মনোয়ার হোসেন।।
সৌদিতে মৃত্যুবরণকারী প্রবাসী ভাইয়ের লাশের কফিন নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের সাথে মালবাহী লরি গাড়ীর সংঘর্ষে নিহতের আপন ভাইসহ ২ জন নিহত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকেলে মহাসড়কের বাতিসা নামক স্থানে। রাত ৮টায় তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: শাহাব উদ্দিন।
নিহতদের নিকট আত্মীয় তাজুল ইসলাম রাতে জানান, গত বছরের ২৭ জুলাই সৌদিআরবের মদীনা শহরের একটি ফাস্টফুড দোকানের মালিকের নির্মম নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভুজপুরের তালুকদার পাড়ার ফুল মিয়ার ছেলে মো: রুবেল (২৫)। দীর্ঘ দেনদরবার শেষে চলতি বছরের ৫ জুলাই নিহতের লাশ দেশে আসে।
শনিবার ভোরে নিহত রুবেলের বড় ভাই বাবুল মিয়া (৩০) ও তার মামাতো ভাই ওসমান গণি (৩২) রুবেলের লাশ গ্রহণ করার জন্য ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যান। শনিবার সকালে একটি ফ্লাইটে রুবেলের লাশ ঢাকায় এসে পৌঁছায়। সকল প্রক্রিয়া শেষে ভাইয়ের লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন বাবুল মিয়া ও তার মামাতো ভাই ওসমান গণি।
পথিমধ্যে বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের বাতিসা নামক স্থানে লাশ বহনকৃত অ্যাম্বুলেন্সটি (ঢাকা-মেট্রো-শ-১১-৪৮২৪) পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা একটি লরি গাড়ী অ্যাম্বুলেন্সটিকে পেছন থেকে স্বজোরে ধাক্কা মারে। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মামাতো ভাই ওসমান গণি নিহত হন। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স চালক সহ গুরুতর আহত হয় রুবেলের বড় ভাই বাবুল মিয়া।
স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। বাবুল মিয়ার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
রুবেলের চাচাতো ভাই জিসান জানান, রুবেল সৌদিআরবের মদীনা শহরের একটি ফাস্টফুড দোকানে চাকরি করতো। গত বছরের ১৭ জুলাই মালিকের অনুপস্থিতিতে সে একটি জুস খায়। এ অপরাধে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে দোকানের মালিক। নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে সেখান থেকে তার লাশ দেশে আনতে দেওয়া হচ্ছিলো না। পরে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ সহযোগীতায় প্রক্রিয়া শেষে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে দেশে আসে লাশ। লাশ গ্রহণ শেষে শনিবার সকালে তার বড় ভাই বাবুল মিয়া ও মামাতো ভাই ওসমান গণি লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।
এ ঘটনায় দু’টি পরিবারেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারে বইছে শোকের মাতম। স্বজনদের গগণবিদারী চিৎকারে যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো: রবিউল হাসান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বাবুল মিয়াকে আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে শুনেছি পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত অবস্থায় ওসমান গণিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিলো।
মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: শাহাব উদ্দিন বলেন, লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে লরির ধাক্কায় শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে ওসমান গণি নামে একজনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত বাবুল মিয়াকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত অ্যাম্বুলেন্সটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। ওসি আরো বলেন, শুনেছি নিহতরা সৌদিআরবে নিহত ছোট ভাইয়ের লাশ বিমানবন্দর থেকে গ্রহণ করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলো।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page