কুমিল্লায় স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

স্টাফ রিপোর্টার।।
শতবর্ষী মায়ের সেবাযত্ন না করায় স্ত্রী শাহিদা বেগমকে (৬৫) শ্বাসরোধে হত্যা করেন মসজিদের ইমাম আব্দুল মোমিন। আইনের হাত থেকে বাঁচতে তিনি লাশ ফেলে আসেন সেপটিক ট্যাংকে। এরপর তিনি ফজরের নামাজের ইমামতি করতে মসজিদে যান। বাসায় ফিরে সবাইকে ডেকে জানান, স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছেন না।

এদিকে লাশ টেনেহিঁচড়ে সেপটিক ট্যাংকের দিকে নিয়ে যাওয়ার আলামত দেখে স্বজন ও প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তাঁরা সেপটিক ট্যাংকের স্ল্যাব খুলতেই বিবস্ত্র অবস্থায় শাহিদার লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শাহিদা-মোমিন দম্পতির ছেলে মো. মাছুম বিল্লাহ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী করা হয় ৬৮ বছরের আব্দুল মোমিনকে।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সূত্রহীন এই মামলার তদন্তে গিয়ে সাক্ষী মোমিনকে নিয়ে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। এরপর তাঁকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন স্ত্রীকে হত্যা ও নাটকীয় ঘটনার কথা। সর্বশেষ গতকাল বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের এসব বিস্তারিত তথ্য জানান আব্দুল মোমিন।

আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ। এ সময় মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হেশাম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে চৌদ্দগ্রামের ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রামে শাহিদা বেগমকে হত্যা করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বিকেলে কুমিল্লার আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আবদুল মোমিন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, পারিবারিক কলহ ও তাঁর ১৩০ বছর বয়সী মা আতর বানুর সেবাযত্ন করতে অনীহা প্রকাশ করায় কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার পর বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আব্দুল মোমিনকে নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়। এরপর আমরা তাঁকে নজরদারিতে রাখি। একপর্যায়ে গত ২৭ মার্চ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। পরে তাঁকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২১ এপ্রিল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চৌদ্দগ্রাম থানায় আনা হয়। এরপর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মোমিন স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। সর্বশেষ গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানান।’

জবানবন্দিতে মোমিন দাবি করেন, তাঁর মায়ের বয়স ১৩০ বছরের কাছাকাছি। তাঁর মা চলাফেরা করতে পারেন না। তবে সুস্থ আছেন। মায়ের সেবাযত্ন নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় সময় তাঁদের ঝগড়া হতো। মোমিন ও তাঁর ভাই পালা অনুযায়ী এক মাস করে তাঁদের মায়ের দায়িত্ব নিয়ে সেবাযত্ন করতেন।

মোমিনের ছেলে তাঁদের পুরোনো বাড়িতে মা শাহিদা ও পরিবার নিয়ে থাকতেন। তবে মোমিন থাকতেন ঘোলপাশা মসজিদসংলগ্ন তাঁদের নতুন বাড়িতে। এর মধ্যে তাঁর কাছে নালিশ আসে, তাঁর স্ত্রী শাহিদা শাশুড়ির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। এতে মোমিন ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীকে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে তিনি পাশে থাকা বালিশ দিয়ে স্ত্রীর নাক ও মুখে চেপে ধরেন। কিছুক্ষণ পর দেখেন, তাঁর স্ত্রী আর নড়াচড়া করছেন না।

জবানবন্দিতে মোমিন আরও বলেন, এ ঘটনার পর অনেক চিন্তাভাবনা করে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে আসামি তাঁর স্ত্রীর লাশ কাঁধে করে বাড়ির উত্তর পাশে শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন এবং ঢাকনাটি আবার লাগিয়ে দেন। লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর পরনের পোশাক শরীর থেকে পড়ে যায়। তখন মোমিন লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলার পর বাড়ির নলকূপে গোসল করে সেই পোশাক বালতির মধ্যে রেখে ভোররাত ৫টার দিকে মসজিদে চলে যান।

ঘটনার বর্ণনায় মোমিন বলেন, এরপর মসজিদ থেকে এসে তিনি তাঁর ছেলেকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলেন, তোমার মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা তুলে শাহিদার লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ এসে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেশাম উদ্দিন বলেন, ‘আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি একাই পুরো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করা সম্ভব হবে।’

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  

You cannot copy content of this page