শামীম রায়হান
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় পরকীয়ার জেরে প্রেমিককে ডেকে নিয়ে ৪টুকরো করে হত্যার দুই দিন পর মিলাদ ও খিচুড়ি বিতরণ করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দেন ওই দম্পতি৷
সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী ওই দম্পতি পরিবার হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, হত্যার দুই দিন পর গ্রামে মিলাদ, তালিম ও খিচুড়ি বিতরণ করে স্বাভাবিক আচরণ করেন অভিযুক্ত প্রেমিকা ও তার স্বামী। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে অনুসন্ধানে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- মজিদপুর গ্রামের মজু মিয়ার ছেলে হোসেন ও তার স্ত্রী স্মৃতি আক্তার। নিহত নজরুল উপজেলার শাহবৃদ্ধি গ্রামের মো. হানিফ ভুঁইয়ার ছেলে।
পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, উপজেলার শাহবৃদ্ধি গ্রামের নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সাথে একই গ্রামের স্মৃতি আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যৌবন বয়সে।
তবে পরিবারের আপত্তিতে স্মৃতির বিয়ে হয় মজিদপুর গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার সিএনজি চালক মোহাম্মদ হোসেনের সাথে। অন্যদিকে নজরুলও বিয়ে করেন অন্যত্র। উভয়ের সংসারে দুটি করে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পরও নজরুল ও স্মৃতির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থেকে যায় এবং তা পরকীয়ায় রূপ নেয়।
আসামীদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট (বুধবার) রাতে স্মৃতি আক্তার ফোনে নজরুলকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেন। বাড়ির দরজায় ওঁত পেতে ছিলেন স্বামী মোহাম্মদ হোসেন। নজরুল ঘরে প্রবেশ করতেই পিছন থেকে কুড়াল দিয়ে সজোরে আঘাত করেন হোসেন।
আহত অবস্থায় নজরুল চিৎকার দিলে স্মৃতি তার মুখ চেপে ধরে। পরে কুড়াল দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ঘুম করতে দেহকে চার টুকরো করে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নদীতে ফেলে দেন এই গ্রেপ্তারকৃত দম্পতি।
পুলিশ আরো জানায়, হত্যার পর দেহের দুই হাত, দুই পা ও মাথা দেহ থেকে আলাদা করে চারটি বাজারের ব্যাগে ভরা হয়। প্রতিটি ব্যাগে দুটি করে ইট ও পানির বোতল রেখে বাড়ির উত্তর পাশের তিতাস নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। হত্যার দুই দিন পর স্মৃতি আক্তার গ্রামের মসজিদে মিলাদ ও দোয়া পড়ান। এছাড়া ঘরে অর্ধশতাধিক নারী নিয়ে তালিমের আয়োজন ও খিচুড়ি বিতরণ করেন, যাতে কেউ হত্যার সন্দেহ না করে।
নজরুলের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে স্মৃতি আক্তার ও তার স্বামী মোহাম্মদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে তিতাস থানা পুলিশ।
এবিষয়ে তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ শহীদ উল্যাহ জানায়, ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে তিতাস থানায় মামলা রুজু করেছে। ধৃত আসামীদের গ্রেপ্তার করে আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।