১০:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুমিল্লার দেবিদ্বারে পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যু কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ঝটিকা মিছিল, আটক ৫ বুড়িচংয়ে পূজা উদযাপনে থাকবে সেনাবাহিনী-পুলিশের নিরাপত্তা বলয় বুড়িচংয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ৫ লক্ষ টাকার ওষুধ বিতরণ ইমোর মাধ্যমে প্রবাসীর সঙ্গে পরিচয়, কুমিল্লার দুলাল হত্যার পেছনের মূল কারণ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে চার গাড়ির সংঘর্ষে ২ জন নিহত, আহত ৩ কুমিল্লার মুরাদনগরে পরিত্যক্ত মুরগির খামার থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার কুমিল্লায় স্কুল শেষে নদীতে গোসল করতে নেমে প্রাণ গেল প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ‎ব্রাহ্মণপাড়ায় মোটরসাইকেল ফেলে পালালেন দুই যুবক, ৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার

ভিসা জালিয়াতি নিয়ে মেলোনির অভিযোগের পর ইতালিতে আটক ৪০

  • তারিখ : ১০:১৯:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪
  • 131

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ইতালির শ্রম ও অভিবাসী নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত জুনের শেষের দিকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তিনি বলেছিলেন, মাফিয়া গ্রুপগুলো মুনাফার জন্য ভিসা ব্যবস্থাকে শোষণ করছে। তার এমন অভিযোগের কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বুধবার দেশটিতে অভিবাসী ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে ৪০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

বুধবার ইতালির পুলিশ ও প্রসিকিউটরদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইতালির পুলিশ ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে ৪৪ জনকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২৪ জনকে গৃহবন্দির পাশাপাশি সাতজনকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের যেমন— অবৈধ অভিবাসন, অর্থপাচার ও মিথ্যা চালান তৈরির লক্ষ্যে অপরাধমূলক সংস্থা গঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া আরও ১০ সন্দেহভাজনকে দেশটিতে এক বছরের জন্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটির নেপলসের কাছের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সালেরনোর প্রসিকিউটরদের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজনরা অভিবাসীদের পক্ষে প্রতারণামূলক ভিসা আবেদন করেছিলেন; যাদের এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য নিয়োগকর্তাদের স্পনসরশিপ প্রয়োজন।

প্রসিকিউটররা বলেছেন, ‌‌সন্দেহভাজন ও গ্রেপ্তারকৃতরা ২০২০ সাল থেকে ‘‘অস্তিত্বহীন বা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’’ প্রায় আড়াই হাজার আবেদন জমা দিয়েছেন। ইতালির বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রত্যেক অভিবাসীর কাছ থেকে ৭ হাজার ইউরো করে নেওয়া হয়েছে।

এই অপরাধী চক্রের কাছ থেকে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে বলে প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন। অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজন সন্দেহভাজন দেশটির ক্যামোরা, নেপলস এবং এর আশপাশের মাফিয়াদের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সালেরনোর প্রধান প্রসিকিউটর জিউসেপ বোরেলি বলেছেন, গত জুনে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি ইতালির মাফিয়া-বিরোধী প্রসিকিউটরের কাছে সম্ভাব্য ভিসা জালিয়াতির বিষয়ে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। তার এই উদ্বেগের পর ভিসা জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত ত্বরান্বিত হয়েছে।

অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি নেতৃত্বাধীন ইতালির ডানপন্থি সরকার অভিবাসীদের আগমন ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে ক্রমবর্ধমান শ্রমিক ঘাটতি মোকাবিলায় বৈধ অভিবাসনের চ্যানেলগুলোও প্রসারিত করেছে সরকার।

গত বছর ইতালির সরকার ২০২৩-২০২৫ সময়ের জন্য অ-ইউরোপীয় নাগরিকদের কাজের ভিসার জন্য কোটা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫২ হাজার নির্ধারণ করে; যা তার আগের তিন বছরের তুলনায় প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি। কোভিড-১৯ মহামারীর আগে ২০১৯ সালে ইতালির সরকার মাত্র ৩০ হাজার ৮৫০টি ভিসা জারি করেছিল।

কিন্তু ইতোমধ্যে ভিসার আবেদনে ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা গেছে। ২০২৪ সালের জন্য ঘোষিত ভিসার মাত্র ১ লাখ ৫১ হাজারটি ভিসা খালি রয়েছে। তবে ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া শুরুর মাত্র ১০ দিনেই প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত মাসে মেলোনি বলেছিলেন, ভিসার তদন্ত করতে গিয়ে কিছু ‘আতঙ্কজনক’ তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, কিছু অঞ্চল থেকে (বিশেষ করে কাম্পানিয়ার দক্ষিণাঞ্চল) সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে আবেদন করা হয়েছে।

মেলোনির দপ্তর থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত এক বক্তৃতায় বলা হয়, ‘‘এত বেশিসংখ্যক আবেদনের বিপরীতে কাজের ভিসা পাওয়া বিদেশিদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক কাজের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। কাম্পানিয়াতে এর হার তিন শতাংশেরও কম।’’ তিনি জানান, এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে, সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র প্রায় ১৫ হাজার ইউরোর বিনিময়ে ইতালিতে প্রবেশের অধিকার নেই এমন অভিবাসীদেরও ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনের ব্যবস্থা করেছে।

সেসময় মেলোনিয়া বাংলাদেশিদের ভিসা জালিয়াতি নিয়েও কথা বলেন। ইতালির এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরে থেকে ইতালিতে আসা কর্মীদের বড় অংশই বাংলাদেশের। তিনি বলেন, কূটনীতিকরা বাংলাদেশে শ্রমভিসা কেনাবেচার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। দেশটিতে এক-একটি ভিসা ১৫ হাজার ইউরো (প্রায় ১৮ লাখ টাকা) করে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন তারা।

সুত্র- ঢাকা পোস্ট।

error: Content is protected !!

ভিসা জালিয়াতি নিয়ে মেলোনির অভিযোগের পর ইতালিতে আটক ৪০

তারিখ : ১০:১৯:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ইতালির শ্রম ও অভিবাসী নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত জুনের শেষের দিকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তিনি বলেছিলেন, মাফিয়া গ্রুপগুলো মুনাফার জন্য ভিসা ব্যবস্থাকে শোষণ করছে। তার এমন অভিযোগের কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বুধবার দেশটিতে অভিবাসী ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে ৪০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

বুধবার ইতালির পুলিশ ও প্রসিকিউটরদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইতালির পুলিশ ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে ৪৪ জনকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ২৪ জনকে গৃহবন্দির পাশাপাশি সাতজনকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের যেমন— অবৈধ অভিবাসন, অর্থপাচার ও মিথ্যা চালান তৈরির লক্ষ্যে অপরাধমূলক সংস্থা গঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া আরও ১০ সন্দেহভাজনকে দেশটিতে এক বছরের জন্য ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটির নেপলসের কাছের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সালেরনোর প্রসিকিউটরদের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজনরা অভিবাসীদের পক্ষে প্রতারণামূলক ভিসা আবেদন করেছিলেন; যাদের এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য নিয়োগকর্তাদের স্পনসরশিপ প্রয়োজন।

প্রসিকিউটররা বলেছেন, ‌‌সন্দেহভাজন ও গ্রেপ্তারকৃতরা ২০২০ সাল থেকে ‘‘অস্তিত্বহীন বা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’’ প্রায় আড়াই হাজার আবেদন জমা দিয়েছেন। ইতালির বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রত্যেক অভিবাসীর কাছ থেকে ৭ হাজার ইউরো করে নেওয়া হয়েছে।

এই অপরাধী চক্রের কাছ থেকে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে বলে প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন। অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজন সন্দেহভাজন দেশটির ক্যামোরা, নেপলস এবং এর আশপাশের মাফিয়াদের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সালেরনোর প্রধান প্রসিকিউটর জিউসেপ বোরেলি বলেছেন, গত জুনে প্রধানমন্ত্রী মেলোনি ইতালির মাফিয়া-বিরোধী প্রসিকিউটরের কাছে সম্ভাব্য ভিসা জালিয়াতির বিষয়ে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। তার এই উদ্বেগের পর ভিসা জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত ত্বরান্বিত হয়েছে।

অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থানের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি নেতৃত্বাধীন ইতালির ডানপন্থি সরকার অভিবাসীদের আগমন ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে ক্রমবর্ধমান শ্রমিক ঘাটতি মোকাবিলায় বৈধ অভিবাসনের চ্যানেলগুলোও প্রসারিত করেছে সরকার।

গত বছর ইতালির সরকার ২০২৩-২০২৫ সময়ের জন্য অ-ইউরোপীয় নাগরিকদের কাজের ভিসার জন্য কোটা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫২ হাজার নির্ধারণ করে; যা তার আগের তিন বছরের তুলনায় প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি। কোভিড-১৯ মহামারীর আগে ২০১৯ সালে ইতালির সরকার মাত্র ৩০ হাজার ৮৫০টি ভিসা জারি করেছিল।

কিন্তু ইতোমধ্যে ভিসার আবেদনে ব্যাপক উল্লম্ফন দেখা গেছে। ২০২৪ সালের জন্য ঘোষিত ভিসার মাত্র ১ লাখ ৫১ হাজারটি ভিসা খালি রয়েছে। তবে ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া শুরুর মাত্র ১০ দিনেই প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত মাসে মেলোনি বলেছিলেন, ভিসার তদন্ত করতে গিয়ে কিছু ‘আতঙ্কজনক’ তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, কিছু অঞ্চল থেকে (বিশেষ করে কাম্পানিয়ার দক্ষিণাঞ্চল) সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে আবেদন করা হয়েছে।

মেলোনির দপ্তর থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত এক বক্তৃতায় বলা হয়, ‘‘এত বেশিসংখ্যক আবেদনের বিপরীতে কাজের ভিসা পাওয়া বিদেশিদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক কাজের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। কাম্পানিয়াতে এর হার তিন শতাংশেরও কম।’’ তিনি জানান, এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে, সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র প্রায় ১৫ হাজার ইউরোর বিনিময়ে ইতালিতে প্রবেশের অধিকার নেই এমন অভিবাসীদেরও ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনের ব্যবস্থা করেছে।

সেসময় মেলোনিয়া বাংলাদেশিদের ভিসা জালিয়াতি নিয়েও কথা বলেন। ইতালির এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরে থেকে ইতালিতে আসা কর্মীদের বড় অংশই বাংলাদেশের। তিনি বলেন, কূটনীতিকরা বাংলাদেশে শ্রমভিসা কেনাবেচার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। দেশটিতে এক-একটি ভিসা ১৫ হাজার ইউরো (প্রায় ১৮ লাখ টাকা) করে বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন তারা।

সুত্র- ঢাকা পোস্ট।