এইচ.এম.তামীম আহাম্মেদ।।
তীব্রতাপদাহের দিনটি ছিল মঙ্গলবার। মে মাসের ২১ তারিখ। ফরজ শেষে একটু ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। ৮ টা বাজতেই মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। ওপার থেকে সাংবাদিক মারুফ আহমেদ কল্প ভাই বলছে! কিরে এখনও ঘুমাস….? তাড়াতাড়ি রেডি হ। তোর মাদ্রাসার সামনে আমরা। কোন রকম তরিগরি করে উঠে রেডি হয়ে বের হলাম। বলে রাখি আজ দুটি উপজেলা নির্বাচন চলছে একটি বরুড়া উপজেলা অপরটি সদর দক্ষিণ উপজেলা।
মাইটিভির কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আবু মুসা ভাইয়ের গাড়ী যোগে, সাংবাদিক মারুফ আহমেদ কল্প ভাই, মোঃ মিজান ভাই, ড্রাইভার মোঃ মেহেদী হাসান সহ আমরা ৫ জন বরুড়া উপজেলার দিকে রওনা হলাম। যেতে যেতে পথে নানান দিকনির্দেশনা মূলক কথা বললেন অভিভাবকতুল্য সাংবাদিক আবু মুসা ভাই। অন্যদিকে কল্প ভাই সেই লেভেল ঘুম দিয়েছেন – ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে নানান খুনসুটি করছিলাম উনার সাথে ।
বরুড়া উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করতে করতে ঘড়িতে সময় দুপুর ১ টা। জোহরের আজান দিচ্ছে চারিদিকে – যোহরের নামাজ পড়তে আড্ডার ছোটতোলা গাও একটি মসজিদে নামাজ আদায় করলাম আমরা সবাই।
নামাজ শেষে আবু মুসা ভাই বললেন চলো ; মরহুম মোঃ নাজমুল হাসান সবুজের কবরটা জিয়ারত করে আসি৷ সবুজ ভাই সম্পর্কে যদি একটু ছোট্ট করে বলি – সবুজ ভাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি সাংবাদিকতা করতেন আবু মুসা ও কল্প ভাইয়ের সাথে। মিশতে মিশতে এতটা আপন করে নিয়েছিলেন তাকে যা হয়তো তাদের কাছে অভুলনীয় মুহুর্ত।
আজ মূলত এদিকে আসার কারণ ই হচ্ছে ; মরহুম সবুজ ভাইয়ের কবর জিয়ারত করা। মুসা ভাই বলেন; এক বছর হয়ে গেল এখনও বিশ্বাস হয় না সবুজ নাই। মনে হয় সে আছে আমার আশপাশে তাই বার বার তার কবর জিয়ারতে ছুটে আসি। কবর জিয়ারত শেষে মুসা ভাই সবুজ ভাইয়ের কবরের দিকে এক পলক এমনভাবে তাকিয়ে রইলেন যেন দামী কোন সম্পদ হারালেন তিনি।
দূর থেকে এসব দেখছি আর ভাবছি একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে এমনটা করতে পারে, বার বার ছুটে আসতে পারে কবর জিয়ারতে। কবর জিয়ারত যা একজন মৃত মানুষের আসল সম্বল। মৃত ব্যক্তির আমলনামায় তা লেখা হয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায় আপন ভাই ভাইকে চিনে না, ছেলে পিতার সাথে খারাপ আচরণ করে এ যুগে এমন ভাবনাময়ী মানুষ দেখে বিস্মিত না হয়ে পরলাম ।
একজন লেখক বলেছিলেন ; ভালোবাসা এমন এক জিনিস যা সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষের সাথে হয়ে গেলে – সামান্যতম ভালোবাসলে পাহাড় সমপরিমাণ ফেরত পাওয়া যায়। জীবনের প্রথম হয়তো এমন সঠিক মানুষের ভালোবাসা দেখলাম।
বিস্মিত হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আর ভাবলাম দুনিয়াবী ভালোবাসা এমন হওয়াই উচিৎ। পরবর্তীতে সাংবাদিক মারুফ আহমেদ কল্প ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম এমনটা শুধু এখন নয় যখনই মনে পরে তিনার কথা তখনই চলে আসেন কবর জিয়ারতে। এমন ভালোবাসা পাওয়া ভাগ্যের, এমন মানুষের সাথে চলাফেরা করা সৌভাগ্যের।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page