবের পিতা প্রয়াত সাংসদ অধ্যাপক আলী আশ্রাফ কয়েক যুগ এই চান্দিনার সেবা করেছেন। আমরা তার অনুসারি। এটা কি আমাদের দোষ।

এভাবে হামলা-হুমকি দিলে তো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ থাকবে না। আমাদের মনে হয় না এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে আমাদের অনেককে টিটুর পক্ষে কাজ না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে । এখনো প্রতীক বরাদ্দ হয়নি, প্রচারণা শুরু হয়নি। এমন অবস্থা বিরাজ করলে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনভাবেই সম্ভব না। আমরা নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: সাহাবুদ্দিন খান জানান, আওয়ামী লীগ নেতার উপর হামলার বিষয়ে কেউ আমাকে অবহিত করেনি। এমনকি খেলা বন্ধসহ কোন বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন অভিযোগ আমি পাইনি। পাইলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page