স্টাফ রিপোর্টার।।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একটি সুবিধাবাদী চক্র বিএনপির নেতা বা দলের নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় মাঠে নেমেছেন। সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দশপাড়া গ্রামে স্থানীয় বিএনপির অতিউৎসাহীরা সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম খন্দকার মোশতাক আহমাদের বাড়ির সংস্কার কাজ বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। এক সপ্তাহেও ঘরের চাবি ফিরিয়ে না দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাবেক ওই রাষ্ট্রপতির পুত্র কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে অবস্থানরত খন্দকার ইশতিয়াক আহমাদ। তিনি বিষয়টি বিএনপির কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতাদের অবগত করে সহযোগিতা চেয়েছেন। এছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে তালা ঝুলানোর বিষয়টি ঘিরে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ির কেয়ারটেকার নিজাম উদ্দিন জানান, ‘গত ১৩ আগস্ট বাড়ির সংস্কার ও মেরামত কাজ চলাকালে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপি নেতা আক্তারুজ্জামান সহ কয়েকজন এসে জানতে চায় পীর সাহেবের বাড়ি কোনদিকে। আমি দেখিয়ে দিলে ওনারা সেখানে যান। এরপর বিকেল ৫টার দিকে দাউদকান্দি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবদুল লতিফ, স্থানীয় বিএনপি নেতা জসীম উদ্দিন ও শ্রমিকদল নেতা আবদুর রাজ্জাক এসে একই কথা জিজ্ঞেস করেন। এরপর তারা বাড়ির উত্তর দিকে কিছুটা দূরে খন্দকার নাসিরুল কবীরের বাড়িতে যান। বেশ কিছুক্ষন পর সেখান থেকে তারা ফিরে আসেন। পরে শ্রমিকদলের রাজ্জাক মেরামত কাজ বন্ধ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি স্যারের বাড়ির গেইটে তালা লাগিয়ে চলে যান।’
এবিষয়ে বুধবার (২১ আগষ্ট) সকাল সাড়ে দশটায় কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে অবস্থানরত খন্দকার ইশতিয়াক আহমাদ মুঠোফোনে জানান, শেখ মুজিবুর রহমানের দু:শাসন থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট এই দেশকে মুক্ত করেছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমাদ। আজকে এই সাহসী মানুষটির বাড়ির সংস্কার কাজ বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এটি অত্যন্ত দু:খজনক। আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে প্রশয়ে থাকা আমার আত্মীয় খন্দকার নাসিরুল কবীর ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য তার ভাগ্নি জামাতা বিজুকে দিয়ে স্থানীয় বিএনপির কিছু নেতাদের ব্যবহার করে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে বেআইনিভাবে তালা লাগানোর ঘটনাটি নিন্দনীয় ও অন্যায়। আমি বিষয়টি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য দাউদকান্দির অভিভাবক শ্রদ্ধেয় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ওনার পুত্র বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার মারুফ হোসেন সহ সিনিয়র নেতাদের জানিয়ে এব্যাপারে সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু যারা বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে চাবি নিয়ে গেছে তা এক সপ্তাহেও ফেরত দিচ্ছে না।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে দাউদকান্দি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আবদুল লতিফ বলেন, ‘দশপাড়া গ্রামে পীর সাহেবের বাড়ির সীমানা দেয়াল ভেঙ্গেছে মর্মে দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনায় ঘটনাস্থলে গিয়ে যারা দেয়াল ভেঙ্গেছে তাদের সনাক্ত করে তা নির্মাণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিলে অভিযুক্তরা এটি রাতের মধ্যেই করে দেয়। কিন্তু আমরা যখন শেষবিকেলে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসছিলাম তখন আমাদের মধ্যে কেউ সাবেক রাষ্ট্রপতি মোশতাক সাহেবের বাড়ির গেইটে তালা লাগিয়ে চাবি ওনাদের প্রতিপক্ষের লোকের হাতে দিয়ে এসেছে। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না।’
এবিষয়ে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, ‘দশপাড়া গ্রামে যারা বাড়ির দেয়াল ভেঙ্গেছে তাদেরকে নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে যাতে মেরামত করে দেয় এজন্য সেখানকার বিএনপি নেতাদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। তারা বিষয়টি মিমাংসার পর দেয়ালের ভাঙ্গা অংশ নির্মাণ করিয়ে নিয়েছে।কিন্তু এখন শুনতেছি যারা গেছে তারা নাকি সাবেক রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক সাহেবের বাড়িতে তালা দিয়েছে। এটাতো তারা করতে পারেন না। সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা থাকলে, মামলা থাকলে এটি আদালত দেখবে। দলের লোকজন অতি উৎসাহী হয়ে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে তালা ঝুলাবে কেন? দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা রয়েছে কোন অন্যায় কাজে কোন নেতাকর্মী যুক্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা। আমি দাউদকান্দি বিএনপির আহবায়কের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলবো।’
এদিকে দশপাড়া গ্রামের লোকজন সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে তালা লাগানোর ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে জানান, গত ১৬ বছর ধরে সাবেক রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমাদের পরিবারের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠা তার কয়েকজন আত্মীয় আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় হামলা-মামলা থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী চরিত্রের ভূমিকা রেখেছে। গত ৫ আগষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর কয়েকদিন না যেতেই খন্দকার মোশতাক পরিবারের প্রতিপক্ষ লোকজন নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপি নেতা কিংবা দলটির নাম ব্যবহার শুরু করেছেন।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page