০৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কুমিল্লায় জাতীয়তাবাদী সংগ্রামদলের মানববন্ধন; বিদ্যুৎ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে মাফিয়াদের গুলিতে ৩ বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু কুমিল্লায় মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় ড্রামট্রাক চালক নিহত বুড়িচংয়ে কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন কুমিল্লা নগরীতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কুমিল্লায় মহাসড়কে কেটা ফেলা জায়গায় রোপণ করা হল ৬৪ বকুল গাছ কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক বন্ধু নিহত, পা হারালেন অপর বন্ধু কুমিল্লা বিএনপির মশালমিছিল ভারতের রিপাবলিক বাংলা টিভিতে আওয়ামী লীগের বলে প্রচার আগামী ৪ ডিসেম্বর কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলন কুমিল্লায় ডিবি পরিচয়ে গরুবোঝাই ট্রাকে ডাকাতি, হাত-পা বেঁধে ১৫ গরু লুট

সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে মাফিয়াদের গুলিতে ৩ বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু

  • তারিখ : ০৫:৪৫:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • 138

নিউজ ডেস্ক।।
লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে মারা গেল তিন বাংলাদেশি। অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় গুলি করলে প্রাণ হারায় মাদারীপুরের ইমরান, মুন্না আর বায়জিত। তাদের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে মাতম। দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

স্বজনরা জানায়, একটু ভাল থাকতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের হাজী মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে ইমরান খান। সরাসরি ইতালি পৌঁছে দেবে এমন শর্তে প্রতিবেশী ও মানবপাচার চক্রের সদস্য শিপন খানের সঙ্গে চুক্তি হয় ২২ লাখ টাকায়। কিন্তু ইমরানকে লিবিয়া আটকে নির্যাতন করে পরিবার থেকে আরও ১৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়। শেষমেষ ১ নভেম্বর লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে ভূমধ্যসাগর মাফিয়ার গুলিতে মারা যায় ইমরান। পরে মঙ্গলবার ইমারনের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।

শুধু ইমরান নয়, একইভাবে মাফিয়াদের গুলিতে ওইদিন মারা যায় রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দী গ্রামের ইমারাত তালুকদারের ছেলে মুন্না তালুকদার, একই উপজেলার ঘোষকান্দি গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে বায়েজিত শেখ। তিন যুবকের মৃত্যুর পর লাশ ফেলে দেওয়া হয় সাগরে। এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। ঘটনা জানাজানি হলে ঘরে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা দালালচক্রের পরিবারের লোকজন।

তবে, দালাল শিপনের স্বজনদের দাবি, এই ঘটনায় জড়িত নন শিপন। জোর করে কারই পাসপোর্ট নেয়নি শিপন।

অভিযোগ আছে, কয়েক বছর ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছে শিপন। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে এলাকার যুবকদের খুব সহজে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেয় সে। এর আগেও মৃত্যুর মত এমন ঘটনা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত।

ইমরানের বড়োবোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘শিপন দালাল আমার ভাইকে মেরে ফেলছে। এই দালালের কঠিন বিচার চাই আর সরকারের কাছে দাবি, আমার ভাইয়ের লাশটি যেন একবারের জন্য হলেও দেখতে পারে, সেই পদক্ষেপ নেয়ার।’

ইমরানের আত্মীয় সাজ্জাদ মাতুব্বর বলেন, ‘দালাল শিপনের হাত অনেক লম্বা। এর আগেও একইভাবে কয়েকজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে সে। শিপন খানের কোনো বিচার না হওয়ায় এই অপরাধ থামছেই না। আমরা দালাল শিপন ও তার সহযোগীদের কঠিন বিচার দাবি করছি।’

নিহত মুন্নার খালা খাদিজা আক্তার বলেন, ‘দালাল শিপনকে ধারদেনা করে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছি আমরা, ভাগিনার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি মুন্নার মরদেহ দেহ দেশে ফিরতে আনতে সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছি।’

বায়েজিতের বাবা কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘আমার ছেলের এমন মৃত্যু কীভাবে মেনে নেবো? দালাল প্রথমে স্বীকার যায়নি, পরে লিবিয়া থেকে আমাদের জানানো হয়। এই দালাল এখন লাপাত্তা। এতগুলো টাকা দিয়ে ছেলের এমন মৃত্যুর শোক কীভাবে সইবো?

দালাল শিপনের চাচী সেতারা বেগম বলেন, ‘শিপন অনেক মানুষকেই নিয়েছে কিন্তু গুলিতে কেউ মারা গেছে, বা শিপন কাউকে গুলি করে মেরে ফেলেছে এই ঘটনা আমরা এর আগে কখনই কিছুই জানি না। শিপন লিবিয়ায় অবস্থান করছে। ওর পরিবারের লোকজনও এখন বাড়িতে নাই। ঘরে তালা ঝুলছে। আমরা এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’

এদিকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছে পুলিশ।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দালালদের কোনোপ্রকারেই ছাড় দেওয়া হবে না।

error: Content is protected !!

সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার পথে মাফিয়াদের গুলিতে ৩ বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু

তারিখ : ০৫:৪৫:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

নিউজ ডেস্ক।।
লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে মারা গেল তিন বাংলাদেশি। অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় গুলি করলে প্রাণ হারায় মাদারীপুরের ইমরান, মুন্না আর বায়জিত। তাদের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে মাতম। দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

স্বজনরা জানায়, একটু ভাল থাকতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৮ অক্টোবর বাড়ি ছাড়েন মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের হাজী মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে ইমরান খান। সরাসরি ইতালি পৌঁছে দেবে এমন শর্তে প্রতিবেশী ও মানবপাচার চক্রের সদস্য শিপন খানের সঙ্গে চুক্তি হয় ২২ লাখ টাকায়। কিন্তু ইমরানকে লিবিয়া আটকে নির্যাতন করে পরিবার থেকে আরও ১৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়। শেষমেষ ১ নভেম্বর লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে ভূমধ্যসাগর মাফিয়ার গুলিতে মারা যায় ইমরান। পরে মঙ্গলবার ইমারনের মৃত্যুর খবর পায় পরিবার।

শুধু ইমরান নয়, একইভাবে মাফিয়াদের গুলিতে ওইদিন মারা যায় রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দী গ্রামের ইমারাত তালুকদারের ছেলে মুন্না তালুকদার, একই উপজেলার ঘোষকান্দি গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে বায়েজিত শেখ। তিন যুবকের মৃত্যুর পর লাশ ফেলে দেওয়া হয় সাগরে। এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। ঘটনা জানাজানি হলে ঘরে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা দালালচক্রের পরিবারের লোকজন।

তবে, দালাল শিপনের স্বজনদের দাবি, এই ঘটনায় জড়িত নন শিপন। জোর করে কারই পাসপোর্ট নেয়নি শিপন।

অভিযোগ আছে, কয়েক বছর ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছে শিপন। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে এলাকার যুবকদের খুব সহজে ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেয় সে। এর আগেও মৃত্যুর মত এমন ঘটনা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত।

ইমরানের বড়োবোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘শিপন দালাল আমার ভাইকে মেরে ফেলছে। এই দালালের কঠিন বিচার চাই আর সরকারের কাছে দাবি, আমার ভাইয়ের লাশটি যেন একবারের জন্য হলেও দেখতে পারে, সেই পদক্ষেপ নেয়ার।’

ইমরানের আত্মীয় সাজ্জাদ মাতুব্বর বলেন, ‘দালাল শিপনের হাত অনেক লম্বা। এর আগেও একইভাবে কয়েকজন যুবকের মৃত্যু হয়েছে। টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করে সে। শিপন খানের কোনো বিচার না হওয়ায় এই অপরাধ থামছেই না। আমরা দালাল শিপন ও তার সহযোগীদের কঠিন বিচার দাবি করছি।’

নিহত মুন্নার খালা খাদিজা আক্তার বলেন, ‘দালাল শিপনকে ধারদেনা করে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছি আমরা, ভাগিনার মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি মুন্নার মরদেহ দেহ দেশে ফিরতে আনতে সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছি।’

বায়েজিতের বাবা কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘আমার ছেলের এমন মৃত্যু কীভাবে মেনে নেবো? দালাল প্রথমে স্বীকার যায়নি, পরে লিবিয়া থেকে আমাদের জানানো হয়। এই দালাল এখন লাপাত্তা। এতগুলো টাকা দিয়ে ছেলের এমন মৃত্যুর শোক কীভাবে সইবো?

দালাল শিপনের চাচী সেতারা বেগম বলেন, ‘শিপন অনেক মানুষকেই নিয়েছে কিন্তু গুলিতে কেউ মারা গেছে, বা শিপন কাউকে গুলি করে মেরে ফেলেছে এই ঘটনা আমরা এর আগে কখনই কিছুই জানি না। শিপন লিবিয়ায় অবস্থান করছে। ওর পরিবারের লোকজনও এখন বাড়িতে নাই। ঘরে তালা ঝুলছে। আমরা এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’

এদিকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলছে পুলিশ।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দালালদের কোনোপ্রকারেই ছাড় দেওয়া হবে না।