ভানী খাল ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প, জলাবদ্ধতা শঙ্কায় দিশেহারা কয়েকশ কৃষক পরিবার

মাসুদ আলম।।
কুমিল্লার দেবিদ্বারে প্রবাহমান ভানী খাল ভরাট করা হচ্ছে। খাল ভরাটে বন্যা ও জলাবদ্ধতাসহ ফসলী জমি বিলীনের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ গ্রামের সাধারণ মানুষ। অপূরুণীয় ক্ষতির শঙ্কায় কয়েকশ কৃষক পরিবার। ভানী খাল ভরাটে পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে ফসলি জমি নষ্ট, জলাবদ্ধতা ও বন্যা সৃষ্টির ফলে ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হবেন কৃষকরা।

তাদের অভিযোগ, ভানী খাল ভরাট করে সেখানে নির্মিত হচ্ছে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প। মাত্র ৪০ জন ভ‚মিহীনদের জন্য খালটি ভরাট করায় দেবিদ্বার উপজেলার ভানী, আছাদ নগর, খিরাইকান্দি, বখরিকান্দি, আন্দিরপাড়, মধ্যনগর, টেবারিয়াসহ প্রায় ২০ গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং কয়েকশ কৃষক পরিবার দুর্ভোগে পড়বেন। দ্রুত ওই খাল উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ভূক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, দেবিদ্বার উপজেলার ১২ নং ভানী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড ভানী গ্রামের মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মহৎ উদ্যোগে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর ও জায়গা দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করে দেবিদ্বারের ভানী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। যা প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধারণ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

দেবিদ্বারের ভানী ইউনিয়নের আরও একাধিক স্থানে সরকারের খাস জমি থাকলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান ও কিছু অসাধু ব্যক্তির যোগসাজসে লাখ লাখ হেক্টর ফসলী জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খাল গোমতী নদীর শাখা ভানী খাল ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে কৃষি জমিতে পানির সেচ এবং বর্ষার পানি নিষ্কাশনসহ পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে ফসলি জমি নষ্ট, জলাবদ্ধতা ও বন্যা সৃষ্টি হবে। এতে করে অপূরুনীয় ক্ষতি সম্মখিন হবে কয়েকশ কৃষক পরিবার।

এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণে ভরাটকৃত ভানী খাল পাড়ের সরকারী খাস জায়গাটি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছিলো ১৩জন দরিদ্র ব্যক্তির মাঝে। যার দাগ নং- ১৮৪৯। বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তির কাগজপত্র বাতিল না করেই ভেকুদ্বারা ৮/৯ ফুট গভীর করে উক্ত প্রকল্পের জন্য মাটি কাটার কাজ করা হয়েছে। বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তিতে মাটি কাটায় বাধা প্রদানে কোন প্রকার আশ্বাস বা সান্ত¡না না দিয়ে উল্টো মারধরসহ হত্যার হুমকি প্রদর্শন করা হয়েছে।

অন্যদিকে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয় মাটির জন্য প্রকল্প থেকে ৮০০ গজ উত্তরে জোরপূর্বক অবৈধভাবে স্থানীয়দের মালিকানাধীন পুকুরে ড্রেজার বসানো হয়েছে। উক্ত পুকুর পাড়ে প্রায় ১শত পরিবারের বসবাস। ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে এই পুকুর থেকে মাটি, বালু উত্তোলনে আশপাশের বাড়ি, ঘর পুকুরে ভেঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এই সব অভিযোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের দুষছেন এলাকাবাসী।

খাল ভরাটে ৭০ বছরের বৃদ্ধ কৃষক আবদুল মজিদ জানান, মাঠে তেমন ব্যক্তিগত ফসলী জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল উৎপাদক করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। পানি সেচ এবং বর্ষা শেষে জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ভরসা এই ভানী খাল। এটি ভরাট করায় পানির চলাচল বন্ধ হয়ে ফসলী জমিতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে বন্ধ হয়ে পড়বে ফসলী জমিতে চাষাবাদ। বিপাকে পড়ে শতশত কৃষক পরিবার।

বন্দোবস্তকৃত সম্পত্তি দখলের বিষয়ে আবুল কালাম নামে বাসিন্দা জানান, ভানী মুজা গ্রামের মৌজার ১৮৪৯ দাগে তারা ১৩ জন দরিদ্র ব্যক্তি ভরাট খাল পাড়ে সরকার থেকে সম্পত্তি বন্দোবস্ত নেয়। বন্দোবস্তের সকল ধরণের কাগজপত্র ভুক্তভোগীদের কাছে আছে। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাদেরকে কোন প্রকার চিঠি বা নোটিশ না দিয়ে ভেকুদ্বারা ৮/৯ ফুট গভীর করে মাটি কাটার কাজ করা হয়। ভুক্তভোগিরা বাধা দিতে গেলে তাদের কোন কাগজপত্র না দেখে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন বন্দোবস্ত নেয়া ব্যক্তির মারধর ও হত্যার হুমকি প্রদান করা হয়।

কামরুল হাসান মামুন নামে আরও এক ভুক্তভোগী বাসিন্দার অভিযোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি ভরাটের জন্য তাদের পুকুরে ড্রেজার মেশিন বাসনো হয়েছে মাটি ও বালু উত্তোলন করার জন্য। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা শুরু করলে পুকুরের চার পাশে থাকা শত বসতির ঘর, বাড়ির ভেঙ্গে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

খাল ভরাটের বিষয়ে ভানী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান ভূইয়া জানান, ভরাটকৃত অংশ সরকারি খাস জমি। খাল পূর্বেই দখল করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে খালের দখলকৃত অংশ উচ্ছেদ করবে প্রশাসন, যাতে পানির চলাচল বন্ধ হয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অন্যদিকে পুকুরে নয় খালে ড্রেজার বসানো হয়েছে। মানুষের যেন ক্ষতি না হয় সেই বাবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে যাতে কোন সাধারণ মানুষ ক্ষতির সম্মখিন না হয়, সেদিকে আমরা সবসময় খেয়াল রাখছি। ভানী খাল ভরাট, বন্দোবস্ত সম্পত্তি দখল ও ড্রেজার বসানোর কোনটাই সত্য নয়। অভিযোগ পেয়ে দেবিদ্বার উপজেলার নির্বাহীর সঙ্গে কথা হয়েছে। যতটুকু জানতে পেরেছি ভানী গ্রামে গৃহহীন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে স্থানীয় রাজনীতির পুরানো দ্বন্দ্ব কাজ করছে। খাল ভরাটে কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি মাথায় থাকবে আমাদের।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page