শান্তনু হাসান খান (বিশেষ প্রতিনিধি)
কুমিল্লার বি-পাড়া ও বুড়িচং উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ভারেল্লা (দঃ) ইউনিয়নের বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহ কামাল চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি পুনরায় সরকারি দল থেকে প্রার্থিতা চাইবেন। তবে সাধারন মানুষদের মনোভাবটা বদলে গেছে। দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন বিগত ৫ বছরে দেখাতে পারেননি।

বিগত দিনে যত কাজ করেছেন তার সবটাই ছিলো সরকারী রুটিন ওয়ার্ক। দৃশ্যমান যত উন্নয়ন- তার পুরোটাই দাবীদার মাননীয় সাংসদ। এবার পছন্দের তালিকায় রেখেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাদা আহমেদ রনি। তার পাশাপাশি আরো মনোনয়ন চাইবেন ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন ভূইয়া।

অনেকগুলো পজেটিভ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বুড়িচং’র ৯টি ইউনিয়নের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিরবে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। তবে এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের জন্য দলের সিনিয়র নেতা ও নীতি নির্ধারকদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন নিরবে। তবে শেষ অব্দি কার ভাগ্যে নৌকার টিকেট জুটবে- সেটা সময়ের ব্যাপার।

উল্লেখ্য যে, কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ভারেল্লা উত্তর দক্ষিণ, ময়নামতি ও মোকাম এ ৪টি হাইওয়ের পাশে বাকীগুলো গোমতীর ওপাড়ে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন ভারেল্লা ইউনিয়ন। এখানকার ৪নং ওয়ার্ডের ভোটার রনি। তিনি এ সংবাদদাতাকে বলেন, আমার অতীতের পলিটিকেল ক্যারিয়ার ও এলাকার সাধারণ মানুষদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করে সিলেকশন কমিটি তথা আমার প্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইনশাল্লাহ আমাকে দল থেকে নমিনেটেড করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর সে বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি নির্বাচনের মাঠকে গুছিয়ে রেখেছি। এখানে যে কোন প্রার্থীকে ডিঙ্গিয়ে আমি ইনশাল্লাহ বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারবো। যদি- প্রতিটি ভোটার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজ নিজ ভোট প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়।

৪১ বছরের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাদা আহমেদ রনি বেড়ে উঠেছেন তার গ্রামের বাড়িতে। পড়াশোনা করেছেন তার স্থানীয় স্কুলে। তার গোটা পরিবার আওয়ামী ঘরনার মানুষ। তার বাবা বঙ্গবন্ধুর আমলে নৌকা নিয়ে রাস্তার ধারে বসে থাকতেন হারিকেন জ্বালিয়ে। সে মানুষটির ছেলে শাহপরান আজাদ। সেও এক সময় আওয়ামী রাজনীতি করতেন। তার হাত ধরে রনি’র রাজনীতিতে আসা। গ্র্যাজুয়েশন করেছেন দেবিদ্বার সুজাত আলী ডিগ্রি কলেজে। ছাত্রাবস্থায় স্বৈরাচারী এরশাদ আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন। কলেজ ছাত্র সংসদে ছাত্রলীগের হয়ে ম্যাগাজিন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার বড় ভাইয়ের মৃত্যুজনিত কারণে উপজেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করেন। সে থেকে রনি ভারেল্লা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি। জনগণের পছন্দের তালিকায় তার নামটি বার বার উঠে এসেছে।

বুড়িচং ও বি-পাড়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন বর্তমান। আর এখানকার সাংসদ ছিলেন প্রয়াত আব্দুল মতিন খসরু এমপি। সাংসদের দিক নির্দেশনা ও পৃষ্টপোষকতায় যথেষ্ঠ উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে তার এলাকায়। এখানকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো উন্নয়নে যথেষ্ট দৃশ্যমান আব্দুল মতিন খসরুর আমল থেকেই। বর্তমান এমপি এডভোকেট আবুল হাশেম সে ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করছেন। এখানকার সবকটি চেয়ারম্যান সরকার দলীয়। এদিকে বর্তমান নব-নির্বাচিত সাংসদ এডভোকেট আবুল হাসেম ও উপজেলার চেয়ারম্যানের দিক নির্দেশনায় আগামী দিনগুলোতে জননেত্রী শেখ হাসিনার আমার গ্রাম-আমার শহর প্রতিপাদ্যকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে কাজ করার অভিমত প্রকাশ করেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী-শাহজাদা আহমেদ রনি।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন পূর্বে পরবর্তী পরিষদের গ্রহণযোগ্যতা থাকে। আর সেই আলোকে কুমিল্লা ১৭ টি উপজেলার ৩১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যেই কুমিল্লার মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন সি.ই.সি। এর মধ্যে লাকসাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ, মনোহরগঞ্জের ১১ টি ইউনিয়ন, লালমাই উপজেলা ১১ টি, দেবিদ্বারে ১৫ টি, বি-পাড়া ও বুড়িচং এ ১৭টি ও মুরাদনগরের ২২ অন্যতম।

এদিকে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি ইতি মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করেছেন। মার্চ থেকে শুরু করে জুন মাসের শেষ নাগাদ ধারাবাহিক ভাবে গত বারের মত ৫ ধাপে নির্বাচন শেষ করতে চান স্থানীয় মাঠ প্রশাসন। দেশে বর্তমানে ৪ হাজার ৫৭১ টি ইউনিয়ন পরিষদ বিদ্যমান। এর মাঝে লক্ষীপুর, ভোলা, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের ২০৬টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং স্থাগিত ১০৭টি ইউনিয়ন পরিূষদের নির্বাচন ইতিমধ্যে শেষ করেছেন। আগামী ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এর মাঝে তিতাস, মেঘনা ও লাকসাম উপজেলা।

এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এবার যারা মনোনয়ন প্রত্যাশি সবাই আওয়ামী দলীয় নেতা কর্মী। দীর্ঘ দিন যাবৎ এ এলাকার রাজনীতিবীদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) সাবেক রেল মন্ত্রী এডভোকেট মুজিবুল হক। তাদের দিক নির্দেশনায় এবারের নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। তবে এখানকার বর্তমান এমপি এডভোকেট আবুল হাশেম কাকে রেখে কাকে দলীয় টিকেট দেবেন- তা নিয়ে ঝল্পনা কল্পনার শেষ নেই। ১৭টি ইউনিয়নের সকল প্রার্থীরাই মনে করেন তারা এমপির পছন্দের মানুষ। এই পছন্দের প্রার্থীতা বাছাই করতে তৃণমূলের নেতা কর্মীদের কাউন্সিল অধিবেশন কিংবা বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে দলীয় ভাবে নমিনেটেড করলে কোন বিদ্রোহী প্রার্থীর আগমন ঘটবে না।

আর তাই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ৪৩ বছরের নাছির উদ্দিন ভূইয়া অভিমত প্রকাশ করে বলেন, আমি তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি। জনগণের জন্য রাজনীতি করি। সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেছি। আমার প্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য আমি আগামীতে নিরলসভাবে কাজ করে যাবো। যদি এবার দল থেকে নমিনেটেড হতে পারি তাহলে ভারেল্লা (দঃ) কে ইউনিয়নে অত্যাধুনিক মডেল ডিজিটালাইজড ইউনিয়ন হিসেবে জনগণকে উপহার দিবো। নাছির উদ্দিন আরো বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাবার তেমন কোন সুযোগ নেই। মাননীয় এমপি ও দক্ষিণ জেলার নীতি নির্ধারকগণ যে সিদ্ধান্ত দেবেন বা যাকে দল থেকে নমিনেটেড করবেন, আমরা তার জন্যই কাজ করে যাবো আগামী দিন গুলোতে এবং নৌকার প্রার্থীকে বিজয় করতে নিশ্চিত করবো। পাশাপশি জননেত্রী শেখ হাসিনার এবারের প্রতিপাদ্য- “আমার গ্রাম-আমার শহর” বাস্তবায়িত করতে আমি ব্যক্তিগতভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

নাছির উদ্দিন নিমসার জুনাব আলী কলেজ থেকে গ্রেজুয়েশন করেন। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তিনি জিএস প্রার্থী ছিলেন। আর ওই সময় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ তে যুবলীগের রাজনীতি শুরু করেন। সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন না থাকায় জনগণ অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কাজেই আমি নির্বাচিত হওয়ার শুরুতে পরিষদ ভবন নির্মানের জন্য আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভূমি প্রদান করবো। যাতে স্থানীয় সরকার ও গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভারেল্লা ইউনিয়ন কমপ্লেক্স অচিরেই নির্মাণ করা হবে।

তিনি বলেন, সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করেছি। আওয়ামী ঘরনার রাজনীতি করে আসছি। দলের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কোন রাজনৈতিক বানিজ্য করি নাই। চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাজি বা বালু মহল দখল করার কোন প্রীভিয়াস রেকর্ড অতীতে ছিল না এখনও নেই। আগামীতেও থাকবে না ইনশাল্লাহ।